গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দেড় মাস কেটে গেছে। এই সময়ে পশ্চিমা বিশ্বসহ বেশির ভাগ দেশ ড. ইউনূসের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করলেও স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরতে পারছে না প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশ নিয়ে একটি অস্বস্তি ও শঙ্কা কাজ করছে দিল্লির। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় তাদের ভাষায় ‘ইসলামপন্থী ও উগ্র ডানপন্থী শক্তি’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় ভুগছে প্রতিবেশী দেশটি।
জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে এখনো ভারত স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে বৈঠক না হলেও কূটনীতিক পর্যায়ে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভারতের শঙ্কা ও অস্বস্তির জায়গাটি সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। সংবাদমাধ্যমটির অনলাইন সংস্করণে ‘ইউনূসের মনোভাব নিয়ে আশঙ্কায় নয়া দিল্লি’ শিরোনামের একটি সংবাদে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জানানো হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে ইউনূস সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ভালোভাবে দেখছে না দিল্লি।
আনন্দবাজার লিখেছে- ‘চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ওই সময় থাকবেন নিউ ইয়র্কেই। উভয় রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত কম। কিন্তু হতে পারে কূটনৈতিক পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। তার আগে মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি নিয়ে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করল সাউথ ব্লক সূত্র।’
বিজ্ঞাপন
আনন্দবাজার লিখেছে, ‘সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, ইউনূসকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে মৌলবাদী ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে তাঁর সংযোগ নিয়ে। চরমপন্থী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সঙ্গে ইউনূস সাক্ষাত করেছিলেন সম্প্রতি, যা উদ্বেগ তৈরি করেছে। জল্পনা শুরু হয়েছে, বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইউনূস মৌলবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছেন কি না তা নিয়ে। নয়াদিল্লির অনুমান, ইউনূস হয়তো রাজনৈতিক পরিসরে হেফাজতের প্রভাবকে বৈধতা দিচ্ছেন। এর ফলে মৌলবাদী উপাদানগুলি আরও সাহসী হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের আরও বৃহত্তর কণ্ঠস্বর হাসিল করতে পারে।’
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, ‘কূটনৈতিক শিবিরের মতে, জামায়াতে ও হেফাজতে ইসলাম যদি রাজনৈতিক সুবিধা পায়, তা হলে বাংলাদেশে শিক্ষা, লিঙ্গ নীতি এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলনে পরিবর্তন আসতে পারে, যা সামাজিক সংঘাত বাড়িয়ে তুলবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ধর্মনিরপেক্ষ কর্মীরা আরও বিপন্ন বোধ করবে।’
আনন্দবাজার লিখেছে, ‘আজ একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অবশ্য বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বলেছেন, সেটি বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দু’দেশের মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে।’
জেবি