শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বিভক্ত বাংলাদেশের সামনে বিপদ: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

বিভক্ত বাংলাদেশের সামনে বিপদ: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
ছবি: ঢাকা মেইল

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে হংকংভিত্তিক ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক সংস্থা আলিবাবার মালিকাধীন সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, শেখ হাসিনার জয় ‘গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকেছে এবং বিভক্ত জাতির সামনে বিপদ ঘনিয়ে আসছে’।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের নিবন্ধটি লিখেছেন রেদওয়ান আহমেদ। নিবন্ধটির বাংলা ভাবানুবাদ ঢাকা মেইলের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- 


বিজ্ঞাপন


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একচেটিয়া জয় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে এবং এটি আরও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পূর্বাভাস হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন-  বিরোধী দল একে ‘ভুয়া নির্বাচন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এটিকে বয়কটের ডাক দিয়েছিল। নির্বাচনের দিন জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানায় বিরোধী দলগুলো, জনগণ এতে অনেকটাই সাড়া দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রোববারের নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বাকি আসনগুলোর বেশিরভাগ জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদেরকে ‘ডামি’ বলে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের দিকে নজর রাখছেন জাতিসংঘ মহাসচিব

প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভোট বর্জন করার পর ভোটের হার ৪০ শতাংশের মতো ছিল। নির্বাচনের ফলাফল ৭৬ বছর শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানোর নিশ্চয়তা দেয়। এর আগে টানা তিন দফা ক্ষমতায় ছিলেন তিনি, যে সময়ে বাংলাদেশ একইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈষম্য দেখেছে। এই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করার অভিযোগ করেছেন সমালোচকরা।


বিজ্ঞাপন


রোবাবর ঢাকাজুড়ে ভোটকেন্দ্রে উৎসাহের অভাব ছিল। আওয়ামী লীগের ব্যাজ পরা ক্ষমতাসীন দলের অনুগতদের পাতলা লাইনগুলোকে ভারী দেখানোর জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের বস্তিতে থাকা এক নারী তার নাম বেগম বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তাকে সারাদিন ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকার জন্য ৫০০ টাকা (৪.৫০ ডলার) এবং এক প্যাকেট বিরিয়ানি দেয়া হয়েছিল।

বিএনপির সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম খান  বলেন, 'এই প্রহসনমূলক নির্বাচনে ভোটারদের হতাশাজনক হার পর্যবেক্ষণ করে এটা স্পষ্ট যে এদেশের মানুষ বর্তমান ও আসন্ন সরকারের বৈধতা প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি আমাদের দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিএনপির অহিংস আন্দোলনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিজয়।'

এবারের নির্বাচন এর ফল নিয়ে হতাশা বেড়েছে। বিশেষ করে অল্পবয়সি শহুরে ভোটারদের মধ্যে। ৩৩ বছর বয়সি কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ার ইব্রাহিম হক বলেন, 'আমার এই প্রহসনে অংশ নেয়ার কোনো আগ্রহ নেই।'

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ নির্বাচন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত ব্রিটেন

সজিব উজ জামান নামের একজন বলেন, 'এটিকে জাতীয় নির্বাচনের মতো মনে হয়নি।'

একটি ম্যাগাজিনে ২৬ বছর বয়সি এই লেখক বলেছেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাকস্বাধীনতা এবং ভিন্নমতের সুরক্ষার পতন হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি আমার চিন্তাভাবনা ও মতামতগুলো শুধু গুটিকয়েক লোকের কাছেই বলতে পারি, যাদেরকে আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি।'

সোমবার জয়ের পর সাধারণ নির্বাচনের সমালোচনাকে 'অবৈধ' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। যারা সমালোচনা করতে চান তারা সমালোচনা করতে পারেন।'

আওয়ামী লীগের বিজয় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর পাশাপাশি অবকাঠামো, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি এবং টেক্সটাইল প্রকল্পে ধারাবাহিকতা চাওয়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বাংলাদেশ চীন থেকে ২.৬ বিলিয়ন এফডিআই পেয়েছে। আর জাপান থেকে পেয়েছে ৩৮০ মিলিয়ন।

ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক পিয়েরে প্রকাশ বলেন, 'আপনি যদি ভারত বা চীন হন, তাহলে আপনি মনে করেন আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা তাদের জন্য আরও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। তারা এটিকে এভাবেই দেখে। আমি মনে করি এটি রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্ভাবনাকে এড়িয়ে যায়।'

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র

সোমবার তার সরকারি বাসভবনে নির্বাচন-পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে অভিহিত করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি নিজেই ভবিষ্যতের সমস্যাগুলির দিকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ধৈর্য্য দেখিয়েছি এবং আমরা জনগণের অধিকার নিশ্চিত করেছি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ দেশে গণতন্ত্র যাতে অব্যাহত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

কিন্তু সমালোচকরা বলছেন যে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি নিরবচ্ছিন্ন হয়রানি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতি থেকে দূরে সরে গেছে। প্রকাশ বলেন, 'একটি স্বাস্থ্যকর এবং প্রাণবন্ত গণতন্ত্র থাকার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচনটি সততার কফিনে পেরেকের মতো দেখায়। আপনি একটি স্বৈরাচারী প্রবণতা, বাকস্বাধীনতা হ্রাস, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা হ্রাস ও গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য হ্রাস দেখতে পাবেন। ধারণা করতে পারেন যে, ভিন্নমত পোষণ করা অন্য যেকোনো কিছুর উপর দমন আরও বাড়তে যাচ্ছে।'

প্রকাশ বলেন, শেখ হাসিনা 'বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার নেই' বলার পর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নিবন্ধন হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশে ভিন্নমতের ওপর নিপীড়ন আরও বাড়তে পারে।সরকারের কোনো সমালোচনা হলে তার বিরুদ্ধে আরও দমন পীড়ন নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর