মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

প্রেমিকা জোটেনি, শপিংমলে একের পর এক নারীকে কোপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রেমিকা জোটেনি, শপিংমলে একের পর এক নারীকে কোপ
ছবি: সংগৃহীত

শনিবার দুপুরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির শপিংমলে ছুরি হাতে একের পর এক কুপিয়ে মারার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত দশজন। আততায়ী একজনই। পরে তদন্তে জানা যায়, সন্ত্রাসবাদী হামলা নয়, মানসিক বিকার থেকেই ওই ঘটনা ঘটিয়েছে বছর চল্লিশের জোয়েল কাওচি। 

শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে তিনটের সময় সিডনির পুবদিকে বোনডি সমুদ্রসৈকতের মাইলখানেকের মধ্যে থাকা ওয়েস্টফিল্ড বোনডি জংশন শপিংমলে আক্রমণ শুরু করে আততায়ী। খবর দ্য ওয়ালের


বিজ্ঞাপন


নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতে পুলিশ হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে আতঙ্কিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাতে শুরু করেন, একজন আততায়ী ছুরি হাতে মলের বিভিন্ন ফ্লোরে লোকজনকে কোপাতে শুরু করেছেন। পুলিশ কন্ট্রোল থেকে প্রথমেই ওখানে টহলদারিতে থাকা ইনস্পেক্টর অ্যামি স্কটকে ঘটনাস্থলে যেতে বলা হয়। বিশাল পুলিশবাহিনী আসে তারপর। অথচ তার মধ্যেই ছুরির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কমপক্ষে পনেরো জন। তার মধ্যে পাঁচজনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।

এরপর জোয়েলকে ধরে ফেলেন অ্যামি। প্রথমে বারবার সতর্ক করা হয়। বলা হয়, অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করতে। ৫৭ বছরের প্রত্যক্ষদর্শী মাইকেল ডাংক্লি নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও জোয়েল ছুরি হাতে ধরে ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, ও বদ্ধপরিকর! আত্মসমর্পণ করবে না! শেষে গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ।' 

প্রত্যক্ষদর্শীদের তোলা ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, গুলি চালানোর পরেও আঘাত কতটা বুঝতে না পেরে জোয়েলকে 'সিপিআর' দেওয়ার চেষ্টা করেন ওই কর্মকর্তারা। ততক্ষণে এসে পড়েন পুলিশের কর্মকর্তারা। কিন্তু জোয়েলকে বাঁচানো যায়নি।

তদন্তে নেমে পুলিশ লক্ষ্য করে, মৃত ও আহতদের বেশিরভাগই নারী। ছয়জন মৃতের মধ্যে পাঁচজনই নারী। আহত ১১ জনের মধ্যে ৮ জন নারী। এতেই সন্দেহ দৃঢ় হয় গোয়েন্দাদের। যোগাযোগ করা হয় জোয়েলের পরিবারের সঙ্গে। 


বিজ্ঞাপন


অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও বিবিসি সূত্রে খবর, টিভিতে ঘটনা দেখে জোয়েলের পরিবারই যোগাযোগ করে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে। আর এতেই স্পষ্ট হয় গোটা ঘটনা। 

জোয়েলের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অসুস্থতায় ভুগত জোয়েল। কিশোর বয়স থেকেই মনরোগ তার সঙ্গী। সব সময় সে পরিবারের সঙ্গে থাকতও না। কুইন্সল্যান্ড পুলিশের তরফে রেকর্ড ঘেঁটে দেখা হয়, নানা নিরীহ কারণে আগেও একাধিকবার পুলিশি নজরদারিতে এসেছিল সে।

সহকারী কমিশনার রজার লো যেমন বলছেন, 'গত বছরের ডিসেম্বরেও পুলিশের নজরে এসেছিল জোয়েল। আমাদের সন্দেহ, তখন থেকেই ও রাস্তায় শুয়ে থাকত বা গাড়িতে ঘুমোতো। কখনও ছুরি বা অস্ত্র রয়েছে বলে তো তখন আমাদের নজরে আসেনি। তবে সবসময় বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখত না।' 

জোয়েলের পরিবারের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'জোয়েলের কীর্তি ভয়ানক! ভয়াবহ! আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না, কী হয়ে গেল! আমরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি। যে পুলিশ কর্মকর্তাদের গুলিতে ও মারা গেল, তার বিরুদ্ধেও আমাদের কিছু বলার নেই। তিনি তার কর্তব্য করেছেন। না হলে হয়ত জোয়েল আরও ক্ষতি করত। আমরা প্রার্থনা করি, ওই কর্মকর্তা এই ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠবেন।' 

সংবাদসংস্থা সিএনএনের কাছে জোয়েলের বাবা অ্যান্ড্রু কাওচি রীতিমত ভেঙে পড়েন। কাতরভাবে বলতে থাকেন, 'আমি দুঃখিত। আমি মর্মাহত। আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছি! এটা এত ভয়ানক একটা ঘটনা! আমি কী বলব বুঝে উঠতে পারছি না। দেখুন, আপনাদের কাছে ও একটা দানব। এতজনকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু আমার কাছে তো ও একজন অসুস্থ ছেলে!'

একটি অস্ট্রেলীয় দৈনিককে জোয়েলের বাবা এও বলেছেন, 'ও খুব অসুস্থ ছিল। মানসিক অবসাদে ভুগত। ওর দীর্ঘ মানসিক রোগের ইতিহাস আছে। প্রেমিকা ছিল না বলে প্রচণ্ড রকমের হতাশায় ভুগত জোয়েল।'

নিউসাউথ ওয়েলস প্রদেশের পুলিশ কমিশনার কারেন ওয়েব জানান, আততায়ীর মূল লক্ষ্য ছিল নারীরা। তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে আর কোনও ধোঁয়াশা নেই। আমরা খতিয়ে দেখেছি এবং আমাদের মনে হয়েছে, আততায়ী সুনির্দিষ্টভাবে নারীদের বেছে বেছে আক্রমণ করেছিল। অপরাধের মোটিভ এটাই, পুরুষদের প্রতি তার সেই আক্রোশ ছিল না।' 

যে একজন পুরুষ নিহত হয়েছেন, তিনি এক পাকিস্তানি নিরাপত্তারক্ষী, যিনি জোয়েলকে আটকাতে গিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেছেন, এই লিঙ্গভিত্তিক আক্রমণ তার কাছে অত্যন্ত চিন্তার। কীভাবে এগুলো বন্ধ করা যায়, তাঁরা ভেবে দেখবেন। 

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর