শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইলন মাস্কের গ্যারেজে গাড়ি নয়, রয়েছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের সারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৩, ১০:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

ইলন মাস্কের গ্যারেজে গাড়ি নয়, রয়েছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের সারি
ইলন মাস্কের সর্বশেষ কেনা বিমান জি-৭০০

ইলন মাস্ক মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ স্থাপনের স্বপ্ন দেখেন। শীর্ষ ধনীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাইভেট জেটে ভ্রমণ করেন তিনি। ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ অ্যান্ড দ্য প্যাট্রিয়টিক মিলিয়নিয়ারের নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, টুইটার, টেসলা এবং স্পেসএক্সের সিইও এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি প্রাইভেট জেট ব্যবহার করেন। ধনীদের গাড়িপ্রীতি রয়েছে, তবে বিশ্বের অন্যতম বিলাসী গাড়ির কোম্পানিরই মালিক ইলন মাস্ক। তার গ্যারেজে রয়েছে প্রাইভেট জেটের সারি।

বাম-ঝুঁকে থাকা আইপিএস এবং দেশপ্রেমিক মিলিয়নেয়ারদের রিপোর্ট, যারা নিয়মিত তাদের উপর কর বাড়াতে সরকারকে অনুরোধ করে, জেট মালিকদের আপেক্ষিক নেট ওয়ার্থ সম্পর্কিত ওয়েলথ-এক্স ডেটা, সেইসাথে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ব্যবহারকারী ডেটার দিকে নজর দিয়েছে। কস্তুরীর মত পরিসংখ্যান সম্পর্কিত জনসাধারণের তথ্য।


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি ইলন মাস্কের প্রাইভেট জেট ট্র্যাকিং করার কারণে এক মার্কিন যুবকের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়। মার্কিন একটি সংস্থার রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রতি দুই দিনেরও কম সময়ে একবার ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে আকাশে ওড়েন ইলন মাস্ক। সেখানে বলা হয়েছে, গত বছর ইলন মাস্কের ভ্রমনে ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৪ লিটার জেট জ্বালিন খরচ হয়েছে এবং ২১১২ টন কার্বনডাইওক্সাইড বাতাসে ছাড়া হয়েছে। এটি গড় আমেরিকানদের চেয়ে ১৩২ গুণ বেশি। 

ইলন মাস্কের গ্যারেজে চারটি ব্যক্তিগত বিমান (প্রাইভেট জেট) রয়েছে। সম্প্রতি তিনি তার প্রাইভেট জেটের বহরে নতুন একটি গালফস্ট্রিম অ্যারোস্পেস কর্পোরেশনের জি-৭০০ মডেল যোগ করেন। এটি কিনতে তিনি ব্যয় করেছেন ৭৮ মিলিয়ন ডলার।

‘গাল্ফস্ট্রিম জি৭০০’ এয়ারক্র্যাফ্টের কেবিনের দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট। অত্যাধুনিক এই বিমানের রেঞ্জ ৭ হাজার ৫০০ নটিক্যাল মাইল। অর্থাৎ একবার পূর্ণ জ্বালানি থাকলে অস্টিন থেকে হংকং পর্যন্ত একটানা উড়ে যেতে পারবে। মাঝপথে জ্বালানি নেওয়ার দরকার হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বিলাসবহুল বিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গালফস্ট্রিম অ্যারোস্পেস করপোরেশনের ওয়েবসাইট অনুসারে, জি৭০০ বিমানটি এই শিল্পের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উদ্ভাবনী বিমান এবং এতে সবচেয়ে বহুমুখী কেবিন রয়েছে। এ ছাড়া বিমানটিতে একই সঙ্গে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রোলস রয়েস ইঞ্জিন এবং সিমেট্রি ফ্লাইট ডেক রয়েছে। বিমানটিতে রয়েছে ২৮ ইঞ্চি বাই ২১ ইঞ্চি আকারের ২০টি ডিম্বাকৃতির জানালা এবং দুটি শৌচাগার।


বিজ্ঞাপন


প্রধান নির্বাহী এবং টুইটারের মালিক ইলন মাস্ক এর আগে যে ব্যক্তিগত বিমানটি ব্যবহার করেছেন, সেটি হলো জি৬৫০ইআর মডেলের। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তিনি এটি কিনেছিলেন।

G650ER
জি৬৫০ইআর মডেলের বিমান

গালফস্ট্রিমের তৈরি জি৬৫০ইআর মডেলের বিমানটি বিশ্বের অনেক ধনকুবেরদের কাছেই জনপ্রিয়। ২০১৫ সালে এই জেটটি তৈরি কেরে গালফস্ট্রিম। ২০১৬ ইলন মাস্ক নিজের ব্যবহারের জন্য একটি কেনেন। যদিও এটিই মাস্কের কেনা প্রথম বিমান নয়। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ২০০৪ সালে তিনি ডাসল্ট ফ্যালকন ৯০০বি মডেলের একটি বিমান কিনেছিলেন।

অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সংগ্রহেও গালফস্ট্রিম জি৬৫০ইআর মডেলের বিমান আছে।

এক স্বাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, তিনি নিজের ভোগ-বিলাসিতার জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেন না। কিন্তু এই বিমানটি তার মিতব্যয়ী জীবনযাপনের একমাত্র ব্যতিক্রম। মাস্ক জানান, তার কোনো প্রমোদতরী নেই, নিজের কোনো বাড়ি নেই এমনকি তিনি ছুটি কাটাতেও কোথাও যান না।

তিনি বলেন, 'একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে এই বিমানটা। কিন্তু যদি বিমানটা ব্যবহার না করি, তাহলে আমার কাজের সময় কমে যেত।'

ব্যক্তিগত বিমান থাকায় তিনি যখন যেখানে ইচ্ছা, সঙ্গে সঙ্গেই যেতে পারেন। এজন্য বাড়তি আনুষ্ঠানিকতা ও অপেক্ষার প্রয়োজন হয় না। ফলে তিনি আরও বেশি সময় কাজ করতে পারেন। বিমানটির দাম ৬.৬৫ কোটি মার্কিন ডলার থেকে শুরু। এর পরিচালন ব্যয়ও কোটি কোটি ডলার।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, শুধু ২০১৮ সালেই বিমানটির পেছনে মাস্কের খরচ হয়েছে ৭ লাখ ডলার। সে বছর যুক্তরষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিলেন মাস্ক।

 

ওয়াশিংটন পোস্টের ওই খবরে বলা হয়, মাস্ক ও তার পরিবার 'বিনোদনমূলক ভ্রমণের' জন্য বিমানটি ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে সাবেক বাড়িতে যাওয়া আসার জন্যও বিমানটি ব্যবহার করেন মাস্ক। ২০১৮ সালে মাস্ক বিমানটি দিয়ে ২৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন এবং মোট দেড় লাখ মাইল দূরত্ব পাড়ি দিয়েছেন।

এই বিমানটির পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। উড্ডয়নকালে প্রতি ঘণ্টায় বিমানটির পেছনে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৬৬২ মার্কিন ডলার। ১৯ সিটের বিমানটিতে খাবার ও পানীয় তৈরির ব্যবস্থা আছে।

৯৯ ফুট দীর্ঘ বিমানটির অন্দর সজ্জা করা হয়েছে আলাদাভাবে, মাস্কের রুচি ও চাহিদা অনুসারে। বিমানে দুটি সংরক্ষাণাগার, একটি মাইক্রোওয়েভ, একটি কনভেকশান ওভেন আছে। বিমানের বিভিন্ন অংশকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় একটি টাচস্ক্রিনের সাহায্যে। বিমানটির ৪ জায়গায় আসন বসানো হয়েছে। প্রধান কেবিনে ১০টি আসন ও ১টি সোফা বসানো হয়েছে।

বিমানের অন্দরসজ্জায় চামড়া ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। মোট ১৬টি জানালা রয়েছে মাস্কের বিমানে। গালফস্ট্রিমের তথ্য অনুসারে, এত বড় জানালা পুরো অ্যাভিয়েশন শিল্পেই নেই।

বিমানের প্রতিটি আসনের সঙ্গে আরামে পা রাখার জায়গা আছে। আসনগুলোকে চাইলে ডানে-বামে ঘোরানো যায় এবং প্রয়োজনমতো বিছানায় রূপান্ত করা যায়। মেইন কেবিনে দুটি টিভি স্ক্রিন আছে। মেইন কেবিনের পেছনেই আছে ভিআইপি কেবিন। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য এই কেবিনে স্লাইডিং দরজার ব্যবস্থা আছে। ভিআইপি কেবিনে আছে টিভি দেখার ব্যবস্থাও।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, ফরচুন ও ইয়াহু নিউজ

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর