গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। এশিয়ার অন্যতম দেশ। দেশটি অর্থনীতিতে যেমন শক্তিশালী তেমনি শিক্ষা, সংস্কৃতিতেও। আর তাইতো প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে পাড়ি জমান। এর মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরও আছেন। মূলত কম খরচে পড়াশোনা এবং দ্রুততম সময়ে শিক্ষাকার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য চীনের সুনাম রয়েছে। চলুন, চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
কেন চীন উচ্চশিক্ষার অন্যতম সেরা গন্তব্য
বিজ্ঞাপন
সভ্যতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ চীন। আর্থ-সামাজিক দিক থেকেও দেশটিতে জীবনধারণের মান এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে অনেকটা উন্নত। দেশটির অপরাধ সূচক ২৪ দশমিক ৪ এবং শান্তি সূচক ২ দশমিক ১০১।
গোটা এশিয়ায় স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ পিকিং ইউনিভার্সিটি ওয়ার্ল্ড কিউএস র্যাংকিং-এ ১৭ নম্বরে রয়েছে। সিংহুয়া ইউনিভার্সিটির অবস্থান ২৫ এবং ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি রয়েছে ৪৪ নম্বরে। ৫০তম স্থানে আছে ফুডান ইউনিভার্সিটি আর তার পরেরটি সাংহাই জিয়াও টং ইউনিভার্সিটি।
চীনে উচ্চশিক্ষায় আবেদনের পূর্বশর্ত
স্নাতকে ভর্তির জন্য ডিপ্লোমা, উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের সনদধারী হতে হবে। স্নাতকোত্তরের জন্য লাগবে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি। অপরদিকে স্নাতকোত্তর শেষ করে আবেদন করা যাবে পিএইচডির জন্য।
বিজ্ঞাপন
এমবিএর জন্য স্নাতকের পাশাপাশি দরকার হবে দুই বছর বা তার বেশি কাজের অভিজ্ঞতা।
অতিরিক্ত সংযুক্তি হিসেবে জিম্যাট বা জিআরই স্কোরের প্রয়োজন হতে পারে। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রবেশিকা পরীক্ষা বা অনলাইন সাক্ষাৎকার নিতে পারে।
ইংরেজি ভাষা যোগ্যতার জন্য আইইএলটিএস একাডেমিক বা টোফেল আইবিটি আবশ্যক।
চীনের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাহিদাসম্পন্ন কোর্সের তালিকা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে চীনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বাধিক বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে, সেগুলো হলো-
· পিকিং ইউনিভার্সিটি
· সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়
· ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি
· ফুডান ইউনিভার্সিটি
· সাংহাই জিয়াও টং ইউনিভার্সিটি
· সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি
· ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়না
· নানজিং ইউনিভার্সিটি
· সিচুয়ান ইউনিভার্সিটি
· হুয়াজং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর বা মাস্টার্স নির্বিশেষে সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো হলো-
· আর্কিটেকচার
· কম্পিউটার সায়েন্স
· ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
· মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
· হিউম্যানেটিস
· সোশ্যাল সায়েন্স
· ন্যাচারাল সায়েন্স
· মেডিসিন
· ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স
· কেমিস্ট্রি
· বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
· ফাইন্যান্স
চীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
সাধারণত প্রতি বছর দুটি মৌসুমে ভর্তি নেওয়া হয়ে থাকে চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি হলো মার্চে, যার সময় শেষ হয় পরের বছরের সেপ্টেম্বরে। আর দ্বিতীয়টি হলো সেপ্টেম্বর, যার সময়সীমা থাকে পরের বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত। সেপ্টেম্বরের সময়টিতে মার্চের তুলনায় বেশি কোর্স এবং স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ থাকে।
সাধারণত দুটি উপায়ে ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। একটি হলো সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পোর্টালে বা ই-মেইলের মাধ্যমে। আরেকটি হলো সিইউসিএএসের (ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ অ্যাডমিশন সিস্টেম অব চীন) ওয়েবসাইটের (https://cucas.cn/) মাধ্যমে।
সিইউসিএএস প্ল্যাটফর্মটি মূলত শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এটি কেবল আবেদন-ই নেয় না, বরং কোর্স ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি আপলোড, আবেদন ফি প্রদান, আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানা ও জে ডব্লিউ ২০২ ফরম প্রাপ্তি সবই করা যায় এই পোর্টালে।
জে ডব্লিউ ২০২ ফরম
যে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ১৮০ দিনের বেশি সময় নিয়ে চীনে পড়তে আসেন, তাদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই ফরম জারি করা হয়। এর আওতাভুক্ত প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে ফুল-টাইম ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি প্রোগ্রাম এবং এক বছরের ভিজিটিং বা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় রিসার্চ স্কলারশিপ, বছরে মিলবে ৩৬০০০ ডলার
ভর্তির আবেদন অনুমোদিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পোর্টাল থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে জে ডব্লিউ ২০২ ফরম পাঠানো হয় প্রার্থীকে। এটি প্রিন্ট করে পরবর্তী ভিসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা যায়।
এখানে উল্লেখ্য যে, ফরম প্রাপ্তির পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য অবশ্যই ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করা আবশ্যক। স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট দিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পাদন করা যাবে না।
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· উচ্চ মাধ্যমিক বা ডিপ্লোমা অথবা সমমানের পরীক্ষা সনদ ও মার্কশিট (স্নাতকের জন্য)
· স্নাতক সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট (স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির জন্য)
· বৈধ পাসপোর্টের ফটোকপি
· পাসপোর্ট সাইজের ছবি
· ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ (আইইএলটিএস একাডেমিক বা টোফেল আইবিটি স্কোর)
· ২ রিকমেন্ডেশন লেটার (স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির জন্য)
· গ্যারান্টি লেটার (শিক্ষার্থীর পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সই করা একটি ঘোষণাপত্র যেখানে উল্লেখ থাকবে যে তিনি/তারা শিক্ষার্থীর চীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ও প্রবিধান মেনে চলার দায়িত্ব নিয়েছেন)
· গবেষণা প্রস্তাব (পিএইচডির জন্য)
· ভর্তি ফি পরিশোধের রশিদ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেদে ফি সাধারণত ৮০ থেকে ১৫০ মার্কিন ডলারের মধ্যে হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় এটি প্রায় ৯ হাজার ৩৯৯ (১ মার্কিন ডলার = ১১৭ দশমিক ৪৮ বাংলাদেশি টাকা) থেকে ১৭ হাজার ৬২৩ টাকার সমতূল্য।
চীনের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদনের উপায়
স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির মতো জন্য দীর্ঘমেয়াদী স্টাডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে চীনের এক্স-১ ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। এই ভিসার মাধ্যমে ৬ মাস বা ১৮০ দিনের বেশি চীনে বসবাসের জন্য অনুমতি পাওয়া যায়।
চীনে প্রবেশের নির্ধারিত তারিখের ন্যূনতম ১ মাস আগে থেকে এই ভিসার জন্য আবেদন করা উচিত। তবে ৩ মাস থেকে আগে থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা ঠিক নয়। কেননা এই ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে চীনে প্রবেশের মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ৩ মাস (কর্মদিবস গণনার সাপেক্ষে)। সেক্ষেত্রে খুব আগে আবেদন করার পরেও দেশ ত্যাগের আগেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। যেমন, উদ্দেশ্য যদি হয় পহেলা অক্টোবর চীনে প্রবেশ করা, তাহলে ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার সর্বোত্তম সময় হবে পহেলা সেপ্টেম্বরের কাছাকাছি কোনো সময়ে।
এক্স-১ ভিসার আবেদন করতে হবে সম্পূর্ণ অনলাইনে। এর জন্য চীনা ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইট www.visaforchina.cn-এ যেয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পুরো অনলাইন আবেদনটি সম্পন্ন করতে হবে।
পরিশেষে ‘পাসপোর্ট টু বি সাবমিটেড’ স্ট্যাটাস প্রদর্শন করলে আবেদনপত্রের প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠাটির একটা প্রিন্ট নিতে হবে। শেষ পৃষ্ঠায় আবেদনকারী স্বহস্তে তারিখসহ সই করবেন।
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ভিসা আবেদন কেন্দ্রে সাক্ষাৎকারের সময় সই করা আবেদনপত্রের সাথে যে নথিগুলো নিয়ে যেতে হবে, সেগুলো হলো-
· পাসপোর্ট (দুইটি খালি পৃষ্ঠাসহ চীনে পৌঁছার দিন থেকে ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদ সম্পন্ন)
· সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে সদ্য তোলা রঙিন ছবি। (আকার ৪৮/৩৩ মিলিমিটার)
· চীনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অফার লেটার
· ফর্ম জে ডব্লিউ ২০২
· স্কলারশিপ বা স্পন্সরশিপ পেয়ে থাকলে তার প্রমাণপত্র। এখানে ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে, চীনে পড়াশোনার জন্য কমপক্ষে প্রথম বছরের তহবিল আছে। সংখ্যায় এটি ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭১২ টাকা।
· পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ
· ভর্তির আবেদনের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার যে সনদগুলো দেয়া হয়েছিল সেগুলো এক কপি
· ব্যক্তিগত বিবৃতি বা অধ্যয়ন পরিকল্পনা
প্রতিটি নথির ফটোকপির সাথে তার মূলকপিগুলো সঙ্গে নিতে হবে। কোনো নথি বাংলায় হলে তা ইংরেজিতে নোটারাইজ করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন, পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
সাক্ষাৎকার ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন
আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে চলে যেতে হবে ঢাকাস্থ চীনা ভিসা আবেদন কেন্দ্রে। আসার আগে ভিসা ফর চায়না পোর্টালের অ্যাকাউন্টটিতে ‘পাসপোর্ট টু বি সাবমিটেড’ স্ট্যাটাস দেখাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নেওয়া জরুরি।
চীনা ভিসা আবেদন কেন্দ্রের ঠিকানা:
৩য় তলা, প্রসাদ ট্রেড সেন্টার, ৬ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা
সাধারণত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত নথি জমা নেওয়া হয়। এ সময় সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি প্রার্থীর আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি তোলা হয়। অতঃপর যাবতীয় কাজ শেষে আবেদনকারীকে একটি পিকআপ ফর্ম দেওয়া হবে। ভিসার সিলসহ পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় অবশ্যই এই ফর্মটি দেখাতে হবে। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভিসা সরবরাহ করা হয়।
চীনে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি ও মেয়াদ
সাক্ষাৎকারের দিন আবেদনকারীকে ভিসা কেন্দ্রের পরিষেবা ফিসহ ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি নগদ দিতে হবে।
চীনে সিঙ্গেল এন্ট্রির জন্য রেগুলার ভিসা ফি ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং পরিষেবা ফি ৪ হাজার ৫০ টাকা। সর্বমোট ৬ হাজার ৪৫০ টাকা এবং এই খরচে প্রক্রিয়াকরণে সময় লাগে ৪ কার্যদিবস।
৩ কার্যদিবসের মধ্যে ভিসা পেতে হলে ভিসা ফি বাবদ খরচ ৫ হাজার ১০০ টাকা এবং পরিষেবা ফি ৬ হাজার ৭০ টাকা; মোট ১১ হাজার ১৭০ টাকা।
ডাবল এন্ট্রিসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের স্টুডেন্ট ভিসার ফি এই লিংকে পাওয়া যাবে-
https://bio.visaforchina.cn/DAC3_EN/qianzhengyewu/jichuzhishi/feiyongbiaozhunjishixian
চীনে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাচেলর প্রোগ্রামে গড়পড়তায় খরচ হয় বছরে ২০ থেকে ৪০ হাজার ইউওয়ান। এটি প্রায় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৭০৩ (১ ইউওয়ান = ১৬ দশমিক ৪৪ টাকা) থেকে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪০৫ টাকার সমান। মাস্টার্স কোর্সগুলোর সাধারণ ফি বছরে ৩০ থেকে ৫০ হাজার ইউওয়ান, যা প্রায় ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫৪ থেকে ৮ লাখ ২১ হাজার ৭৫৬ টাকার সমান।
আবেদন ফি বাবদ খরচ হতে পারে গড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ ইউওয়ান (প্রায় ৯ হাজার ৮৬১ থেকে ১৩ হাজার ১৪৮ টাকা)।
জীবনযাত্রার ব্যয়ের দিক থেকে বেইজিং, সাংহাই ও গুয়াংজুর মতো শহরগুলো বেশ ব্যয়বহুল। সেখানে চেংডু, জিয়ান এবং হারবিনের মতো শহরগুলো বেশ সাশ্রয়ী। সব মিলিয়ে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ভাড়াসহ খরচ পড়তে পারে মাসে ৪ থেকে ৮ হাজার ৫০০ ইউওয়ান (প্রায় ৬৫ হাজার ৭৪১ থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ টাকা)।
চীনে স্কলারশিপের সুবিধা
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রাকে সহজলভ্য করতে চীনে রয়েছে বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এর মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (সিজিএস) পরিচালিত হয় চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল; সব ধরনের প্রোগ্রামকে উদ্দেশ্য করেই এর প্রকল্পগুলো চালু হয়। এগুলোর মধ্যে টিউশন, বাসস্থান, জীবনযাত্রার খরচ এবং চিকিৎসা বীমা মিলিয়ে বছরে ৩০ হাজার ইউওয়ান পাওয়া যায়।
এই সিজিএসগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- চীনা ও অন্যান্য দেশের সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বা আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে চুক্তির অধীনে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বাইলেটারাল প্রোগ্রাম। ইউনেস্কোর স্পন্সরে উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে গ্রেট ওয়াল প্রোগ্রাম। এইউএন প্রোগ্রাম আসিয়ানভুক্ত (এএসইএএন) দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের চীনে পড়াশোনার খরচ বহন করে।
এছাড়াও অনেক চীনা বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে বৃত্তি দিয়ে থাকে। যেমন- সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ সম্পূর্ণ টিউশন ফিসহ মাসে ৩ হাজার ইউওয়ান (প্রায় ৪৯ হাজার ৩০৬ টাকা) দেয়। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তিতে রয়েছে সম্পূর্ণ অধ্যয়ন খরচসহ মাসে ২ হাজার ইউওয়ান (প্রায় ৩২ হাজার ৮৭১ টাকা)। ফুদান ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস স্কলারশিপে পুরো অধ্যয়ন খরচের পাশাপাশি রয়েছে প্রতি মাসে ২ হাজার ৫০০ ইউওয়ানের উপবৃত্তি। এটি প্রায় ৪১ হাজার ৮৮ টাকার সমতূল্য। ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি অধ্যয়নকালীন পূর্ণ খরচসহ প্রতি মাসে ২ হাজার ২০০ ইউওয়ান (প্রায় ৩৬ হাজার ১৫৮ টাকা) করে উপবৃত্তি দেয়।
চীনে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার আর্থিক ব্যবস্থাপনা
অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টা করে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে পারে। এই খণ্ডকালীন চাকরিগুলোতে গড়ে ঘণ্টা প্রতি আয় হয় ১০ থেকে ৫০ ইউওয়ান (প্রায় ১৬৫ থেকে ৮২২ টাকা)। এই মজুরি প্রতি মাসে গড়ে ১ থেকে ৫ হাজার ইউওয়ান (প্রায় ১৬ হাজার ৪৩৫ থেকে ৮২ হাজার ১৭৬ টাকা) পর্যন্ত হয়।
অবশ্য এভাবে কাজ করার জন্য শিক্ষার্থীদের বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পাশাপাশি তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাজের অনুমতি নিতে হয়।
এই চাকরি ছাড়াও নিত্য নৈমিত্তিক জীবনযাত্রার খরচ বাঁচাতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারে। যেমন- সাশ্রয়ী মূল্যের খাবারের দোকানগুলো প্রতিদিনের খাবার খরচ অনেকটা কমাতে পারে।
তাছাড়া ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে ১০ ইউওয়ানের (প্রায় ১৬৫ টাকা) মধ্যেই ভরপেট খাওয়া যায়।
ফোনের বিল বাঁচানোর জন্য চায়না মোবাইল এবং চায়না ইউনিকমের মতো কোম্পানিগুলোর চার্জ যথেষ্ট বাজেট-বান্ধব। প্রতি মাসে এগুলোর বেসিক প্যাকেজ শুরু হয় প্রায় ৫০ ইউওয়ান (প্রায় ৮২২ টাকা) থেকে।
স্বল্প খরচে যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হচ্ছে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা। বাস ও মেট্রোর মাসিক পাসের মূল্য সাধারণত প্রায় ১০০ ইউওয়ান (প্রায় ১৬৪৪ টাকা)।
চীনে পড়াশোনার পর চাকরি লাভ ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
চীনে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিকে বলা হয় ডি টাইপ ভিসা। এ ভিসায় ১৮ বছরের কম বয়সিরা ৫ বছর এবং প্রাপ্তবয়স্করা ১০ বছর চীনে বসবাসের অনুমতি পায়। এই পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন প্রক্রিয়ায় খরচ হবে ১ হাজার ৮০০ ইউওয়ান (প্রায় ২৯ হাজার ৫৮৪ টাকা)। এছাড়াও এর জন্য কিছু শর্ত রয়েছেঃ
· প্রার্থীকে ওয়ার্ক পারমিট থাকা অবস্থায় ন্যূনতম ৪ থেকে ৫ বছর চীনে থাকতে হবে এবং তাকে অবশ্যই একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী হতে হবে।
· প্রার্থীকে তার কাজের মাধ্যমে চীনের যে কোনো সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে হবে।
· উপরন্তু, বছরে একটানা অন্তত ৯ মাস চীনের বাইরে যাওয়া যাবে না।
আরো পড়ুন: চাকরির জন্য সিভি তৈরিতে যে বিষয়গুলো পরিহার করবেন
ওয়ার্ক পারমিটের প্রথম শর্ত হলো একটি চাকরি যোগাড় করা বা নিজের ব্যবসা শুরু করা। এই শর্ত পূরণের সময়ের জন্য অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারে। এর জন্য মেয়াদ শেষ হওয়ার ৭ দিন আগেই তাদের পিএসবি (পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো এন্ট্রি-অ্যান্ড-এক্সিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিস) বরাবর আবেদন করতে হবে।
ওয়ার্ক পারমিটে মূলত পয়েন্ট সিস্টেমের ভিত্তিতে টিয়ার-এ, বি এবং সি- এই ৩ স্তরের ভিসা দেওয়া হয়। ভিসার স্তর নির্ধারণ করা হয় প্রার্থীর যোগ্যতা, বয়স, কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং বার্ষিক বেতনের ভিত্তিতে।
আরও পড়ুন: সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার আদ্যোপান্ত জানুন
স্নাতক শেষে শিক্ষার্থীরা এই টিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে এক বছরের ভিসার বৈধতা দেওয়া হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি আরও এক বছরের জন্য ভিসা রিনিউ করতে পারবেন। এভাবে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
যে কোনো টিয়ার ভিসার জন্য এসএএফইএ (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ফরেন এক্সপার্ট অ্যাফেয়ার্স) নিয়ন্ত্রিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস সিস্টেম) মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হয়।
চীনে ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের জন্য আকর্ষণীয় বেতনের চাকরির সুযোগ রয়েছে- বিশেষ করে প্রযুক্তি, ফাইন্যান্স, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রকৌশলের মতো সেক্টরে। চীনের শীর্ষ নিয়োগদাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলিবাবা, টেনসেন্ট, হুয়াওয়ে, বাইদু ও চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক। এগুলোতে মাসিক বেতন কমপক্ষে ২৫ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার ইউওয়ান পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার ৮৭৮ থেকে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৯৮৫ টাকার সমান।
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করার সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্রটি বাংলাদেশেই। ঢাকাস্থ চীনা ভিসা সেন্টারের অনলাইন ও অফলাইন ব্যবস্থা ভিসা প্রাপ্তিকে আরও সাবলীল করে তুলেছে। অন্যদিকে অধিকাংশ স্কলারশিপে সম্পূর্ণ অধ্যয়নের অর্থ সঙ্কুলানের সুযোগ থাকায় চীন অনেক আগে থেকেই একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। সর্বোপরি, এশিয়ার দেশটিতে স্থায়ী জীবনধারণ নিশ্চিত করতে মেধাবী ও কর্মদক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন একটি সুষ্ঠ ও নিরবচ্ছিন্ন কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হওয়া।
তথ্যসূত্র: ইউএনবি
এজেড