ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা চলছে। নির্বাচনের ফলাফল যত প্রকাশ হচ্ছে ততই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আরও প্রকাশ্যে আসছে।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২৩২ আসনে জিতেছে বিজেপি। আর ৯০ আসনে জিতেছে কংগ্রেস, ৩৭ আসনে জিতেছে সমাজবাদী পার্টি (এসপি), ২৯ আসনে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস, ১২ আসনে জিতেছে জনতা দল (সংযুক্ত), ৩ আসনে জিতেছে আম আদমী পার্টি এবং বাকি দলগুলো ১০৬ আসনে জয় পেয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে এটা নিশ্চিত যে, বিজেপি এককভাবে এবার ক্ষমতায় আসতে পারছে না। লোকসভার মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। বিজেপি যেসব আসনে এগিয়ে রয়েছে, সেগুলোতে জয় ধরলেও আসনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৪০টি। অন্যদিকে, একই হিসেবে কংগ্রেসের আসনসংখ্যা দাঁড়ায় ৯৯। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে চলা বিজেপির একার পক্ষে সরকার গঠন অসম্ভব হওয়ায় এই সুযোগ নিতে চাইছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়া।
ইন্ডিয়া জোটের সরকার গঠনের প্রচেষ্টাকে অস্বীকার না করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, তারা জোটের বৈঠকে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।
কংগ্রেসের একসময়ের মিত্র নাইডু ও নীতীশের দল এবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট থেকে লড়ছে। তবে তাদের দুইজনের দল এমন পরিমাণ আসন পেতে যাচ্ছেন যে, যারাই সরকার গঠন করতে চাইবেন তাদেরকেই প্রয়োজন হবে নাইডু আর নীতীশের।
মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লিতে ২৪ নম্বর আকবর রোডে এআইসিসি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দুজনেই বরং ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেই তারা এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
বিজ্ঞাপন
সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এনডিএ (বর্তমান আকারে) যদিও গরিষ্ঠতা পেয়ে গেছে, সেই জোটের একাধিক শরিক কিন্তু আগে কংগ্রেসেরও রাজনৈতিক সঙ্গী ছিল। সেই প্রেক্ষিতে কংগ্রেস কি বিরোধী আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে না কি তারাও সরকার গড়ার জন্য চেষ্টা চালাবে?
জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমরা আমাদের ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে শিগগির আলোচনায় বসব। আমার ধারণা সেই বৈঠক আগামীকাল (বুধবার) অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রশ্নগুলো নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে এবং এর উত্তর খোঁজা হবে। আমরা আমাদের জোট শরিকদের মর্যাদা দেই এবং তাদের মতামত না নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
আরও নির্দিষ্ট উত্তরের জন্য চাপাচাপি করা হলে রাহুল গান্ধী শুধু বলেন, ইন্ডিয়া জোট এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তারাও সেই অনুযায়ীই চলবেন।
তবে একই প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের উত্তর ছিল আরও ইঙ্গিতপূর্ণ। কারণ তার কথায় আভাস ছিল, কংগ্রেস এখন ‘নতুন রাজনৈতিক সঙ্গী’ খোঁজার চেষ্টা করবে।
হিন্দিতে প্রশ্নের জবাব দিয়ে খাড়গে বলেন, ‘যতক্ষণ না আমরা জোটের শরিকদের সঙ্গে এবং নতুন শরিকদের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি... যে কীভাবে আমরা একযোগে কাজ করতে পারি ও গরিষ্ঠতা পেতে পারি, ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।’
খাড়গে বলেন, আমি যদি এখনই সব কৌশল ফাঁস করে দেই, তাহলে প্রধানমন্ত্রী মোদি তো সতর্ক হয়ে যাবেন।’
ফলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কথাবার্তা থেকে আভাস মিলেছে, তারা আপাতত সব রাস্তাই খোলা রাখতে চাইছেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সরকার গড়ার দাবি জানানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছেন না।
এমআর

