নিবন্ধন ফিরে পাওয়া, আগামী নির্বাচন নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে নিবন্ধন ফিরে না পেলে কী করবে এ বিষয়েও বিকল্প চিন্তা করছে দলটি। এমন অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী ও বিকল্প দল নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন নয়াদিল্লির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (আইসিপিএস) এ অ্যাসোসিয়েট রিসার্চ ফেলো অঙ্কিতা সান্যাল। গত ৯ আগস্ট আইসিপিএস এর ওয়েবসাইটে লেখাটি প্রকাশিত হয়।
অঙ্কিতা সান্যাল লিখেছেন, জুন মাসে একটি নতুন দল (বাংলাদেশ উন্নয়ন দল) বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। জানা গেছে যে, এটি ২০১৩ সালে নিবন্ধন হারানো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিকল্প দল। দলটি নতুন দল গঠন করে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।
বিজ্ঞাপন
দলটির শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০১৬ সাল থেকেই নতুন হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করা হবে কি না সেটি নিয়ে বিতর্ক চলছে দলটির অন্দরে। এখন তারা একটি নতুন দল গঠনের ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।
২০১৪ সাল বিএনপির জোট নির্বাচন বর্জন করে। তবে ২০১৮ সালে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকার কারণে নির্বাচনী জোটে জামায়াতকে অন্তর্ভুক্ত করতে অনিচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিএনপি।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে, বিএনপির মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা দলটিকে জামায়াতের সাথে জোট বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এমন বিচ্ছিন্নতার আহ্বান জানিয়েছিল। জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে বিএনপির মধ্যে কিছু বিতর্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক ছিন্ন না করার সিদ্ধান্ত হয়।
জামায়াতে ইসলামীর প্রধান ড. শফিকুর রহমান ২০২২ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছিলেন, 'জোট অকার্যকর হয়ে পড়েছে'। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিএনপি ও জামায়াত পৃথক কর্মসূচি পালন করে। যদিও বিএনপির মধ্যে কিছু নেতা জামায়াতের পৃথক পথে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে ভালো হিসেবে দেখেন। তবে সত্য হলো- জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার রাজনৈতিক সাহস বিএনপির ছিল না। অতএব, এই বিচ্ছেদ কৌশলগত বলে মনে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এক দশক পর জামায়াতকে গত ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর ফলে কেউ কেউ জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বোঝাপড়ার কথাও অনুমান করে। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত, আগের দুই জোট তাদের বিকল্প খোলা রেখে আলাদাভাবে সমাবেশ করছে। জামায়াত সবসময়ই বিএনপির ঘনিষ্ঠ, কিন্তু মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে একটি কৌশলগত বিচ্ছিন্নতা তাকে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী দল। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক খুব একটা সুখকর নয়। এক সময় জামায়াতকে মধ্যপন্থী ইসলামী দল হিসেবেও প্রচার করা হয়েছিল।
সাবেক জেএমবি নেতাদের একজন সাইদুর রহমান একসময় জামায়াত করতেন। জামায়াতে ইসলামীর হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি। তবে জামায়াত তার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়। তারা জানায় যে, সাইদুর দলের সাথে জড়িত নয় এবং অনেক আগেই দল ছেড়ে গেছেন।
ইইউ অতীতে তার বেশ কয়েকটি প্রস্তাবে জামায়াতের বিষয়ে সোচ্চার ছিল, বিএনপিকে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেছিল। যদিও এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নীরবতা পালন করে আসছে।
জামায়াতে ইসলামী একটি দল হিসাবে ইসলামী মূল্যবোধ এবং পর্দা রক্ষণাবেক্ষণের উপর জোর দেয়।
যাইহোক, প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি, যেটিকে অনেকে জামায়াতের একটি ফ্রন্ট সংগঠন বলে মনে করেন) একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষা করছে।
একে

