বাংলাদেশে শুরু হয়েছে শীতের মওসুম। এ ঋতুতে জাঁকিয়ে শীত পড়ে এবং মানুষজন গরম জামা-কাপড় পরা শুরু করে। একইসাথে শুরু হয় পিঠা খাওয়ার উৎসব।
বাংলাদেশের মানুষ প্রচণ্ড শীতের কারণে লেপ–কম্বল জড়িয়ে ঘুমাতে বাধ্য হলেও এ দেশে বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশের মতো কোনো তুষারপাত হয় না। এর পিছনে রয়েছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কারণ।
বিজ্ঞাপন
কোনো দেশে তুষারপাতের সম্ভাবনা কতটুকু, সেই প্রশ্নে যাওয়ার আগে জানতে হবে, তুষারপাত জিনিসটা কী? আমরা সবাই জানি, সূর্যের তাপে সাগর, নদী, খাল-বিল বা পুকুরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে যায়।
আরও পড়ুন: শীতে তীব্র যুদ্ধের প্রস্তুতি রাশিয়ার, ক্লান্ত ইউক্রেনের সেনারা!
পানি বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে ওঠারও একটি কারণ আছে। সাধারণত যে বস্তু তুলনামূলক হালকা, সেটি ওপরের দিকে উঠতে চায়। জলীয় বাষ্প বাতাসের চেয়ে হালকা। তাই ওপরে উঠে যায় জলীয় বাষ্প। যত ওপরের দিকে যাওয়া যায়, তাপমাত্রাও তত কমতে থাকে। অবশ্য, ওপরে ওঠারও একটা সীমা আছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ কিলোমিটার ওপরে যাওয়ার পর বাতাসে জলীয় বাষ্পের ধারণক্ষমতা কমে যায়।
এই অঞ্চলকে বলে ক্ষুব্ধমণ্ডল। সেখানকার বায়ুতে থাকে প্রচুর ধূলিকণা। জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ধূলিকণা মিশে তা ভারী হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমলে তুষারপাতে পরিণত হয়। তাই বাতাসের তুলনায় তুষারপাত আরও ভারী হয়ে যায়। বাতাস আর ওগুলোকে ধরে রাখতে পারে না। তুষারকণা ঝরে পড়ে ভূপৃষ্ঠে।
বিজ্ঞাপন
আসলে আকাশে যখন তুষারকণা তৈরি হয়, তখন সেগুলো সব জায়গায় সমানভাবেই পড়ে। কিন্তু কোন অঞ্চলে তুষারপাত হবে আর কোন অঞ্চলে হবে না, তা নির্ভর করে তাপমাত্রার ওপর। মূলত তুষারপাত হওয়ার জন্য যেকোনো দেশের তাপমাত্রা নামতে হবে হিমাঙ্কের নিচে। অর্থাৎ, শূন্য ডিগ্রির নিচে থাকতে হবে তাপমাত্রা। বাংলাদেশের তাপমাত্রা কখনও হিমাঙ্কের নিচে নামেনি। তাই এ দেশে তুষারপাত হয় না। অপরদিকে শীতপ্রধান দেশে তুষার পড়ে।
এছাড়া পানি চক্রটা হলো অনেকটা এরকম, সূর্যের তাপে যত রকমের জলাশয়ের পানি বা পানির উৎস আছে তা থেকে পানি বাষ্পে পরিণত হয়। এরপর সেই বাষ্প বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে উঠে যায়। বাষ্পের সঙ্গে অনেক ধূলি কণাও থাকে, এই ধূলিকণাগুলোকে আশ্রয় করে বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে ঠাণ্ডা হওয়া বাষ্পরা মেঘ তৈরি করে এই মেঘ ঠাণ্ডা এবং ঘনীভূত হয়। এরপর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এক দিন মাটিতে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে।
তুষারের ক্ষেত্রেও এটাই হয় - শুধু পার্থক্য হচ্ছে জলীয়বাষ্প যে পরিবেশে গিয়ে জমাট বাঁধে তার থেকে তুষারের জমাট বাধার পরিবেশ অনেক বেশী শীতল হয়। এক্ষেত্রে আগে ধূলিকণাটিই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আগে বরফ হয়ে যায়। তারপর সেই বরফের গায়ে জলীয়বাষ্পের অণু যুক্ত হয়। সেই অণুর আর বরফ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন নেপালি তরুণরা, উদ্বিগ্ন সরকার
এভাবে শীতের দেশে জলীয়বাষ্প পানি না হয়ে সোজা বরফ হয়ে যায়। বরফ হতে গিয়ে বরফ কুচির খুব দারুণ কিছু আকার নেয় যেটাকে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন স্নো ফ্লেক্স।
এছাড়া বাংলাদেশে যে শীল বৃষ্টি হয় - তা কিন্তু তুষারপাত নয়। শীলের ক্ষেত্রেও আসলে বরফ হয় তবে এই ক্ষেত্রে বাষ্প ধূলিকণার ওপর ভর করে শুরুতেই বরফ হয় না, আগে পানিই হয়। এরপর এই পানি মেঘের মধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে বরফ হয়। তাই শিলা বৃষ্টিতে দেখা যায় আস্ত আস্ত বরফ পড়তে। এগুলোর নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আকৃতি নেই।
এমইউ