শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

পুতিনের ভয়ংকর একদিন, অবশেষে স্বস্তির ভোর

আবুল কাশেম
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:২৪ এএম

শেয়ার করুন:

পুতিনের ভয়ংকর একদিন, অবশেষে স্বস্তির ভোর
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন

দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতায় রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। দিন দিন বেড়েছে সেই ক্ষমতা। রাজনৈতিক জীবনে বহু বাধা আর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়েছে তাকে। সেসব উৎরেই এই পর্যন্ত এসেছেন তিনি। ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকে নানা সংকট তাকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। তবে সেই পরিস্থিতি হঠাৎ করে কালবৈশাখীতে রুপ নেয় বেসরকারি আধা-সামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ।

ভয়ংকর এক দিন পার করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন পুতিনকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করে এত বড় হুমকিতে এর আগে ফেলতে পারেনি কেউ। তবে এই যাত্রায় ‘বেঁচে’ গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।


বিজ্ঞাপন


ইউক্রেনে সম্মুখসারিতে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে ওয়াগনার বাহিনী। এই পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়া যেসব অঞ্চল দখল করেছে তাতে বড় অবদান রয়েছে ওয়াগনার গ্রুপের। পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুতে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এই বাহিনী। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই অস্ত্র সরবরাহে ঘাটতির অভিযোগ তুলে রাশিয়ার সামরিক নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন।

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সামরিক প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন প্রিগোজিন। বারবার তিনি রাশিয়ার সামরিক নেতাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হন। কয়েকদিন আগে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করারও হুঁশিয়ারি দেন ওয়াগনার প্রধান। প্রিগোজিনের অভিযোগ, ইউক্রেনে বিপুল সংখ্যক ওয়াগনার সেনা নিহতের পেছনে শোইগুর অদক্ষতা দায়ী।

এরই মধ্যে গত শুক্রবার প্রিগোজিন অভিযোগ করেন, ইউক্রেনে ওয়াগনার যোদ্ধাদের ওপর রকেট হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু। এতে ওয়াগনার বাহিনীর অনেক যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। একে ‘প্রতারণা’ আখ্যায়িত করে তিনি রুশ সামরিক নেতাদের উৎখাতের হুমকি দেন।


বিজ্ঞাপন


এরপর শনিবার সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ওয়াগনার বস প্রিগোজিন। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মস্কো অভিমুখে যাত্রা করেন তিনি। যাত্রাপথে রাশিয়ার কয়েকটি শহর ও সামরিক স্থাপনার দখলও নেন। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রোস্তভ-অন-ডনের সামরিক সদর দফতর দখল করে ওয়াগনার বাহিনী। মূলত এই ঘাঁটি থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনা করে রাশিয়া।

putin wagner
একসময় পুতিনের বাবুর্চি হিসেবে পরিচিতি ছিল প্রিগোজিনের- ফাইল ফটো

পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে। গোটা বিশ্বের নজর চলে যায় রাশিয়ার দিকে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানায় পশ্চিমারা। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন পুতিন। সেখানে তিনি বিদ্রোহীদের রাষ্ট্রদ্রোহী বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যারা রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছিল তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

জরুরি টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেন, ‘তিনি রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য সবকিছু করবেন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-ডনের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

শনিবার দিনভর ব্যাপক উত্তেজনাপূর্ণ কাটে রুশদের মধ্যে। অবস্থা বেগতিক দেখে রোববার মস্কোয় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন মেয়র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, ক্রেমলিন থেকে অন্য কোথাও পাড়ি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। যদিও প্রেসিডেন্টের দফতর সেই দাবি অস্বীকার করে। বিবৃতিতে জানানো হয়, পুতিন ক্রেমলিনেই আছেন এবং তিনি তার কাজ করছেন।

দিনভর অগ্রসরের পর যখন মস্কো আর ১২০ মাইল দূরে, তখন যাত্রা বাতিল করেন প্রিগোজিন। এক ভিডিওবার্তায় তিনি দাবি করেন, রুশদের রক্তপাত এড়াতে তিনি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি তার সেনাদের, ফিল্ড ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দখল করা রোস্তভ-অন-ডন ছেড়েছে ওয়াগনার বাহিনী।

অপরদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো প্রিগোজিনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। চুক্তি অনুসারে, বিদ্রোহের কারণে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে যেসব ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছিল সেগুলো তুলে নেওয়া হবে।

পেসকভ বলেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের চুক্তি হবে। এর ফলে শনিবারের বিদ্রোহের কারণে তাদের কোনো সাজা হবে না। ওয়াগনার যোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য তাদের প্রতি ক্রেমলিনের সব সময়ই শ্রদ্ধা রয়েছে।

বেলারুশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রিগোজিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন লুকাশেঙ্কো। পুতিনের সম্মতিতেই এ আলোচনা হয়েছে। লুকাশেঙ্কা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বিনিময়ে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, বেলারুশে চলে যাবেন ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান। এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবি জানিয়েছেন প্রিগোজিন। তবে ক্রেমলিন তার দাবিতে সাড়া দিয়েছে কিনা তা বলেননি তিনি।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ইউক্রেন যুদ্ধেও একে অপরের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই দেশ। এরই মধ্যে পশ্চিমাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া।

ওয়াগনার বাহিনীর সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানো ও ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার ঘটনায় আপাত স্বস্তি পেতেই পারেন ভ্লাদিমির পুতিন। হঠাৎ করে আসা কালবৈশাখী ঝড়ের মতো হঠাৎ করেই বিদায় নিয়েছে বিপদ। তবে সেই ঝড়ে প্রকাশ্য বড় কোনও ক্ষতি না হলেও কংক্রিট স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকা পুতিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা আবারও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি নিয়েও। এক্ষেত্রে ওয়াগনার বাহিনীর ভূমিকা কী থাকবে সেটিও এখনও স্পষ্ট নয়।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর