রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইন্ডিয়া জোটই সরকার গঠন করবে, সময়ের অপেক্ষা: মমতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ইন্ডিয়া জোটই সরকার গঠন করবে, সময়ের অপেক্ষা: মমতা

বিরোধী জোট ইন্ডিয়াই কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার খুব বেশি দিন টিকবে না বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়াই আগামী দিনে সরকার গড়বে। সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখন আমরা শুধু পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলছি।’

শনিবার (৮ জুন) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।


বিজ্ঞাপন


মমতা জানান, আপাতত তার এবং ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের রণনীতি ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’। অর্থাৎ, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা এবং সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা। পাঁচ বছর মোদি এই সরকার টেকাতে পারবেন না বলেই মনে করেন তিনি।

মমতা বলেন, ‘এটা আপনারা কেউ ভাববেন না যে, ইন্ডিয়া এখন কিছু করেনি বলে আগামী দিনে করবে না। আমরা অপেক্ষা করছি। কারণ, মোদিকে কেউ চায় না। এই দেশ পরিবর্তন চায়।’

লোকসভা ভোটের ফলাফল দেখে মোদির প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল বলেও জানান মমতা। তার কথায়, ‘এত বড় হারের পর ওর উচিত ছিল পদত্যাগ করা। আমি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেতাম, পদে থাকতাম না।’


বিজ্ঞাপন


বিরোধ জোট ইন্ডিয়া এবং এনডিএর শরিক নেতাদের মধ্যে তুলনাও টেনেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘এনডিএতে যারা আছেন, তাদের চাহিদা অনেক বেশি। আমরা কিছু চাই না। আমরা শুধু মানুষের ভাল চাই।’

উল্লেখ্য, লোকসভায় ২৯২ আসনে জয় পেয়েছে এনডিএ। ইন্ডিয়া পেয়েছে ২৩৩ আসন। এনডিএ সরকার গড়লেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। বারাণসী কেন্দ্র থেকে নরেন্দ্র মোদির জয়ের ব্যবধানও এখন পর্যন্ত তার রাজনৈতিক জীবনে সর্বনিম্ন। এই পরিস্থিতিতে শরিক দলগুলির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিজেপি। তাদের সমর্থনেই রোববার (৯ জুন) প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদি তৃতীয় বারের জন্য শপথ নিতে চলেছেন।

মমতা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি ডাক পাননি। পেলেও যেতেন না। নতুন সরকারকে শুভেচ্ছাও জানাবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে শুভেচ্ছা জানাবেন দেশের মানুষকে।

শনিবার (৮ জুন) দলীয় বৈঠকের পরে কালীঘাটের বাড়ি সংলগ্ন দফতরের সামনে সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেন মমতা। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ২৯ আসনে জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু মমতা দাবি করেছেন, ২৯ নয়, আসলে তাদের ৩৫টি আসন পাওয়ার কথা ছিল। নির্বাচন কমিশন কারচুপি করে বাকি ছয়টি আসনে তৃণমূলকে হারিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

লোডশেডিং করিয়ে তাদের প্রার্থীদের হারানো হয়েছে অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘আমরা ২৯ নয়, ৩৫টি আসন জিতেছি। কমিশন জোর করে, লোডশেডিং করে আমাদের হারিয়ে দিয়েছে। কমিশনের সাহায্যে আমাদের এক জন মহিলা প্রার্থীকেও হারানো হয়েছে।’

কারচুপির প্রসঙ্গে আলাদা করে পূর্ব মেদিনীপুরের কথা বলেছেন মমতা। স্পষ্ট করে না বললেও তমলুক এবং কাঁথি কেন্দ্রের কথাই যে তিনি বলতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট। অনেকের মতে, মহিলা প্রার্থী বলতে তিনি বিষ্ণুপুরের সুজাতা মণ্ডলের কথা বলেছেন। তার হারের ব্যবধান বেশ কম। সূত্রের খবর, দলের বৈঠকে সুজাতার লড়াইয়ের প্রশংসাও করেছেন মমতা।

বুথফেরত জরিপের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বুথফেরত সমীক্ষার মাধ্যমে শেয়ার বাজারে দুর্নীতি করা হয়েছে। এটা খুব বড় দুর্নীতি। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আমরা আইনের পথে হাঁটব কি—না, সেই ভাবনাচিন্তা করছি। আমরা এর তদন্ত চাই। ভুল বুথফেরত সমীক্ষা দেখানো হয়েছে।’

উল্লেখ্য, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এর আগে এ বিষয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি তুলেছেন। যদিও বিজেপির দাবি, অষ্টাদশ লোকসভা এখনও গঠন করা হয়নি। তার আগে এই তদন্ত সম্ভব নয়।

লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূলের এমপিরা যে সংসদে শুধু উপস্থিত হয়েই দায়িত্ব শেষ করবেন না, প্রতিবাদেও সরব হবেন, তা স্পষ্ট করেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাকে কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে বঞ্চনা করেছে, তার বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদরা সংসদে সরব হবেন। পাশাপাশি এনআরসি, সিএএ বাতিলের দাবিতেও সংসদে শাসকদলকে চেপে ধরবেন তারা। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কোনো ভাবেই আনতে দেবে না তৃণমূল। তিনি বলেন, রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে তৃণমূলের মোট ৪২ জন সাংসদ রয়েছেন। তারা এই ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে সরব হবেন।

মমতা জানান, হরিয়ানায় আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে যাবে তৃণমূলের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। তারা সকলেই সাংসদ। দলে থাকবেন ডেরেক, নাদিমুল, সাগরিকা এবং দোলা সেন।

শুক্রবার শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন অভিষেক। মমতাকে প্রশ্ন করা হয়, এমন সাক্ষাতের নেপথ্যে কি তার কোনও রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলতে চাই। সেই জন্য ইন্ডিয়া শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও জরুরি। তাই অভিষেক মুম্বই গিয়েছিলেন। সেই পর্যায়েই আমাদের প্রতিনিধি দল হরিয়ানায় গিয়ে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানাবে।’

তৃণমূলে সংসদীয় পদে কে কোথায় থাকবেন, এদিন তা ঘোষণা করেছেন মমতা। সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন করা হয়েছে দলনেত্রী মমতাকে। লোকসভার দলনেতা করা হয়েছে উত্তর কলকাতার প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ২০০৯ সাল থেকেই তিনি ওই দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি, লোকসভার উপদলনেতা হয়েছেন বারাসতের চার বারের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। প্রত্যাশিত ভাবেই লোকসভার মুখ্যসচেতক করা হয়েছে শ্রীরামপুরের চার বারের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনিও ২০০৯ সাল থেকেই এই দায়িত্বে রয়েছেন।

অন্যদিকে, রাজ্যসভার দলনেতার পদে রেখে দেওয়া হয়েছে ডেরেক ও’ব্রায়েনকে। রাজ্যসভার উপদলনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাগরিকা ঘোষকে (প্রাক্তন সাংবাদিক সাগরিকা সম্প্রতি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন)। মুখ্য সচেতক হয়েছেন নাদিমুল হক। দীর্ঘদিন এই রাজ্যসভায় তৃণমূলের হয়ে এই দায়িত্ব সামলেছেন সুখেন্দুশেখর রায়।

এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর