ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শাসকগোষ্ঠী হামাস আর ইসরায়েলের সেনাদের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়েছে। এখনও ইসরায়েলের ভেতরে গাজা উপত্যকার নিকটবর্তী কিছু অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এখন পর্যন্ত তাদের ৭০০ নাগরিক মারা গেছে, যার মধ্যে দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি কনসার্টেই মারা গেছে ২৫০ জনের বেশি। অন্যদিকে ফিলিস্তিন বলছে যে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৪১৩ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে এখন পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে যে, তারা কিছুক্ষণ আগে হামাসের অন্যতম প্রধান ঘাঁটিতে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। এছাড়া জাবালিয়া অঞ্চলে একটি মসজিদেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
BREAKING: Israel's military says its troops are still fighting at seven points near Gaza
— The Spectator Index (@spectatorindex) October 9, 2023
অন্যদিকে হামাসও ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোঁড়া অব্যাহত রেখেছে। শনিবার ভোর থেকে ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের এই আকস্মিক রকেট হামলা শুরু হয়।
দক্ষিণ ইসরায়েলের কিব্বুতজ রে’ইম অঞ্চলের নেগেভ মরুভূমিতে চলছিল কনসার্ট। সেখানে মুহুর্মুহু হামলা চালায় হামাস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার ভোরে উৎসব স্থলে কয়েকটি গাড়িতে করে উপস্থিত হয়ে উৎসবে অংশ নেয়া মানুষের ওপর গুলি চালানো শুরু করে হামাস সদস্যরা।
বিজ্ঞাপন
হামাসের হামলার জবাবে পাল্টা আক্রমণে ইসরায়েলের বাহিনীর রকেট হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাজা উপত্যকার সব ধরনের স্থাপনা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
এর মধ্যে ৭৪ হাজার মানুষ জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে বলে রোববার রাতে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে জানানো হয় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে।
গত ১৭ বছর ধরে গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা হামাস বলেছে তারা ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলা অব্যাহত রাখবে।
আরও পড়ুন: এখন ইসরায়েল কী করবে?
শনিবার সকালেই যখন হামাস সেনাদের ইসরায়েলে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানকার মানুষ উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর থেকেই সেই চিত্র পুরোপুরি পাল্টাতে শুরু করে। হামাসের হামলার জবাবে পাল্টা রকেট ও বোমা হামলা করে ইসরায়েলের বাহিনী। গাজা উপত্যকার নাগরিকরা আতঙ্কে ঘর ছাড়তে শুরু করেন।
ইসরায়েলের প্রতি আক্রমণে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ৪১৩ জনের অধিকাংশই ‘নারী ও শিশু’ বলে দাবি করছে হামাস।
এরই মধ্যে গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ সহ খাদ্য, পানি ও জ্বালানি সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ঐ এলাকার বিদ্যুৎ চাহিদার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পূরণ করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় উদ্ধারকৃতদের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাপকভাব ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
বড় ধরনের সেনা অভিযান অবশ্যম্ভাবী
বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হামাসকে দমন করতে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বড় ধরনের সেনা অভিযান চালাবে। আর তা হলে, হামাস আর ইসরায়েলের বাহিনীর মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত চলমান থাকতে পারে সামনের কিছু দিন।
এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই ধরনের হামলায় না গিয়ে গাজা উপত্যকাকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমেই হামাসকে সেখানে আটকে রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে সেই কৌশল খুব একটা কার্যকর হয়নি। সেখানে বড় ধরনের সেনা অভিযান হয়তো খুব দ্রুতই পরিচালিত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বিভিন্ন দেশ যা বলছে
এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বহু ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক মারা যাবে। ইসরায়েলের সেরকম পদক্ষেপে যদি পুরো অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে এবং শুধু গাজা উপত্যকা আক্রমণ করে তারা হামাসকে দমন করতে পারে, তা সত্ত্বেও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়।
ওই পরিস্থিতিতে গাজা কীভাবে পরিচালিত হবে? সংঘাত শেষে ইসরায়েলের সেনারা যখন ফিরে যাবে, তখন গাজার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে? শুধু সেনাবাহিনী দিয়ে কী ওই অঞ্চলের শাসন পরিচালনা করা যাবে?
Residential buildings were destroyed in Israel’s attack on the besieged Gaza on Saturday, October 7 pic.twitter.com/wAqOIILX3u
— TRT World (@trtworld) October 7, 2023
ওই অঞ্চলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কোনো রাজনৈতিক সমাধান বের না করা গেলে ভবিষ্যতে আরো কয়েক প্রজন্ম হয়তো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর সহিংসতার মধ্যে দিয়েই জীবনযাপন করতে বাধ্য হবে।
বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংবাদদাতা বারবারা প্লেট-আশার বলছেন যে যুক্তরাষ্ট্র রণতরী, যুদ্ধবিমান ও অতিরিক্ত গোলাবারুদ পাঠানোর মাধ্যমে মূলত লেবাননের শক্তিশালী হিজবোল্লাহকে এই সংঘাতে জড়ানো থেকে থামাতে চাচ্ছে।
একে