২০২২ সালে পর্তুগালে বৈধতা পেয়েছেন ১৭ হাজার ১৬৯ জন বাংলাদেশি, যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ৬৪ শতাংশ বেশি। সেখানে বৈধতা প্রাপ্তিতে শীর্ষে রয়েছে ভারত ও নেপালের নাগরিক। দেশটির ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার সার্ভিস (এসইএফ) এইসব তথ্য জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা দ্রুত বৈধতা পেতে ইউরোপের দেশ পর্তুগালকে বেছে নিচ্ছেন। কারণ, নির্দিষ্ট কাজের চুক্তির শর্ত পূরণ করে কয়েক বছরের মধ্যে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ আছে দেশটিতে। ফলে ইউরোপের অনিয়মিত অভিবাসীরা পাড়ি জমাচ্ছেন দেশটিতে।
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কম বেতন ও দীর্ঘ প্রশাসনিক জটিলতা, আবাসন সংকট ইত্যাদি কারণে অনেক বছর ধরেও বৈধতার অপেক্ষায় আছেন হাজারো অভিবাসী। তাই প্রশাসনিক জটিলতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে লিসবন কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি তারা জানিয়েছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে বৈধ হতে যারা আবেদন করেছেন, তাদের দীর্ঘ জট ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করা হবে।
এই উদ্যোগের আওতায় প্রায় তিন লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বৈধতা দিতে চায় পর্তুগাল সরকার। অনেকেই এটিকে গণ বৈধতা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে এটি ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে সব শর্ত পূরণ করে যারা আবেদন করেছেন তাদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির অংশ বলে নিশ্চিত করেছে পর্তুগালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার সার্ভিস (এসইএফ)।
বিজ্ঞাপন
সেফ নামে পরিচিত পর্তুগিজ সরকারের এই দফতরটি আরও জানিয়েছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার সার্ভিস অন্যান্য সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ২০২২ সালে প্রবর্তিত আইনি পরিবর্তনগুলো মেনে চলার উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকার বিদেশি নাগরিকদের রেসিডেন্স পারমিট প্রক্রিয়া নিয়ে একটি নতুন মডেলও তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

দক্ষিণ এশিয়া থেকে ৮৬ হাজারেরও বেশি অভিবাসী বৈধতা পেয়ছেন
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার সার্ভিস জানিয়েছে, ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বৈধতা প্রাপ্তির দিক থেকে শীর্ষে আছেন ভারতীয়রা। গত বছর পর্তুগালে ৩৪ হাজার ২৩২ জন ভারতীয় অভিবাসী অনিয়মিত থেকে নিয়মিত হয়েছেন। ২০২১ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৩০ হাজার ২৫১ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট এক লাখ ১৮ হাজার ১৩৬ জন ভারতীয় অভিবাসী পর্তুগালে বৈধতা পেয়েছেন।
নেপাল তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০২২ সালে নেপালের ২৩ হাজার ৪৪১ জন নাগরিক নিয়মিত হয়েছেন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ বেশি।
তালিকার তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশিরা। গত বছর ১৭ হাজার ১৬৯ জন বাংলাদেশি বৈধ অভিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬৪ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২১ সালে ১০ হাজার ৯৩৪ জন বাংলাদেশি পর্তুগালে বৈধতা পান।
পাকিস্তানিরা রয়েছেন তালিকার চতুর্থ অবস্থানে। দেশটির ১১ হাজার ৩৮৫ জন অভিবাসী গত বছর বৈধতা পেয়েছেন, যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ৬৬ শতাংশ বেশি।
এদিকে সঙ্কটে থাকা শ্রীলঙ্কার ১৩৪ জন নাগরিক গত বছর বৈধ অভিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় যা অনেক কম।
যেভাবে বৈধতা পাবেন অভিবাসীরা
সরকারের নতুন মডেল অনুযায়ী, আটকে থাকা অভিবাসীরা দুটি ধাপে নিয়মিত হবেন।
প্রথমত, আটকে থাকা অভিবাসীদের অনলাইনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করবেন। এক্ষেত্রে তাদেরকে সেফ থেকে নির্দিষ্ট তারিখের ব্যাপারে আগেই জানানো হবে। আগে এজন্য অভিবাসীদের সরাসরি সেফ কার্যালয়ে যেতে হতো।
প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ হলে দ্বিতীয় ধাপে অভিবাসীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সরাসরি পরিষেবা ডেস্কে যেতে হবে। নতুন মডেল অনুযায়ী, বৃহত্তর অঞ্চলের পরিষেবা ডেস্কগুলো একটি বড় কেন্দ্রে স্থাপিত হবে। যেখানে অভিবাসীরা আগের চেয়ে বেশি সময় ধরে সেবা নিতে পারবেন।
সেফ জানিয়েছে, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্তুগিজ ভাষাভাষী অভিবাসীদের আরও দ্রুত ও সহজ উপায়ে রেসিডেন্স পারমিট দিতে একটি দ্রুত ও সহজ পদ্ধতি স্থাপন করা হবে। দীর্ঘ জটিলতার কারণে এই খাতেও প্রচুর জট দেখা দিয়েছে।
এই মডেলের সাহায্যে করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তীব্র হয়ে ওঠা জটিলতা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছে সংস্থাটি।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
এমএইচটি