ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাতের ১১তম দিন চলছে। লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গেও সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহ ঘোষণাও দিয়েছে যে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধে জড়াতে প্রস্তুত। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন যে, হিজবুল্লাহ এই যুদ্ধে জড়ালে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
লেবাননের হিজবুল্লাহ কতটা শক্তিশালী। তারা কি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে পেরে উঠবে? এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল জাজিরা।
বিজ্ঞাপন
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের হিজবুল্লাহবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নিকোলাস ব্ল্যান্ডফোর্ড ধারণা করেন, বর্তমানে সক্রিয় ও রিজার্ভ মিলিয়ে কমপক্ষে ৬০ হাজার গেরিলা সেনা রয়েছে হিজবুল্লাহর। আর ২০০৬ সালে তাদের কাছে মাত্র ১৪ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র থাকলেও বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখে।
আরও পড়ুন: ক্ষমা চেয়ে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে দেশ ছাড়তে বলল কলম্বিয়া
হিজবুল্লাহর কাছে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বেশির ভাগই স্বল্পপাল্লার হলেও ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম। ইরানি প্রযুক্তির কিছু ক্ষেপণাস্ত্রও এখন তাদের হাতে আছে।
ব্ল্যান্ডফোর্ড জানান, হিজবুল্লাহর একটি ‘বিশেষ বাহিনী’কে যুদ্ধের সময় ইসরায়েলে কীভাবে অনুপ্রবেশ করতে হবে, সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা কয়েক বছর ধরে হিজবুল্লাহকে তাদের প্রধান হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিজ্ঞাপন
মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের সংঘর্ষ ও শান্তি প্রোগ্রামের পরিচালক র্যান্ডা স্লিম বলেন, হিজবুল্লাহ গেরিলারা সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এবং তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে লড়াই করেছে। ওই অভিজ্ঞতা সংগঠনটির যুদ্ধের সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
র্যান্ডা বলেন, ‘সিরিয়ার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় তারা শহুরে যুদ্ধ এবং বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে নতুন দক্ষতা অর্জন করেছে। তাদের গোয়েন্দা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে।’
হিজবুল্লাহ কি ইসরায়েলকে হারাতে পারবে? এ বিষয়ে র্যান্ডা স্লিম মনে করেন, ইসরায়েলকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি করার সক্ষমতা হিজবুল্লাহর আছে। তিনি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দর এবং প্রধান বিদ্যুৎ গ্রিড ধ্বংস করে দেওয়ার মতো সক্ষমতা হিজবুল্লাহর আছে। তবে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল লেবাননের বেশির ভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে পারে।
র্যান্ডা যুক্তি দেন, সিরিয়ায় হিজবুল্লাহ বাহিনী কিছু মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে বড় সফলতা দেখিয়েছে, তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর শক্তিশালী মেশিনের তুলনায় এসব কিছুই নয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এ মুহূর্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে গাজার বাসিন্দা ও হামাস যোদ্ধাদের ওপর চাপ কিছুটা কমতে পারে। তবে এই যুদ্ধ লেবাননের জন্য ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসবে, আর বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে ইসরায়েলও।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনে গড়ে উঠেছে ইসরাইলবিরোধী আরও ১০ সংগঠন
সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের উদাহরণ কম হলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ বেধে যাওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন র্যান্ডা স্লিম। তিনি বলেন, ‘গাজায় হামলার নৃশংসতার ওপর ভিত্তি করে হিজবুল্লাহ ও ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদি হামাস যোদ্ধারা হত্যার শিকার হতে থাকে, তবে হিজবুল্লাহ এতে নাক গলাতে পারে।’
২০০৬ সালের জুলাইয়ে সীমান্ত এলাকা থেকে ইসরায়েলের দুই সেনাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হিজবুল্লাহ গেরিলারা। এ ঘটনায় তীব্র সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ইসরায়েল। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে টানা ৩৪ দিন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করে। সে সময় এগারো শর বেশি লেবানিজ প্রাণ হারিয়েছিল আর ইসরায়েলে নিহত হয়েছিল ১৬৫ জন।
তবে বিগত ১৭ বছরে হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। ব্ল্যান্ডফোর্ড বলেন, ‘আমার মনে হয়, ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর আজকের দিনে ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সক্ষমতা এখন হিজবুল্লাহর আছে।’
একে