মধ্যপ্রাচ্যে এবার পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র। বিমানবাহী রণতরীর পর ভূমধ্যসাগরে পৌঁছেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিরল ঘোষণায় এই বিষয়টি জানিয়েছে। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ সেন্টকমের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৫ নভেম্বর ওহাইও-শ্রেণির একটি সাবমেরিন ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের দায়িত্বের এলাকায় পৌঁছেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সেন্টকম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করা এক পোস্টে বলেছে, ৫ নভেম্বর একটি ওহাইও ক্লাস সাবমেরিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের আওতাভুক্ত এলাকায় পৌঁছেছে। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি সেন্টকমের আওতাভুক্ত এলাকা হলো—মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা অসহনীয়: ওবামা
ছবির ভিত্তিতে জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, ওহাইও ক্লাস সাবমেরিনটি সে সময় মিসরের সুয়েজ খাল অতিক্রম করে ভূমধ্যসাগরের দিকে যাচ্ছিল। তবে সেন্টকম ওই সাবমেরিনটির নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি।
এই সাবমেরিনটি আন্তমহাদেশীয় টোমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী চারটি সাবমেরিনের একটি, নাকি ট্রাইডেন্ট-২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী ১৪টি সাবমেরিনের মধ্যে একটি- সেটি জানা যায়নি। এই সাবমেরিন সিরিজ যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন বহরে সবচেয়ে বড় সংযোজন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৬ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন নৌবাহিনীর চারটি ওহাইও-শ্রেণির গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন বা এসএসজিএন রয়েছে। প্রতিটি এসএসজিন ১৫৪টি টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে; যা গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার প্যাকের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি এবং নৌবাহিনীর নতুন অ্যাটাক সাবমেরিনের অস্ত্রের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি। প্রতিটি টমাহক ১০০০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত উচ্চ-বিস্ফোরক ওয়ারহেড বহন করতে পারে।
২০১১ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো এসএসজিএন সাবমেরিন ব্যবহার করেছিল। সেসময় অপারেশন ওডিসি ডন চলাকালীন লিবিয়ায় প্রায় ১০০টি টমাহক নিক্ষেপ করে সাবমেনিরগুলোর ক্ষমতার মাত্রা দেখানো হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ব্যালিস্টিক এবং গাইডেড মিসাইল সাবমেরিনের গতিবিধি কিংবা অভিযান খুব কমই প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে থাকে। এর পরিবর্তে, পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করে।
সেন্টকমের ঘোষণাটি ইরান এবং এই অঞ্চলে তার প্রক্সিদের প্রতি নির্দেশিত প্রতিরোধের একটি স্পষ্ট বার্তা। পরমাণু অস্ত্রবাহী সাবমেরিনটি ইতিমধ্যে ভূমধ্যসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর সামরিক বহরে যোগ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিমানবাহী দুটি রণতরী ও আরও একটি সাবমেরিন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে ১৪৫০ কোটি ডলার মার্কিন কংগ্রেসের, ফিলিস্তিনে শুধু ‘সান্ত্বনা’
এর আগে, অক্টোবরের মাঝামাঝি অর্থাৎ হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যেই ভূমধ্যসাগরে দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠায়। প্রথমে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ডকে ওই অঞ্চলে পাঠানো হয়। পরে ১৪ অক্টোবর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস ডুইট ডি আইজেনহাওয়ারকেও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করার নির্দেশ দেন।
ইউএসএস ডুইট ডি আইজেনহাওয়ারে ৯ স্কোয়াড্রন (সর্বনিম্ন ৭২টি এবং সর্বোচ্চ ২১৬টি) যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর পাশাপাশি দুটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ও একটি গাইডেড মিসাইল ক্রুজারও পাঠানো হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজারর ৭৭০ জনে।নিহতদের মধ্যে ৪ হাজার ৮ জনই শিশু ও ২৫৫০ জন নারী।
বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত) গাজায় ইসরায়েলি হামলা অন্তত ২৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজা ইস্যু, বাইডেনকে ‘ভোট না দেওয়ার’ হুমকি মুসলিম আমেরিকানদের
পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা ওয়াফা নিউজ জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে অন্তত ১৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও অন্তত ২ হাজার ২০০ জন। সব মিলিয়ে গাজা ও পশ্চিম তীরে নিহতের মোট সংখ্যা ৯ হাজার ৯২৩ জন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহকে বার্তা পাঠিয়েছে যে, যদি তারা ইসরায়েলে হামলা চালায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা চালানো হবে।
একে