রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পক প্রণালীর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আদ্যপান্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

পক প্রণালীর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আদ্যপান্ত

দু’টি নদী বা সমুদ্রের সংযোগকারী জলপ্রবাহ বা ধারাকে বলা হয় প্রণালী। প্রণালীর সাথে নদী এবং খালের এর পার্থক্য হল, প্রণালী সাধারণত অনেক বড় এবং সামুদ্রিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়। এমনই এক প্রণালীর অবস্থান ভারত মহাসাগরে। ভারতীয় রাজ্য তামিলনাড়ু ও দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী এ প্রণালীর নাম ‘পক’।

‘পক’ উত্তরপূর্বে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণে অবস্থিত মান্নার উপসাগরকে একসঙ্গে যুক্ত করেছে। প্রণালীটি ৬৪-১৩৭ কিলোমিটার (৪০-৮৫ মাইল ) প্রশস্ত। ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গভর্নর (১৭৫৫-১৭৬৩) রবার্ট পকের নামে এই প্রণালীর নামকরণ করা হয়েছিল। ১৮৬০ সালে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার পক প্রণালী দিয়ে একটি খাল নির্মাণের প্রস্তাব করেছিল।

খননের জন্য হয়েছে বিভিন্ন গবেষণা। ভারত সরকার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে মান্নার উপসাগরের সাথে পক প্রণালী কে সংযুক্ত করার জন্য একটি ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ গভীর চ্যানেল খনন করা প্রস্তাব করেছিল। চ্যানেলটি একবার সম্পূর্ণ হলে আন্তর্জাতিক নৌচলাচলের জন্য কার্যকর হবে, যা শ্রীলঙ্কার চারপাশে বর্তমানের তুলনায় জাহাজের জন্য একটি ছোট রুট প্রদান করবে। ভ্রমণের দূরত্ব কমবে ৬৫০ কিলোমিটারের বেশি। তবে ২০০৮ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিকল্প জলপথের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে এক কমিটি গঠন করে৷ ঐ কমিটি অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নাকচ করে দেয়৷

চ্যানেলটি একবার সম্পূর্ণ হলে আন্তর্জাতিক নৌচলাচলের জন্য কার্যকর হবে, যা শ্রীলঙ্কার চারপাশে বর্তমানের তুলনায় জাহাজের জন্য একটি ছোট রুট প্রদান করবে। ভ্রমণের দূরত্ব কমবে ৬৫০ কিলোমিটারের বেশি।

পক প্রণালীর অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পক প্রণালী সরু, অগভীর এবং অনেক দ্বীপবেষ্টিত হওয়ার ফলে বড় জাহাজ চলাচলে নানামাত্রিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যদিও মাছ ধরার নৌকা এবং উপকূলীয় বাণিজ্য বহনকারী ছোট নৌযানগুলি বহু শতাব্দী ধরে এই প্রণালীতে চলাচল করছে।

সামুদ্রিক এই অঞ্চলটিতে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণে চিংড়ি। যদিও পক থেকে আহরিত মাছ ও চিংড়ি সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে জাফনা এবং মান্নার জেলাগুলোর উপসাগরে মোট ৬৮,৭৮০ টন মাছ আহরণের খবর পাওয়া যায়। এছাড়া পক প্রণালী আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলে উপযুক্ত হলে আয় হবে বিপুল শুল্ক।

পক প্রণালীর রাজনীতি

পক প্রণালীতে মৎস আহরণ নিয়ে বিভক্ত ভারত ও শ্রীলঙ্কা। গৃহযুদ্ধের সময় লঙ্কান জেলেদের মাছ ধরতে বেরোনো বন্ধ ছিল। এ সময় ভারতীয়রা অনেকটা অবাধে পক প্রণালী থেকে মাছ ধরেছে। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটলে জেলেদের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় উত্তেজনা। ভারতীয় জেলেরা শ্রীলঙ্কার জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছেন লঙ্কান জেলেরা।

এছাড়া ২০১৫ সালে তামিলনাড়ুর ধানুশকালী ও শ্রীলংকার তালাইমানারকে যুক্ত করতে এডিবির কাছে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব জমা দিয়েছিল ভারত। পক প্রণালীর ওপর ১৪ মাইল দীর্ঘ প্রস্তাবিত সেতুটি ২০১৫ সালেই শ্রীলংকার মন্ত্রিসভা ওই প্রস্তাব বাতিল করে দেয়।

রামসেতু বিতর্ক

পক প্রণালী ইস্যুতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ‍বিজেপির এক দাবি নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে। পক প্রণালীতে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রামেশ্বর দ্বীপ থেকে শ্রীলঙ্কার উত্তর-পশ্চিম উপকূলের মান্নার দ্বীপের একটি চুনাপাথর দিয়ে তৈরি সংযুক্ত অংশ ভাসমান রয়েছে। বিজেপিসহ ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর দাবি বাল্মিকীর রামায়ণ এবং তুলসীদাসের রামচরিতমানস বর্ণিত ‘রামসেতু’ এটি।

টিএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর