ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতির খবর অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দফতর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না।
এর আগে সোমবার সকালে মিশরের দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স এ খবরে জানিয়েছিল যে, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। সেখানে বলা হয়, সোমবার সকাল ৯টা থেকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) পাঁচ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল। এই সময় মিশর গাজার সঙ্গে তাদের একমাত্র সীমান্ত ক্রসিং রাফাহ গেট খুলে দেবে।
বিজ্ঞাপন
খবরে আরও বলা হয়, যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় ত্রাণবাহী গাড়ি প্রবেশ করবে এবং গাজা থেকে বিদেশিরা বের হতে পারবেন।
তবে এমন খবর প্রকাশের পরই এটি অস্বীকার করে ইসরায়েল। নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, 'এই মুহূর্তে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা এবং বিদেশিদের প্রস্থানের জন্য কোন যুদ্ধবিরতি নেই।'
তবে উত্তর সিনাইয়ের মিশরীয় রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক খালেদ জাইদ আনাদোলুকে বলেছেন, আরিশ বিমানবন্দর থেকে রাফাহ ক্রসিংয়ের দিকে ত্রাণ সহায়তা ট্রাকগুলো এগোতে শুরু করেছে। বিমানবন্দর থেকে রাফাহ ক্রসিংয়ের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের মতো।
আরও পড়ুন: গাজা দখল হবে ইসরায়েলের বড় ভুল: বাইডেন
বিজ্ঞাপন
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছিল যে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ব্যাপক হামলা চালানো ইসরায়েল অবরোধ শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। এর আগে রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান যে, ক্রসিংটি খোলা হবে, তবে তিনি নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি।
আগে থেকেই মিশরের রাফাহ সীমান্তে গাজার জন্য সাহায্য নিয়ে যাওয়া শত শত গাড়ি অপেক্ষা করছে। ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের কারণে সেগুলো গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, রাফাহ ক্রসিং (ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া গাজায় প্রবেশের একমাত্র সীমান্ত) গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি বিমান হামলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শনিবার একজন আমেরিকান কর্মকর্তা এএফপিকে নিশ্চিত করেন যে, মিশর এবং ইসরায়েল আমেরিকান নাগরিকদের রাফাহ হয়ে গাজা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। তবে চুক্তিতে শর্ত আরোপ করেছে মিশর।
মিশরীয় সংবাদ চ্যানেল আল-কাহেরা নিউজ জানায়, মিশরীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত মিশরীয় নিউজ চ্যানেলের মতে, কর্মকর্তারা শুধু বিদেশিদের পারাপারের জন্য ক্রসিং ব্যবহার করতে অস্বীকার করেন। তারা গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর শর্ত জুড়ে দেন।
ইতোমধ্যে, জর্ডান, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গাজার জন্য সাহায্যের বিশাল চালান মিশরের এল আরিশ বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মিশর নিজেই ১০০টন ত্রাণ বহনকারী ১০০টি পরিবহন ট্রাকের কনভয় পাঠিয়েছে।
অবরুদ্ধ গাজায় প্রবেশের জন্য মোট তিনটি ক্রসিং পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে দুটি সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি একটি হলো রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং। যা সরাসরি মিশরের সঙ্গে সংযুক্ত।
হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এর ফলে প্রায় ২২ লাখ জনসংখ্যার গাজা তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় তীব্র মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় হামলা বন্ধ না হলে হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারি ইরানের
এর আগে শুক্রবার ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রী কাটজ বলেন, 'গাজায় মানবিক সহায়তা? ইসরায়েলি অপহরণকারীদের ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত কোনও বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করা হবে না, কোনও পানির কল খোলা হবে না এবং কোনও জ্বালানী ট্রাক প্রবেশ করবে না।'
জাতিসংঘ গাজার পরিস্থিতিকে ভয়ানক বলে উল্লেখ করেছে। অবস্থার উন্নতিতে দ্রুত সাহায্য পৌঁছানোর দাবি জানিয়েছে তারা। এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংগঠন ইউনিসেফ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ২৪৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় এসব ফিলিস্তিনি নিহত হন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় আরও ৯,২০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। ৭২৪ শিশুসহ নিহতদের মধ্যে শত শত নারী রয়েছে।
চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতির কারণে গাজার হাসপাতালগুলো ‘কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবিক সহায়তা সংস্থা রেড ক্রস।
এদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪০০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি ইসরায়েলি।
একে

