বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম গত কিছু দিন ধরেই উঠানামা করছে। চলতি বছরের শুরুতে দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল, তবে কিছুদিন পরই তা পতন ঘটেছিল। তবে, সম্প্রতি স্বর্ণের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নানা অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে স্বর্ণের দাম এই উত্থান দেখাচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুতে, স্বর্ণের দাম একে একে বাড়তে থাকে এবং প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ২ হাজার ৮০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। কিছু বাজার বিশ্লেষক তখন বলেছিলেন, এই প্রবণতা যদি চলতে থাকে, তবে আগামী বছরের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে নভেম্বর মাসের শুরুতে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল এবং ডলারের মুদ্রার বিনিময় হারের কারণে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখন আবার স্বর্ণের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে, প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫৫ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
তাহলে, কেন স্বর্ণের দাম আবারও বাড়তে শুরু করল? সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে, বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নিচ্ছেন, আর এ কারণেই দাম বাড়ছে।
এই উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে যখন ২০ নভেম্বর ইউক্রেন প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে মার্কিন তৈরি স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই ঘটনা নতুন করে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করছে। শিকাগো ভিত্তিক মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান "জ্যানার মেটালস"—এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র ধাতু কৌশলবিদ পিটার গ্রান্ট বলেন, ‘‘স্বর্ণ এখন নিরাপদ বিনিয়োগের আকর্ষণ তৈরি করছে, তাই দাম আবারও বেড়েছে।’’
এছাড়া, আইজি মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট ইয়্যাপ জুন রং বলেন, ডিসেম্বরে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা হয়তো কম দমনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অর্থাৎ, সুদের হার বাড়ানোর পরিমাণ হয়তো কম হতে পারে, যা স্বর্ণের বাজারে কিছু অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ানোর কারণে ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এদিন দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বাজুস জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, বাজুসের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লে বা কমলে তা দেশের বাজারে প্রভাব ফেলবে। যদি দাম বাড়ে, তবে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হতে পারে।’’
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পর, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি দাম ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা, এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দাম কার্যকর হয়েছে ২০ নভেম্বর থেকে।
এটি উল্লেখযোগ্য যে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশে স্বর্ণের দাম ৫০ বার সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ বার দাম বেড়েছে এবং ২১ বার দাম কমেছে। গত ২০২৩ সালেও স্বর্ণের দাম ২৯ বার সমন্বয় করা হয়েছিল।
সব মিলিয়ে, স্বর্ণের দাম এখন বিশ্ববাজার এবং দেশের বাজারে উত্থান-পতন দেখাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের ভবিষ্যত সিদ্ধান্তের প্রভাব বাজারে থাকবে এবং এর ফলস্বরূপ স্বর্ণের দাম আরও ওঠানামা করতে পারে। সূত্র: রয়টার্স
এইউ