স্পেনের এক লুপ্তপ্রায় গ্রামের মানুষ বহির্বিশ্বের নজর আকর্ষণ করতে এক অভিনব পথ বেছে নিয়েছেন। ক্যালেন্ডারের জন্য ক্যামেরার সামনে নগ্ন অবস্থায় হাজির হয়েছেন তারা। ইতিবাচক সাড়া পেয়ে পরের বছরও সেই কাজ করতে চান গ্রামবাসীরা।
খুয়ানখো পেরেসের মতো গ্রামের অনেকেই জামাকাপড় খুলেছেন। ৬৮ বছর বয়সি মানুষটি আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। এক বছর আগে সেই জায়গায় গ্রামের প্রায় সব মানুষ বিবস্ত্র হয়ে ছবি তুলিয়েছিলেন। খুয়ানখো বলেন, 'অংশ না নিয়ে পারিনি। ওরা বলল, মানুষ কম পড়ছে। জনসংখ্যা এত কম হওয়ায় অন্য কোনো উপায় ছিল না।'
বিজ্ঞাপন
জায়গাটিতে মাত্র ১৬ জন বাসিন্দা টিকে রয়েছেন। গ্রামটিকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে তারা ক্যালেন্ডারের জন্য নিজেদের নগ্ন ছবি তুলিয়েছিলেন।
স্পেনের রক্ষণশীল দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এমন ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছিল। আন্তোনিয়া পেরেয়াও সেই শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন।সেখানকার মানুষ যে অনেক খোলা মনের অধিকারী ও অগ্রগতির পক্ষে, ৬৪ বছর বয়সি এই নারী তা দেখাতে চান। আন্তোনিয়া বলেন, 'আমাদের ভাবমূর্তি বেশ খারাপ। আমরাও বড় জনপদের মানুষের মতো ইমেজ চাই। আমরাও তো কর দেই। অথচ আমাদের ছোট এই জায়গা যেন কিছুটা অবহেলিত।'
ফটোগ্রাফার দাবিদ কান্তো ও খুয়ানখো রামিরেস গ্রামের বাসিন্দাদের সহজেই বোঝাতে পেরেছিলেন। দাবিদ বলেন, 'গ্রামে মুখে-মুখেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা কী করছে, কত ভালো করছে, মানুষ তা দেখে। এভাবে তারা একে অপরের পথ অনুসরণ করে।'

বিজ্ঞাপন
গ্রামের মেয়রের মথায় নগ্ন ক্যালেন্ডারের আইডিয়া আসে। তিরিশ বছর বয়সি লুসিয়া নিকোলাস গ্রামের অন্যতম তরুণদের মধ্যে পড়েন। তিনি প্রতিবেশীদের এই বিষয়টিকে সাহস হিসেবে দাবি করেন। তিনি মনে করেন, এটা শুধু এক ধরনের মুক্তি নয়। আমরা অনেক বদ্ধমূল ধারণাও ভেঙে দিচ্ছি। শারীরিক কসরত করা মানুষের ছবি তোলা হয়নি। এরা সাধারণ মানুষ। এখানে সবাই নিজেকে নিজের মতো করেই দেখাতে পারে। আমাদের দেখা অন্যান্য নগ্ন ছবির মতো নয়। আমি নিজেও এভাবে ছবি তুলিয়েছি। ফটো দারুণ হয়েছে।'
লুসিয়া ও তার সতীর্থরা এই সব ছবির মাধ্যমে অন্য একটি বার্তাও দিতে চেয়েছেন। গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে সেই অঞ্চলে বালু ও মার্বেল পাথর সংগ্রহ করা হচ্ছে। এককালের সুন্দর গ্রাম আজ পাথর ভাঙার বিকট শব্দ, ধুলা ও নোংরার ভারে আক্রান্ত৷ লুসিয়া বলেন, 'এছাড়াও অনেক সম্পদ রয়েছে। আমাদের একটা সংস্কৃতিও আছে৷ আমরা সেটাই দেখাতে চাই। ওয়াইন সেলার আছে, পাইন গাছ আছে – যেটির বয়স নিশ্চয় আমাদের সবার চেয়ে বেশি। আমাদের আশেপাশের সবকিছুর থেকেও আমাদের নিজস্ব মূল্য রয়েছে। সেটাই আমরা দেখাতে চাই।'
ক্যালেন্ডার স্পেনের সীমানার বাইরেও পরিচিতি পাওয়ায় খুশি কুমড়ো চাষি খুয়ানখো পেরেস। তিনি নিজের সম্পূর্ণ এক নতুন দিক আবিষ্কার করেছেন। খুয়ানখো বলেন, 'আগে কখনো এমনটা না করলেও আমার আর কোনো সঙ্কোচ নেই। পরের বারও অবশ্যই সঙ্গে থাকবো।'
পেনিয়া সাফরা দে আবাখো গ্রামের মানুষ এরই মধ্যে পরের বছরের জন্য নতুন ক্যালেন্ডারের পরিকল্পনা করছেন। তখন গ্রামের আরও মানুষ নগ্ন হতে চান।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
একে

