রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

২২ বছরের চেষ্টায় ৩ বছরের ক্ষমতা: ইমরানের উত্থান-পতন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২২, ০১:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

২২ বছরের চেষ্টায় ৩ বছরের ক্ষমতা: ইমরানের উত্থান-পতন
১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইমরান খান।

বিশ্বের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে নিজের দেশকে জিতিয়েছিলেন বিশ্বকাপের ট্রফি। ১৯৯২ সালের সেই বিশ্বকাপের কয়েক বছর পরই নিজের রাজনৈতিক দল চালু করেছিলেন ইমরান খান। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন এই সাবেক ক্রিকেটার। তবে পাকিস্তানের ‘ঐতিহ্য’ বজায় রেখে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ইমরানকে ছাড়তে হলো গদি। ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনৈতিকের বাইশ গজ। চলুন জেনে নেয়া যাক তার উত্থান ও পতনের কাহিনী।

ক্রিকেটার হিসেবে অবসর নেওয়ার আগেই ইমরান খানকে বেশ কয়েকবার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ জিয়া-উল-হক ইমরান খানকে পাকিস্তান মুসলিম লিগে (পিএমএল) যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। নওয়াজ শরিফও ইমরানকে তার দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে ইমরান উভয় প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।


বিজ্ঞাপন


১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইমরান খান। তবে প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে খুব বেশি দাগ কাটতে পারেনি তার দল। ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে ইমরানের দল পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হারে। 

imran khan

ইমরান খানের দল ২০০৮ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল। কারচুপির অভিযোগ তুলে ইমরান নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে পিটিআই পাকিস্তানের অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। ২০১৩ সালের নির্বাচনে পিটিআই ভোটের নিরিখে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল এবং জয়ী আসনের নিরিখে তৃতীয় বৃহত্তম দলে পরিণত হয়।

বিরোধী দলের নেতা হিসাবে ইমরান খান জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে ‘আজাদি মার্চ’ শুরু করেছিলেন ২০১৪ সালে। সরকারের বিরোধিতায় ১২৬ দিন ধরে ইসলামাবাদে ধরনায় বসেছিলেন ইমরান ও তার দলের কর্মী, সমর্থকরা।


বিজ্ঞাপন


২০১৮ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ইমরান খানের দল বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসে। সেই নির্বাচনে তারা ১৪৯টি আসনে জয়লাভ করে। এবং শরিকদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে। তাছাড়া পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলি, খাইবার পাখতুনখোয়া, গিলগিট বালতিস্তান এবং কাশ্মীর অ্যাসেম্বলিতে ইমরান খানের দল এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ।

ইমরান খান তার শপথের সময় বড় বড় সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাকিস্তানকে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করবেন বলে দাবি করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হন। দেশে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়তে থাকে। বেকারত্বের হার, মূল্যস্ফীতির হারও ঊর্ধ্বমুখী। আল-কায়দা জঙ্গি ওসামা বিন লাদেনকে ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়ে বিতর্কে জড়ান। আফগানিস্তানের পালাবদলের সময় তালিবানদের পক্ষে সওয়াল করেন ইমরান।

imran khan power

শেষ পর্যন্ত বিরোধীরা একজোট হয়ে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। অনেক নাটকীয়তা শেষে রোববার মধ্যরাতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ১৭৪ জন সাংসদ। এই ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার বিষয়টি পাকা হয় ইমরান খানের। 

তবে এই অনস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব হয়েছেন ইমরান খান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, রাশিয়া সফর করার কারণে তার সরকারে ফেলে দিতে চাইছে একটি প্রভাবশালী দেশ।

২২ বছর লড়াই করে মাত্র তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন ইমরান খান। সামনের দিনে পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে হলে ক্রিকেট মাঠের মতো দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হতে হবে। বলের গতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের বলকে হাওয়াই ভাসিয়ে পার করতে হবে বাউন্ডারি। তার কতটুকু পারবেন ৬৯ বছরের ইমরান খান। তা সময়ই বলে দেবে।

একে 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর