অধিকৃত পশ্চিম তীরে আরও হাজার হাজর বসতি বানানোর পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল। নতুন আবাসন ইউনিটের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে সেখানকার কট্টরপন্থী জোট সরকার। অবৈধ বসতি নির্মাণ ত্বরান্বিত করার জন্য অতি-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রীকে সুইপিং ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, পুরো পশ্চিম তীর শিগগিরই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা এই পদক্ষেপের অনুমোদন করেছে। তিনি অবৈধ বসতি স্থাপনের কট্টর সমর্থক অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচকে বসতি নির্মাণের জন্য ছয়-পর্যায়ের প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়।
বিজ্ঞাপন
২৭ বছর ধরে বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে যে ছয় ধাপের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসা হচ্ছিল এখন থেকে সেটি উপেক্ষা করা যাবে।
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর স্মোট্রিচ বলেন, 'আমরা বসতি স্থাপন প্রকল্পের বিকাশ অব্যাহত রাখব এবং ভূখণ্ডে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ জোরদার করব।'
পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় ৪,৫৬০টি হাউজিং ইউনিটের অনুমোদনের পরিকল্পনাগুলো ইসরায়েলের সুপ্রিম প্ল্যানিং কাউন্সিলের এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত ছিল, এই কাউন্সিল আগামী সপ্তাহে বৈঠক করবে।
বিভিন্ন গোষ্ঠী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, এর মাধ্যমে পুরো পশ্চিম তীর শিগগিরই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বসতি স্থাপন কার্যক্রম অনুমোদন করা একটি 'পশ্চিম তীরের সংযোজন সম্পূর্ণ করার জন্য বিপজ্জনক বৃদ্ধি'।
২০০৭ সাল থেকে অবরুদ্ধ গাজা শাসন করা হামাস বলছে, এই পদক্ষেপ এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। অন্যদিকে ফাতাহ সতর্কতা প্রকাশ করে বলেছে যে, গাজা উপত্যকায় বসতি স্থাপনকারীদেরকে পশ্চিম তীর থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তারা সোমবার ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক কমিটির বৈঠক বয়কট করবে।
ইসরায়েলের কট্টরপন্থী সরকার (যার মধ্যে রয়েছে অতি-অর্থোডক্স দল এবং একটি অতি-ডান অতি-জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় উপদল) অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকে তার অগ্রাধিকারের শীর্ষে রেখেছিল।
নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি ইসরায়েলের ভূমির সমস্ত অংশে (গ্যালিলি, নেগেভ, গোলান হাইটস এবং জুডিয়া এবং সামারিয়ায়) অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাইবেলের নামগুলোতে বসতি স্থাপনের অগ্রগতি ও বিকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বসতি স্থাপনের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা। তারা বলছে যে, বসতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এবং অনুমোদনের প্রক্রিয়ার পরিবর্তন গভীর উদ্বেগের।
মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এমন একতরফা পদক্ষেপের বিরোধিতা করে যা, একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ আরও কঠিন করে তোলে এবং শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা ইসরায়েল সরকারকে আকাবা, জর্ডান এবং শারম এল শেখ, মিশরে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করার এবং উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে সংলাপে ফিরে আসার আহ্বান জানাই।'
জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নেতানিয়াহুর জোট সাত হাজারটি নতুন আবাসন ইউনিট অনুমোদন করেছে। এর অনেকগুলো দখলকৃত পশ্চিম তীরে। পূর্বে উচ্ছেদ হওয়া চারটি বসতিতে বসতি স্থাপনকারীদের ফিরে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করার জন্য সেখানকার সরকার একটি আইন সংশোধন করেছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২৫০টি অবৈধ বসতিতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ ইসরায়েলি বাস করে। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের দখলকৃত জমিতে এসব বসতি স্থাপন করা হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
একে