ইসরায়েলে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় বসবাস করেন। তারা শুধু ‘কেয়ার গিভার’ বা বয়স্কদের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করেন। ইসরায়েল তেলেঙ্গানা এসোসিয়েশনের সভাপতি সোমা রভি এ তথ্য দিয়েছেন।
এদের বাইরে ইসরায়েলে হাজার খানেক ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষক আছেন। সোমা রভি নিজেও গত ১৮ বছর ধরে কেয়ার গিভার-এর কাজই করেন।
বিজ্ঞাপন
“ইসরায়েল সরকার শুধুমাত্র কেয়ার গিভার-এর কাজেরই অনুমতি দেয়। অন্য কোনো ক্ষেত্রে কাজ করা যায় না এখানে," বলেন রাভি।
তিনি বলেন, "গত বছর যখন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসেছিলেন, আমি তাকে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম যাতে কৃষি এবং নির্মাণ শিল্পেও কাজের অনুমতি পাওয়া যায়।"
কেয়ার গিভার এবং হাজার খানেক ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া ইসরায়েলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদিরাও রয়েছে।
ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ভারত থেকে যেসব ইহুদি সে দেশে চলে গিয়েছিলেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার, এমনটাই জানিয়েছে সেখানকার ভারতীয় দূতাবাস।
বিজ্ঞাপন
তারা বলছে, পঞ্চাশ এবং ষাটের দশক থেকে মহারাষ্ট্র, কেরালা আর কলকাতা থেকে এসব ভারতীয় ইহুদিরা ইসরায়েলে চলে যান। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকেও অনেক ইহুদি ইসরায়েল গেছেন।
‘বেশিরভাগ ফিরতে চান না’
সোমা রভি বলেন, দেশে ফিরতে আগ্রহী এমন ভারতীয়র সংখ্যা খুব বেশি হবে না বলেই তার ধারণা। রভি গত ১৮ বছর ধরে ইসরায়েলে চাকরি করেন।
তেল আবিবের শহরতলী রামাতগান এলাকার বাসিন্দা রভির কথায়, “পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে না এখনই খুব বেশি ভারতীয় দেশে ফিরতে চাইবেন। মূলত ছাত্র-ছাত্রী বা গবেষকদের একটা অংশ হয়তো ফিরে যেতে চাইবে, কিন্তু আমরা যারা চাকরি করি এখানে, তাদের ভারতে ফিরে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা আছে বলে মনে হচ্ছে না এখনও।
“প্রথম দু’দিনের পরে আমি যেখানে থাকি বা তেল আবিব শহরে খুব একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তো নয়। মিসাইল হামলা দেখে আমরা অভ্যস্ত। হামলার আগে সাইরেন বাজলে বাঙ্কারে চলে যাই, কয়েক মিনিট পরে বেরিয়ে আসি।"
"এবারেও তো আমার এলাকায় এখন সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে আমার জায়গাটা থেকে আরও প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কিবুৎজ, বেরি, নিরোস বা রেইম অঞ্চলে যারা থাকে, তাদের জন্য পরিস্থিতিটা বেশ খারাপ,” জানাচ্ছিলেন রভি।
তিনি বলছিলেন, ইসরায়েলে ভালো বেতন এবং অনেক সুবিধা আছে। তাই কাজ ছেড়ে এখনই দেশে ফিরতে আগ্রহী নয় বেশিরভাগ ভারতীয়।
“আর ফিলিস্তিন এলাকায় বেথলেহেমে বেড়াতে এসেছিলেন চেন্নাইয়ের বাসিন্দা ৭৩ বছর বয়সী এক নারী, তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন দেশে ফিরে যেতে চান বলে। তবে প্রথম ফ্লাইটে সম্ভবত তার জায়গা করে দেওয়া যাবে না। পরবর্তী কোনো একটা বিমানে তাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করব,” বলছিলেন সোমা রভি।
কন্ট্রোল রুম, হেল্প লাইন
তেল আবিবে ভারতীয় দূতাবাস বা রামাল্লায় ভারতীয় প্রতিনিধির দফতর থেকে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে। খোলা হয়েছে হেল্প লাইনও।
সোমা রভি বলছিলেন, “বুধবার ভারতীয়দের যে সব সমিতি রয়েছে, তাদের সঙ্গে দূতাবাসের কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। রেজিস্ট্রেশন করানোর ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন তারা।
"যদি হঠাৎ কোনো হামলা বা নিরাপত্তা ইস্যু তৈরি হয়, তাহলে দ্রুত যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার জন্য তারা আগাম তথ্য সংগ্রহ করে রাখছে। কর্মকর্তারা সমিতিগুলোর সদস্যদের মধ্যে এই কথাটা জানানোর জন্য বার বার বলছেন,“ জানাচ্ছিলেন রভি।
উল্লেখ্য, হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে সেখানে আটকে পড়া নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফেরাতে বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ বিমান পাঠাতে শুরু করছে ভারত। তেল আবিবে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় সেখানে বাস করেন। এছাড়া ফিলিস্তিন এলাকা, এমনকি গাজাতেও কয়েকজন ভারতীয় আটকে আছেন বলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নাগরিকদের দেশে ফেরানোর এই কর্মকাণ্ডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন অজয়’। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে 'অপারেশন অজয়ের' প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বৃহস্পতিবার বিকেলে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “অপারেশন অজয় শুরু হয়েছে। আজ রাতেই তেল আবিবে প্রথম বিশেষ বিমানটি পৌঁছবে। যেসব ভারতীয় নাগরিক দেশে ফিরতে চান, তাদের নিয়ে বিমানটি শুক্রবার সকালে ভারতে ফিরে আসবে।“
সূত্র : বিবিসি
এমইউ