শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে ভারতে যা হচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:০৯ এএম

শেয়ার করুন:

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে ভারতে যা হচ্ছে
হামাস-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ভারতে দুই ধরনের মতামত উঠে এসেছে। ছবি: বিবিসি

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে ভারতে একদল মানুষ ইসরায়েলিদের পক্ষ নিয়েছে। একই সময়ে কিছু মানুষ ফিলিস্তিনদের পক্ষ নিয়েছে। যদিও একটা সময় ভারতের বেশিরভাগ লোক স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল। কেন এমনটা হচ্ছে?

এ বিষয়ে বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরায়েলের ওপরে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় ভারতের মানুষের মধ্যে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তাতে একপক্ষ সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তারা আরেক পক্ষকে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের আর লড়াইয়ের বিষয়ে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, এটা রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণমনস্কতা।


বিজ্ঞাপন


তবে তারা এটাও মনে করেন, হামাসের এই হামলা নিয়ে মতামতের যে মেরুকরণ হয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক কারণ হামাস স্পষ্টভাবেই তাদের লড়াইটাকে ‘ইসলাম’-এর সংগ্রাম হিসেবে তুলে ধরে এসেছে দীর্ঘ দিন ধরেই।

তাই হিন্দুত্ববাদীরা যখন ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তখন মুসলিম রাজনৈতিক নেতারা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের কথা বলছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ইসরায়েলে উগ্রবাদী হামলা হয়েছে এবং এই কঠিন সময়ে ভারত ইসরায়েলের পাশে রয়েছে।

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরের দিনই সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (আগেকার টুইটারে) বিজেপি লিখেছে, "গতকাল ইসরায়েল একটি কাপুরুষোচিত উগ্রবাদী হামলার মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৬/১১/২০০৮ তারিখে মুম্বাইকে টার্গেট করা হয়েছিল। ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং তাদের সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দিয়েছে।''


বিজ্ঞাপন


6145b790-6769-11ee-b9d6-c11
নরেন্দ্র মোদি ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

বিজেপি লিখেছে ''দুর্বল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারত কী করেছে? না কিছু না। তিনি নথিপত্র পাঠিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, কংগ্রেসের সিনিয়র নেতারা হিন্দু সংগঠনগুলোকে দোষারোপ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং পাকিস্তানকে নির্দোষ ঘোষণা করেছিলেন। কখনও ক্ষমা করবেন না, ভুলবেন না'।

কংগ্রেস দল হামলা নিয়ে প্রথমে বিবৃতি দিতে গিয়ে ইসরায়েলের ওপরে হামলার তীব্র নিন্দা করেও বলেছিল যে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের দাবীগুলোকে ইসরায়েলের বৈধ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে কেবলমাত্র আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমাধান করা উচিত। যেকোনো ধরনের সহিংসতা কখনই সমাধান দিতে পারে না, একথাও বলেছিলেন কংগ্রেস মুখপাত্র।

তবে সোমবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে, সেখানে তারা না করেছে হামাসের নাম, না বলেছে ইসরায়েলের কথা, না হামলাটিকে আখ্যা দিয়েছে ‘উগ্রবাদী হামলা’ বলে।

ওয়েইসির অবস্থান

হামাসের হামলার বিষয়ে অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) সভাপতি এবং হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এক্স-এ লিখেছেন, "আমি ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি।

আবার মহারাষ্ট্রের এআইএমআইএম বিধায়ক এবং মুখপাত্র ওয়ারিস পাঠান অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভিডিও শেয়ার করার পাশাপাশি কয়েকজন ফিলিস্তিনির ছবিও পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছেন যে ‘এরা কি উগ্রবাদী ছিলেন যে এদের মেরে ফেলা হলো’?

9235cb10-6769-11ee-96c8-439
গাজার দক্ষিণ এলাকা থেকে ইসরায়েলি সীমানা এলাকার দিকে যাচ্ছে হামাস সশস্ত্র সদস্যরা

আবার নিজেকে ‘সনাতনী’ বলে দাবী করা চন্দন কুমার শর্মা সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন যে তিনি ‘ইসরায়েলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ভারত সরকার আদেশ দিলে ভারতের প্রতিটি জাতীয়তাবাদী হিন্দু ইসরায়েলে গিয়ে তাদের সমর্থনে যুদ্ধ করবে। হিন্দুরা, আপনারা কি তৈরি? ইসরায়েলের সঙ্গে ১০০ কোটি হিন্দু রয়েছে। ভারত ও ইসরায়েল দীর্ঘজীবী হোক।‘

এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখে ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নওর গিলন লিখেছেন যে ভারতের অভ্যন্তর থেকে ইসরায়েল জোরালো সমর্থন পাচ্ছে এবং এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।

মতামতের বৈপরীত্য কি ধর্মীয় কারণে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের পক্ষে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার আন্দোলনের পক্ষে যে দু’টি বিপরীত মেরুর মতামত উঠে আসছে ভারতের অভ্যন্তরে, তার একটা ভিত্তি নিঃসন্দেহে ধর্মীয়।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পশ্চিম এশিয়া বিশেষজ্ঞ এ কে পাশা বলছিলেন, ‘হামাসের এই অভিযানে যেভাবে ইসরায়েলিদের ওপরে হামলা হয়েছে, আবার যেভাবে সাধারণ ফিলিস্তিনিরাও নিহত হয়েছেন, সেখানে বড় হয়ে ওঠা উচিত ছিল মানবাধিকারের প্রশ্নটা। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তাদের নিজেদের সমর্থকদের কাছে নির্দিষ্ট বার্তা দিতে গিয়ে একটা পক্ষ নিয়ে ফেললেন। এটা তাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা হয়তো, কিন্তু এই ভিন্ন ভিন্ন, বিপরীত মতামতের মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার হলো যে তারা খুবই রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণমনস্কতার পরিচয় দিলেন।’

ইসলামবিরোধী অবস্থান

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ওয়েস্ট এশিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক অশ্বিনী কুমার মহাপাত্র বলছিলেন, ভারতের অভ্যন্তরে যে দু’টি মতামত উঠে আসছে একটা ইসরায়েলকে সমর্থন করে আর অন্যটা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রশ্নটিকে সামনে এনে, এটাই তো আশা করা গিয়েছিল।

02acfdf0-676a-11ee-b9d6-c11
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনেক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলি নাগরিকদের জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

তার কথায়, “হামাস তো অনেক দশক ধরেই তাদের লড়াইটাকে ইসলামের লড়াই বলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। যেন এটা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের তাদের নিজেদের লড়াই হিসেবে বিবেচনা করে, সেই চেষ্টা করে এসেছে। সেজন্যই যখন ইসরায়েলের ভেতরে হামাস ঢুকে পড়ে আক্রমণ চালায়, সেটাতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা উল্লসিত হচ্ছেন। একটা সময়ে যে ইসরায়েলকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করা হতো, সেখানে হামাস ঢুকে পড়েছে মানে মুসলমানদের বিরাট বড় একটা সাফল্য এটা।

“আবার উল্টোদিকে হিন্দুত্ববাদীরা যে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াচ্ছে তার কারণটাও ওই হামাস। ধরে নেওয়া যাক যদি এ ধরনের হামলা পিএলও করত, তাহলে কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা এভাবে মতামত ব্যক্ত করত না। সংগঠনটা হামাস, তাই হিন্দুত্ববাদীরা ইসলাম-বিরোধী জায়গা থেকে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াচ্ছে,” বলছিলেন অধ্যাপক মহাপাত্র।

তবে ফিলিস্তিন নিয়ে ভারতের নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর