বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

গাজায় দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রামক ব্যাধি, অপুষ্টিতে বাড়ছে শিশুমৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৩ এএম

শেয়ার করুন:

গাজায় দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রামক ব্যাধি, অপুষ্টিতে বাড়ছে শিশুমৃত্যু

অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার উত্তরে শিশুমৃত্যুর তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। খাবার, সুপেয় পানি ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সংকটে বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে অঞ্চলটিতে। দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে একের পর এক মারা যাচ্ছে শিশু। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফসহ শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংস্থা। 

এক সতর্কবার্তায় ইউনিসেফ জানায়, গাজায় ত্রাণ সহায়তা সচল রাখতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা না হলে আরও অনেক শিশু পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে মারা যেতে পারে।


বিজ্ঞাপন


কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফাহ শহরের আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যুর পর অপুষ্টি এবং অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবার অভাবে মারা যাওয়া ফিলিস্তিনি শিশুর সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

উত্তর গাজা উপত্যকার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত রোববার জানায়, অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় ভোগা ছয় শিশু নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উত্তর গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছেন। প্রয়োজনীয় পানি ও খাদ্যের অভাবে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে তাদের। তবে এতে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। ফলে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে এসব অঞ্চলের শিশুরা। 

এ ছাড়া গাজায় চিকিৎসার অভাবে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১৫০ দিনের মধ্যে ১৫৫টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া ৩২টি হাসপাতাল ও ৫৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিষেবা আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অন্তত ১২৬টি অ্যাম্বুলেন্সকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ইসরায়েল।


বিজ্ঞাপন


স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এ সময়ে গাজায় ৩৬৪ স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালকসহ ২৬৯ জনকে গ্রেফতার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। 

ইউনিসেফ জানায়, গাজায় ত্রাণ সহায়তা সচল রাখতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা না হলে আরও অনেক শিশু পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে মারা যেতে পারে। সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক অ্যাডেল খোদর বলেন, ‘আমরা শিশু মৃত্যুর যে আশঙ্কা করছিলাম, এখন তা-ই ঘটছে গাজায়। যুদ্ধের অবসান না হলে এবং মানবিক ত্রাণের বাধা অবিলম্বে দূর না করা হলে শিশুদের মৃত্যু দ্রুতই আরও বাড়বে।’ 

gaza

এমন আশঙ্কার মধ্যে নতুন করে গাজায় সংক্রামক রোগ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার এক বিবৃতিতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা উপত্যকায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ নানা ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এসব রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো কোনো সক্ষমতা এখন নেই। ফলে এসব সংক্রামক রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে। রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে একটি বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আচমকা হামলা চালায় হামাস ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। এরপর থেকেই প্রতিশোধের নামে গাজায় বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দখলদার দেশটির হামলায় ইতোমধ্যে ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭১ হাজারের বেশি মানুষ। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে। গত জানুয়ারিতে এক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেলআবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ওই আদালত।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর