শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যেসব অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যেসব অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার অভিযোগ এনে গত ২৯ ডিসেম্বর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দ্য হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে দু দিনের শুনানি।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে তাদের ২৩ হাজার নাগরিককে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ১০ হাজার শিশু।


বিজ্ঞাপন


এই ঘটনাকে দক্ষিণ আফ্রিকা গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে, কারণ তাদের ভাষ্য, ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা বা শারীরিক-মানসিক ক্ষতিসাধন, আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, নতুন মানবশিশুর জন্মে বাধাদান ও উদ্বাস্তুতে পরিণত করার মতো ব্যাপারগুলোকে গণহত্যা চালানোর উপায় বলে মনে করা হয়।

গাজায় এসব ব্যাপারই ঘটিয়ে চলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যেন যত দ্রুত সম্ভব ‘প্রোভিশনাল মেজারস’ ব্যবহার করে আদালত ইসরায়েলকে থামায়। মূলত ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এই জরুরি আদেশ দিয়ে আগেভাগেই ধ্বংসলীলা থামিয়ে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার জন্য জেনোসাইড কনভেনশনের লঙ্ঘনকারী ইসরায়েল যেন দায়মুক্তি না পায়, সেটিও দক্ষিণ আফ্রিকার চাওয়া।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, গণহত্যার জন্য আমরা দায়ী নই, দায়ী হামাস। তারা যদি পারত আমাদের (ইসরায়েল) সবাইকে হত্যা করত। বরং, আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) যথাসম্ভব নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করছে।


বিজ্ঞাপন


প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারযোগও এই মামলাকে ‘অবান্তর’ ও এই অভিযোগকে ‘ব্লাড লাইবেল’ এর তুল্য মনে করছেন।

গাজায় ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যুকে ইসরায়েল ‘আত্মরক্ষার্থে’ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে হারযোগ বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী আইন অনুযায়ীই নিজেদের রক্ষা করার অধিকার থেকেই আমাদের এই পদক্ষেপ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ গঠিত হলে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আইনি পরামর্শ দেওয়ার কাজ করে এই আদালত।

ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের দীর্ঘস্থায়ী সংহতির পেছনে রয়েছে ইতিহাস। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলা দীর্ঘ সংগ্রামের সমান্তরালে চলেছে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি তাদের সংহতি জ্ঞাপন। ৭ অক্টোবরের আক্রমণের সমালোচনা করেছিল দেশটি, দাবি জানিয়েছিল জিম্মিদের মুক্তির।

দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সেরিল রামাফোসা বলেছেন, গাজার জনগণের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আমরা, তাই আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি। একসময় বৈষম্য, বর্ণবাদ, জাতিভেদ ও রাষ্ট্রের মদদে ঘটা সহিংসতার তিক্তস্বাদ নিতে হয়েছে আমাদের; কাজেই আমরা পরিষ্কার জানি, ইতিহাসের সঠিক পক্ষেই আমরা দাঁড়িয়েছি।

 

প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো কয়েক সপ্তাহমাত্র স্থায়ী হবে, কাজেই দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষেই হোক, বা বিপক্ষে; কয়েক সপ্তাহের ভেতরেই আদালত রায় দেবে বলে মনে করা যায়। তবে মূল মামলার ক্ষেত্রে আরো অনেক সময় লাগবে। আইসিজে-র বিচারিক কার্যক্রম এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে আইনি প্রতিনিধিদের মৌখিক তর্কাতর্কির পর বিস্তারিত লিখিত প্রতিবেদন দিতে হবে। ফলে মামলায় আদেশ পেতে তিন-চার বছর সময় লাগতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ নিয়েছে বেশকিছু দেশ। মালয়েশিয়া, তুরস্ক, জর্ডান, বলিভিয়া, মালদ্বীপ, নামিবিয়া, পাকিস্তান, কলম্বিয়া এবং ওআইসি-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো রয়েছে এই তালিকায়।

ইউরোপিয় ইউনিয়ন এক্ষেত্রে চুপ, তবে ইসরায়েল তার বরাবরের সমর্থক ও অস্ত্র সরবরাহকারী আমেরিকার সমর্থন পাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাট মিলারের মতে, ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে, এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের ভার তাদের নিতে হবে।

/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর