গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ১৭৭ জন। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে।
গাজার সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ নারী ও শিশু।
বিজ্ঞাপন
হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের হামলায় আরও ২ ইসরায়েলি সেনা নিহত
বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো মধ্য গাজা উপত্যকার একটি শরণার্থী শিবিরের পাশাপাশি এ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত দু’টি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর ফলে ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ‘আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।’
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ‘দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের আল-শাবোরা শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে ইসরায়েলিরা বিমান হামলা করেছে। এ আক্রমণে কমপক্ষে ছয় ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।’
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলের সেনারা। তিনি বাড়িতে আছেন কিনা তা জানা যায়নি।
নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, ''গতকালই আমি বলেছিলাম যে গাজা ভূখণ্ডের যেকোনো জায়গায় আমাদের সেনারা পৌঁছাতে পারবে। আজ আমাদের সেনারা সিনওয়ারের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। হতেই পারে যে তিনি ওখানে নেই। তিনি পালিয়েও যেতে পারেন। তবে আজ না হয় কাল, তাকে ধরা হবেই।''
সিনওয়ারের বাড়ি দক্ষিণ গাজায় খান ইউনিস শহরে বলে জানা গেছে। বুধবার সেখানে ইসরায়েলের সেনারা খুবই তৎপর ছিল। ইসরায়েলের ধারণা, হামাসের নেতারা এখন দক্ষিণ গাজায় আছেন। কারণ, প্রথম দিকে লড়াইটা উত্তর গাজায় সীমাবদ্ধ ছিল। তারা তখন দক্ষিণ গাজায় চলে এসেছেন।
সিনওয়ার দুই দশকের বেশি সময় ইসরায়েলের জেলে ছিলেন। দুই ইসরায়েলি সেনা ও তাদের চারজন ফিলিস্তিনি সঙ্গীকে খুন করার দায়ে তার শাস্তি হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে জটিলতা বাড়াচ্ছে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র
২০১১ সালে ইসরায়েলের সেনা জিলাদ শালিটের মুক্তির বিনিময়ে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। তার মধ্যে সিনওয়ারও ছিল। ২০১৭ সালে সিনওয়ার গাজায় হামাসের প্রধান হন।
উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের ওপর প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল পাশবিকতা চালিয়ে গেলেও কোনো পশ্চিমা দেশ বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত তেল আবিবকে আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান পর্যন্ত জানায়নি
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে নজিরবিহীন সামরিক অভিযান চালায়। ওই অভিযানে ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে বন্দী করে নিয়ে গাজা উপত্যকায় ফিরে যায়। সেদিন থেকেই ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় ভয়াবহ রক্তাক্ত অভিযান শুরু করে যা এখন পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে।
ইসরায়েলে সামরিক অভিযানের বিষয়ে আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংসতার জবাবে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এবং আমাদের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসায় ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধে উদ্যোগ নেবে। এগুলোই হামাসের এই অভিযানের কারণ।’
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, আল-জাজিরা, আল-আরাবিয়া
এমইউ