ভিয়েনা, ওয়াইন এবং অসাধারণ সব দৃশ্য। একশ বছর আগে নিজেদের প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল অস্ট্রিয়া। দেশটিতে দিন দিন ইসলাম ধর্মের মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। চলুন দেশটি সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
অস্ট্রিয়া পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। স্থলবেষ্টিত এই দেশের উত্তরে জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র, পূর্বে স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণে স্লোভেনিয়া ও ইতালি, এবং পশ্চিমে সুইজারল্যান্ড ও লিশ্টেন্ষ্টাইন। অস্ট্রিয়া মূলত আল্পস পর্বতমালার উপরে অবস্থিত। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকা পর্বতময়। এটি ইউরোপের ৬টি রাষ্ট্রের অন্যতম যারা স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করেছে। অস্ট্রিয়া ১৯৫৫ থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।
বিজ্ঞাপন
বার্গেনল্যান্ড থেকে লেক কন্সটান্সের মধ্যকার দেশটির নয়টি রাজ্যে বিভক্ত। অস্ট্রিয়ায় ৮.৮ মিলিয়ন (৮৮ লাখ) মানুষের বাস। দেশটির অধিকাংশ অংশই আসলে পাহাড়ি অঞ্চল। পুরো দেশের মতো পূর্বাঞ্চলের ফোরার্লব্যার্গ রাজ্যও ছবির মতো সুন্দর।
ভিয়েনায় শ্যোনবর্ন প্যালেসের মতো অস্ট্রিয়ান এম্পায়ারের আর কোনো বড় প্রতীক নেই। ১৯১৮ সাল অবধি এটা ছিল হাবর্সবর্গ শাসকদের গ্রীষ্মকালীন আবাস। পরবর্তীতে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করা করে ইউনেস্কো। বর্তমানে বছরে প্রায় ৪০ লাখ পর্যটক এই স্থাপনাটি দেখতে আসেন।
গ্রীষ্মে ভিয়েনার বাসিন্দারা শহরের বাইরে দেশটির সবুজ গ্রামাঞ্চলে ছুটে যান। লোয়ার অস্ট্রিয়ার ভাইনফিয়ার্টেল ওয়াইন উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। অনেকেই এই অঞ্চলে যান সরাসরি ওয়াইন উৎপাদকের কাছ থেকে ওয়াইন পানের আশায়।
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে নিম্নাঞ্চল হচ্ছে বার্গেনল্যান্ড। সেখানে লেখ নয়েসিডলের অবস্থান, যেখানে দুর্লভ সব পাখির দেখা মেলে। এলাকাটি বিশ্বের সবচেয়ে শান্ত ইলেক্ট্রো-পপ উৎসব লেক অব লাভ এর জন্যও বিখ্যাত। সেই উৎসবের সংগীত সবাই একত্রে শুনলেও কানে পৌঁছায় আলাদা আলাদা হেডফোনে।
একসময় লবনের জন্য বিখ্যাত আপার অস্ট্রিয়ার হালস্টাট এখন অধিকাংশ সময় পর্যটকে পূর্ণ থাকে। বিশেষ করে চীনা নববিবাহিতরা কোনও এক বিশেষ কারণে এই এলাকা ভ্রমণে যান।
অস্ট্রিয়া ভ্রমণে গেরে সালৎসবুর্গকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। সালৎসবুর্গের বাৎসরিক উৎসবে অংশ নেন অনেকে। তবে কেউ যদি সেই উৎসবে অংশ নেয়ার সুযোগ না পান তবুও সালৎসবুর্গ ভ্রমন মন্দ হবার কোনও কারণ নেই। এই শহরেই জন্মেছেন প্রখ্যাত সংগীত স্রষ্টা ভল্ফগাং আমাডেয়ুস মোৎসার্ট।
হাইকিংপ্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য অস্ট্রিয়া। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মে হাইকিংয়ের সময় স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঐতিহ্যগত বিষয়াদি জানার আছে। তবে ছবি তুলতে ভালোবাসেন যারা, তারা দয়া করে ক্যামেরার জন্য বাড়তি ব্যাটারি নিতে ভুলবেন না।
অর্থনীতি
অস্ট্রিয়ার অর্থনীতি ব্যবস্থাকে একটি সামাজিক বাজার অর্থনীতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এর গঠন প্রতিবেশী জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মতন। ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪র্থ ধনী দেশ। এখানকার মাথাপিছু স্থুল জাতীয় উৎপাদন প্রায় ২৭ হাজার ৬৬৬ ইউরো। কেবন লুক্সেমবুর্গ, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ড্স এই দিক থেকে অস্ট্রিয়ার চেয়ে এগিয়ে।
ধর্মবিশ্বাস
অস্ট্রিয়াতে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্ম প্রধান। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৭৩.৬% লোক এই ধর্মে বিশ্বাসী। প্রায় ১১.৫% লোক প্রতি রোববারে গির্জায় যান। তবে গির্জায় যাওয়ার পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। লুথেরান খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা ২০০৬ সালে জনসংখ্যার ৪.৭% ছিল; এরা বেশির ভাগই দক্ষিণ অস্ট্রিয়ার কের্নটেন অঙ্গরাজ্যে বাস করে। অস্ট্রিয়াতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে এরা জনসংখ্যার ৪.২%। এছাড়াও অস্ট্রিয়াতে স্বল্পসংখ্যক হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও ইহুদীবাস করেন।
ভাষা
অস্ট্রিয়াতে মূলত জার্মান ভাষার একটি পরিবর্তিত রূপ ব্যবহৃত হয়। এর নাম অস্ট্রীয় জার্মান।
শহর
অস্ট্রিয়ার পাঁচটি প্রধান শহর হল ভিয়েনা, গ্রাৎস, লিন্ৎস, জাল্ৎসবুর্গ এবং ইন্সব্রুক।
ভিয়েনা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি অস্ট্রিয়ার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। শহরটি দানিউব নদীর দুই তীরে অবস্থিত। এর শহরতলীগুলো পশ্চিমে বিখ্যাত ভিয়েনা অরণ্য পর্যন্ত চলে গেছে। ভিয়েনা ইউরোপের সবচেয়ে রাজকীয় শহরগুলোর একটি। এখানে অনেক জমকালো বাসভবন, রাজপ্রাসাদ, পার্ক ও গির্জা আছে। শহরের জনসংখ্যা ১৬ লাখের বেশি।
সূত্র: ডয়চে ভেলে ও উইকিপিডিয়া
একে