মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কী হবে বাশার আল-আসাদের?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

কী হবে বাশার আল-আসাদের?
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। গত এক দশক ধরে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং পদত্যাগের কারণে আন্তর্জাতিক চাপের পরও ক্ষমতায় টিকে রয়েছেন তিনি। এবার সেই দুর্গে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে বিদ্রোহী বাহিনী। এবার সিরায়ায় আসাদ অধ্যায়ের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত বাশার আল আসাদের কী হবে, এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে থাকা হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি সিরিয়ার অজ্ঞাত স্থান থেকে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে একটি সাক্ষাৎকার দেন, যা গতকাল শুক্রবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করাই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।


বিজ্ঞাপন


জোলানি বলেন, ‘যখন লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের প্রসঙ্গটি আসে, আমরা বলব, এই সরকারকে উৎখাতই বিপ্লবের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে সামর্থ্যের মধ্যে থাকা সব উপায় ব্যবহার করার অধিকার আমাদের রয়েছে।’

এইচটিএস নেতা আরও বলেন, ‘এই সরকারের পতনের উপাদান তার মধ্যেই সব সময় নিহিত ছিল। ইরানিরা এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল, সরকার কিছু সময় পেয়েছিল। পরে রুশরা সরকারের পতন ঠেকানোর চেষ্টা করে।’

asad2
ছবি: রয়টার্স।

আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠন থেকে বের হয়ে এইচটিএস গঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে অপসারণের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এইচটিএসের রয়েছে, সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে বিষয়ে কোনো সংশয় রাখেননি জোলানি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও ‘জনগণের পছন্দের পর্ষদের’ সমন্বয়ে একটি সরকার গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন


গত ২৭ নভেম্বর এইচটিএসের নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সরকারি বাহিনীর ওপর আকস্মিক হামলা শুরু করে। ঘটনার আকস্মিকতায় দৃশ্যত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সরকারি বাহিনী। বিদ্রোহীরা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নেয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার মধ্যাঞ্চলীয় হামা শহর থেকে পিছু হটে সরকারি বাহিনী।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের (এসওএইচআর) তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ শাসিত সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর বেশিরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী। শহরটি থেকে ইতোমধ্যে পিছু হটেছে সরকারি বাহিনী।

সিরিয়ার সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, বিদ্রোহীরা শহরের বেশিরভাগ এলাকায় ঢুকে গেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটি সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের বড় পদক্ষেপ। এসওএইচআর সিরিয়ার কিছু নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করে। তারা জানিয়েছে, সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমানগুলো শুক্রবার ওই এলাকায় অন্তত ২৩ বার বিমান হামলা চালিয়েছে।

asad3
ছবি: রয়টার্স।

এসওএইচআর বলছে, গত বুধবার থেকে শুরু সংঘাতে তিন শতাধিক নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন বেসামরিক রয়েছে। রাশিয়া দাবি করেছে, রুশ বিমানবাহিনীর সহায়তায় সিরিয়ান বাহিনী ৩০০ বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে। ২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের আলেপ্পো থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনী। এরপর থেকে এটিই বিদ্রোহীদের বড় লড়াই।

এসওএইচআর জানিয়েছে, হোমস শহরটি রাজধানী দামেস্ক ও ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় এলাকার মাঝামাঝি কৌশলগত জায়গায় অবস্থিত। বিদ্রোহীরা এই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলে উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি এবার উপকূলীয় এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।

জিহাদিসহ যে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আসাদ সরকারের বিরোধিতা করেছিল তারা দেশটির বিভিন্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। সিরিয়ার সরকার পরবর্তী সময়ে রাশিয়া ও অন্য সহযোগীদের সহায়তায় দেশটির অধিকাংশ এলাকা পুনর্দখল করে নেয়। তবে দেশটির ইদলিব এখনো বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি। এর বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এইচটিএস। তবে তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহীদের একাংশ ও তুর্কি বাহিনীও সেখানে অবস্থান করছে।

অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক ভিডিও বার্তায় এইচটিএস নেতা জোলানি সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে ইরাককে দূরে রাখতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

asad1
ছবি: রয়টার্স।

তুরস্কের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আজ শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

এর আগে, গত সোমবার সিরিয়াকে সাহায্য করতে ইরাক থেকে সেনা পাঠানোর অনুরোধ জানায় ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী কাতেব হিজবুল্লাহ। কাতেব ইরান-সমর্থিত সাবেক আধা সামরিক বাহিনীগুলোর জোট হাশেদ আল-শাবির অংশ। বর্তমানে গোষ্ঠীটি ইরাকের নিয়মিত সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত।

এসওএইচআর জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ইরান-সমর্থিত প্রায় ২০০ ইরাকি যোদ্ধা সিরিয়ার সরকারকে সাহায্য করতে দেশটিতে ঢুকে পড়েছেন।

ইরান সমর্থিত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ২০১২ সাল থেকেই আসাদের সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে রাশিয়া সিরিয়ার সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে সরাসরি সামরিক সহায়তা প্রদান শুরু করে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ায় রুশ বিমানবাহিনী এবং স্থলসেনা মোতায়েন করেন। এটা আসাদের শাসনকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশকের এই গৃহযুদ্ধে প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সিরিয়ার সংঘাত এখনো মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মানবিক সংকট হিসেবে রয়ে গেছে।

এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর