শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে গাজায় কী হবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:০৩ এএম

শেয়ার করুন:

সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে গাজায় কী হবে?
গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবির।

কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি চলছে তার শেষ দিন আজ। শুক্রবার গাজার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, যা আজ সোমবার পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের চার দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়তো ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী- আইডিএফকে বাড়িয়ে নয়দিন দেরি করাবে। তবে সেটা নির্ভর করছে হামাস কতজন জিম্মিকে মুক্তি দিতে চায় তার ওপর।

ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, জিম্মি মুক্তির এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যে যুদ্ধ, সেটা আবারও শুরু হবে। যদি ইসরায়েলি বাহিনী এরপর গাজার দক্ষিণে মনোযোগ দেয় তখন পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, হামাস যেখানেই থাকবে, তাদের ধ্বংস করা হবে।


বিজ্ঞাপন


ধারণা করা হচ্ছে হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফ, আরও যোদ্ধাদের সঙ্গে দক্ষিণেই কোথাও আছেন এবং খুব সম্ভবত ইসরায়েলিদের জিম্মিদের একটা বড় অংশও তাদের সঙ্গে আছে। এখন যদি ইসরায়েল উত্তরে যেটা করেছে, সেই একই রকম অপারেশন দক্ষিণেও করতে চায়, তাহলে পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কি তখনও থাকবে?

গাজা উপত্যকার আনুমানিক ২২ লাখ মানুষ এখন দক্ষিণের দুই তৃতীয়াংশ অংশে এসে জমায়েত হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন গৃহহীন ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সামনে কী তাহলে আরও বড় মানবিক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে?

আরও পড়ুন

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি

এছাড়া আল-মাওয়াইসিতে বালুময় মাঠের মধ্যে স্থাপিত তাবুতে আশ্রয় নেওয়া শত শত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকও আছে।


বিজ্ঞাপন


ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউ) বলছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগ এখন দক্ষিণে গাদাগাদি করে থাকছে।

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কারণ হাজার হাজার লোক স্কুল, হাসপাতাল এবং তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে। বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের আগাম বৃষ্টি, যা কিছু জায়গায় বন্যাও নিয়ে এসেছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটা সমাধানের কথা বলা হচ্ছে- আর সেটা হলো আল মাওয়াইসির তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি করা। এটি হচ্ছে ভূমধ্যসাগরের পাশে একটা সংকীর্ণ কৃষি জমির এলাকা, যা মিশর সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত।

গত সপ্তাহে খান ইউনিসের আশপাশের এলাকায় আকাশ থেকে লিফলেট ফেলে বিমান হামলার ব্যাপারে সতর্ক করা হয় এবং বাসিন্দাদের আরও দক্ষিণে সমুদ্রের দিকে সরে যেতে বলা হয়।

বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে আইডিএফের আরবি গণমাধ্যমের মুখপাত্র আভিচায় আদরে বলেন, গাজাবাসীকে আল মাউয়াইসি, উপযুক্ত পরিবেশ দেবে তাদের প্রিয়জনদের রক্ষা করার জন্য।’ কিন্তু এটা আসলে কতটা বাস্তবসম্মত যে যখন পাশে যুদ্ধ চলছে তখন এরকম একটি জায়গায় বিশ লাখের বেশি লোক এসে আশ্রয় নেবে? আল মাউয়াইসির পরিবেশই বা আসলে কতোটা ‘উপযুক্ত’?

ইসরায়েল যে জায়গাটার কথা বলছে এটার প্রস্থ ২.৫ কিলোমিটার আর দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটারের মতো। ফিলিস্তিন বিষয়ে এই অঞ্চলে ইসরায়েল সরকারের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন ড. মাইকেল মিলশটেইন। তিনি বলেন, ‘এটা একটা খুবই সুন্দর এবং উপযুক্ত জায়গা, তবে বেশ ছোট।’

palestine-2

দাতা সংস্থাগুলোর মতামত অবশ্য আরও আলাদা। ‘এটা একেবারেই সামান্য একটা ভূমি,’ বলেন ইউএনআরডব্লিউ’র যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক জুলিয়েট টোওমা। তিনি বলেন, ‘এখানে কিচ্ছু নেই, শুধু বালু আর পাম গাছ।’

এখন যেকোনো জায়গা যেখানে জরুরি অবকাঠামো নেই-যেমন হাসপাতাল, এরকম জায়গায় একসঙ্গে হাজারো বাস্তুচ্যুত লোককে নিয়ে আসাটা জাতিসংঘের জন্য একটা বিরাট মানবিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। হয়তো তাঁবুতেই জরুরি অবকাঠামো স্থাপন করতে হবে। সেই সঙ্গে মানসিক ধাক্কা তো আছেই। কারণ গাজার বেশিরভাগ অধিবাসী আসলে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে শরণার্থী হিসেবেই বেড়ে উঠেছে।

গাজায় এরইমধ্যে আটটি শরণার্থী শিবির আছে, যা গত কয়েক দশক ধরে ব্যস্ত, জনাকীর্ণ শহরে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ এখন সেখানে আরেকটা শরণার্থী শিবির স্থাপন করতে চায় না।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন এটা দাতা সংস্থাগুলোর দায়িত্ব যে কীভাবে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে সাহায্য আল মাউয়াইসিতে এসে পৌঁছাবে- তা নিশ্চিত করা। ওই সীমান্ত থেকে আঅল মাউয়াইসি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। তারা এখনো পরিষ্কার করেনি যে পুরো ব্যাপারটি কীভাবে ঘটবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে আরও নিরাপদ অঞ্চল সৃষ্টি করা যায়- যেমন গাজার একেবারে দক্ষিণে দাহানিয়ায় একটি।

জিম্মি ছেড়ে দেওয়ার শর্ত অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ২০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রতিদিন ঢুকতে দেবে।

ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সহায়তা করছে, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন এনজিও মিলে এমন ১৮টি সংস্থার প্রধান কর্মকর্তারা গত ১৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা কোন নিরাপদ অঞ্চল স্থাপনে অংশগ্রহণ করবে না যতক্ষণ সেটি সবার সম্মতিতে না হবে।’

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখানে সব পক্ষের মধ্যে ইসরায়েল, হামাস ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

১৭ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস

আল মাউয়াইসির নাম না নিয়ে এই বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, ইসরায়েলের এই অনৈতিক প্রস্তাব আরও অসংখ্য জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। এখানে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের একজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস ঘেব্রেয়েসাস এই পরিকল্পনাকে ‘একটা বিপর্যয়ের ব্যবস্থাপত্র’ বলে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, ‘এই সামান্য জায়গায় এত লোককে একসঙ্গে করলে, যেখানে কোনো অবকাঠামো বা সেবার সুবিধা নেই, সেটি আগে থেকেই বিপদে থাকা লোকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে।’

ইসরায়েল বলছে, হামাস যেভাবে গাজা শহরে আছে, খান ইউনিস এবং রাফায় তাদের যোদ্ধা এবং অবকাঠামোও আছে। যেকোনো হামলার আগে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেয়াটা হামাসকে দমনের পথে মানবিক উপায় বলে যুক্তি দিচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইয়াকব আমিদরোর বলেন, ইসরায়েলের জনগণও এই পরিস্থিতি পছন্দ করছে না যে শীতের বৃষ্টির মধ্যে গাজার মানুষজন আল মাউয়াইসিতে গিয়ে থাকবে। কিন্তু এর বিকল্প কী? এমন প্রশ্ন ছোড়েন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত জনসংখ্যা আর তীব্র শীতে আরও কয়েকমাসের দুর্ভোগের আশঙ্কা গাজায় চলমান ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দেবে। এই অঞ্চলে আরেকটা বড় স্থল অভিযান পরিচালনা করা হলে তা বেসামরিক নাগরিক হতাহত ও বাস্তুচ্যুত হবার শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেবে, যা ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিও আরও কমিয়ে দেয়ার হুমকি তৈরি করবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর