ভারতের সিকিম রাজ্যে তীব্র বৃষ্টি হওয়ার পর সেখানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীর তীব্র স্রোতে সেখানকার ২৩ সেনা সদস্য ও ২০ জন সাধারণ নাগরিক নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে ব্যাপক তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন।
প্রবল বৃষ্টিতে হ্রদ ফেটে কয়েক ঘণ্টায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারতের উত্তরের এই ছোট্ট রাজ্যে। পাহাড় আর সমুদ্রের ছায়ায় আপাত শান্ত যে তিস্তাকে দেখতে অভ্যস্ত ভ্রমণার্থীরা, সেই তিস্তা এখন প্রবল গর্জনে ফুঁসছে।
বিজ্ঞাপন
এবার তিস্তা নদীর তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। এছাড়া ভেসে গেছে বাড়ি-গাড়ি ও বেশ কিছু সেনাছাউনি।
আরও পড়ুন: ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার অভিযোগ ‘গুরুতর’, তদন্ত প্রয়োজন: যুক্তরাষ্ট্র
ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত খোঁজ নেই ২৩ জন সেনা সদস্যের। খোঁজ মিলছে না উত্তর সিকিমের বহু গ্রামের বাসিন্দাদেরও।
বুধবার ভোরে এই উত্তর সিকিমেই হঠাৎ নেমে আসে বিপর্যয়। রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে দক্ষিণ লোনক হ্রদের ওপরে প্রবল বৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন
এই দক্ষিণ লোনক হ্রদ আসলে হিমবাহের বরফগলা পানিতে তৈরি হ্রদ। মেঘভাঙা তীব্র বৃষ্টিতে সেই হ্রদ ফেটে হুড়মুড়িয়ে পানি নামে তিস্তায়।
পানির চাপ সামাল দিয়ে অতিরিক্ত পানি ছাড়তে হয় চুংথামের কাছে তিস্তার বাঁধ থেকে। বাঁধ বাঁচাতে ছেড়ে দেওয়া সেই পানির তোড়েই ভেসে যায় উত্তর সিকিম।
ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, হঠাৎ ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় পানির স্রোত নামে তিস্তায়। এক ধাক্কায় বেড়ে যায় জলস্রোত। সেই পানিই ভাসিয়ে নিয়ে যায় রাস্তা, ঘর, বাড়ি, গাড়ি— সব কিছু। বন্যার তোড়ে ভেসে যায় লাচেন উপত্যকা।
এই পানির তীব্র স্রোতে ধস নামে উত্তর সিকিমজুড়ে। ভেসে যায় জাতীয় সড়ক ও অন্যান্য রাস্তা।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে ধর্ষকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সরকার
কোথাও রাস্তা মাঝখান থেকে ভেঙে দু’খান হয়ে গেছে, কোথাও আবার ঢালাই করা রাস্তার ৯০ শতাংশ ধসে পড়েছে নদীতে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বলছে, উত্তর সিকিমের সিংতামের কাছে বরদাংয়ের সেনাছাউনিতে কাদা-পানির নীচে ডুবে গেছে সেনাবাহিনীর ৪১টি গাড়ি। ডুবে গেছে ছাউনি।
কোথাও আবার দেখা গেছে গোটা একটি ক্রেনের শুধু মাথার অংশটি জেগে আছে। বাকিটা পানির তলায়। অধিকাংশ বাড়ির নীচের তলা ডুবে গেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিংথামে তিস্তার ওপর একটি ফুটব্রিজ ছিল। নদীর পানির তোড়ে সেই সেতুটি ভেঙে পড়েছে।
পানির স্তর বৃদ্ধির প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তিস্তার ওপর তৈরি একাধিক ব্যারাজে। প্রশাসনের শঙ্কা, পানির স্তর ২৫ থেকে ২৬ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
তিস্তার গতিপথের দু’পাশে পড়ছে গাজলডোবা ব্যারাজ, দোমহনি, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি শহর। তিস্তায় বৃদ্ধি পাওয়া পানির কারণে ওই সব এলাকাই প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাও।
সূত্র : এনডিটিভি, এবিপি
এমইউ