কুয়েতের আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ ৮৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। তাকে একেবারে সংক্ষিপ্ত ও ছোট আকারের আনুষ্ঠানিকতার পর দাফন করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশটির প্রধানের কবরও অত্যন্ত সাধারণ। সেখানে নেই কোনো চাকচিক্য।
কুয়েতের প্রয়াত আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমাদ আল-সাবাহ মারা যাওয়ার একদিন পরে রোববার নির্বাচিত আত্মীয়দের অংশগ্রহণে জানাজা হয়। এরপর তাকে দাফন করা হয়। খবর ডন ও এএফপির
বিজ্ঞাপন
কুয়েতের পতাকায় আঁকা শেখ নওয়াফের কফিন দাফনের আগে জানাজার জন্য কুয়েতের একটি মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কুয়েত ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক বাদের আল-সাইফ বলেন, প্রয়াত আমিরের ইচ্ছা অনুযায়ী তার দাফন কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করা হয়েছিল। এটি তার চরিত্রকে প্রতিফলিত করে।
আরও পড়ুন: আরব বিশ্বে কুয়েতের আমির নওয়াফের ভূমিকা এবং তার উত্তরসূরি
কুয়েত সিটির সুলাইবিখাত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। দাফনের পর আত্নীয়রা প্রয়াত আমিরের কবরের পাশে বসে ছিলেন। কেউ কেউ কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন।
কবরের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে তার কবরটি অতি সাধারণ। বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশটির প্রধানের কবর হিসেবে সেখানে কোনো বিলাসিতা নেই। লোহার একটি বেড়া দেওয়া হয়েছে। আর কবরের সামনে ছোট্ট পাথরে শুধু আমিরের নাম লেখা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আমিরের মৃত্যুতে কুয়েতে ৪০ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির নাগরিকরও আমিরের মৃত্যুতে শোকাহত। এছাড়া আরবসহ বিশ্বনেতারা কুয়েত আমিরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ ১৯৩৭ সালের ২৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহ’র মৃত্যু হলে তিনি কাতারের আমির নির্বাচিত হন। শেখ নওয়াফ কুয়েতের ১৬তম আমির এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালের ষষ্ঠ আমির ছিলেন। তিনি হাওয়ালি প্রদেশের গভর্নর হিসেবে ২৫ বছর বয়সে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
কুয়েতের আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ তার বিনয়ী ব্যবহার ও ক্ষমাশীলতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। একইসাথে তিনি পারস্য উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর দ্বন্দ্ব মিটাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: কুয়েতের আমিরের মৃত্যুতে ৪০ দিনের শোক, নতুন আমির সম্পর্কে যা জানা গেল
পারস্য উপসাগরের আরবি গণমাধ্যমগুলো শেখ নওয়াফ সম্পর্কে লিখেছে, গত জানুয়ারিতে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনি বেশ কয়েকজন বন্দীকে ক্ষমা করার আদেশ জারি করেছিলেন। কুয়েতের আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ তার বিনয়ী ব্যবহার ও ক্ষমাশীলতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টার কারণে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মধ্যে উত্তেজনার অবসান ঘটে। পারস্য উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর দ্বন্দ্ব মিটাতে তার ভূমিকা খুবই কার্যকর ছিল।
কুয়েতে নতুন আমির হয়েছেন মরহুম আমিরের সৎ ভাই ও কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্স মাশআল আল-আহমাদ আস-সাবাহ (৮৩)। এ বিষয়ে কুয়েতের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ‘শেখ নওয়াফের মৃত্যুর পর ৮৩ বছর বয়সী যুবরাজ ও সৎ ভাই শেখ মাশআল আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহকে দেশের নতুন আমির নিযুক্ত করা হয়েছে।’
মাশআল ছিলেন বিশ্বের বেশি বয়সী ক্রাউন প্রিন্স বা যুবরাজদের একজন। নওয়াফ আহমাদ জাবির আস-সাবাহ ২০২১ সালের নভেম্বর থেকেই তার কিছু ক্ষমতা মাশআলের হাতে অর্পণ করেছিলেন।
এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেখ মাশআলের কাছে শেখ নওয়াফ নিজেই তার বেশিরভাগ দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। মূলত, ২০২১ সাল থেকেই মাশআল কুয়েতের প্রকৃত শাসক।
কুয়েতের সংবিধানের অধীনে পূর্ববর্তী আমির অক্ষম হয়ে গেলে ক্রাউন প্রিন্স আমির হন। এখন শেখ মাশআল সংসদে শপথ গ্রহণের পর ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। নতুন আমিরের উত্তরাধিকারীর নামকরণের জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় থাকে।
একে

