সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় কম খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ 

অভিবাসন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় কম খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ 

রোমানিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এর উত্তর-পূর্বে রয়েছে ইউক্রেন ও মলদোভা, পশ্চিমে হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়া, দক্ষিণে বুলগেরিয়া ও দানিউব নদী। রোমানিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বৃহত্তম দেশ এবং ইউরোপের দ্বাদশতম বৃহত্তম দেশ। এর আয়তন ২৩৮,৩৯৭ বর্গকিলোমিটার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা এই দেশটিতে উচ্চশিক্ষার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। 

বিশ্বমানের সব বিদ্যাপীঠ নিয়ে শেনজেনভুক্ত দেশটি প্রতি বছর সাদরে আমন্ত্রণ জানায় হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। চলুন, রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।


বিজ্ঞাপন


রোমানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন

বিগত দশক জুড়ে ব্যবসায়িক, শিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য সেরা গন্তব্য হতে পারে রোমানিয়া। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের এই সদস্য দেশটি বর্তমানে ৩২ দশমিক ৩ ক্রাইম ইনডেক্স নিয়ে শীর্ষ নিরাপদ দেশগুলোর তালিকায় ৩৫ নম্বরে অবস্থান করছে। এ ছাড়া ১ দশমিক ৭৫৫ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স নিয়ে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ৩৬ নম্বরে রয়েছে।

রোমানিয়ায় পড়াশোনার ও জীবনযাত্রার খরচ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে কম। অথচ মানের দিক থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা একদমই আপোসহীন। শুধু তাই নয়, ইউরোপের অন্যান্য সেরা বিদ্যাপীঠগুলোর সঙ্গে এক সারিতে রয়েছে দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

ওয়ার্ল্ড কিউএস র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি, যেটি রয়েছে ৮০১ নম্বরে। এ ছাড়া বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটির র‍্যাংকিং ৮৫১।


বিজ্ঞাপন


এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একটি সুবিধা হলো এখানে অর্জন করা ক্রেডিটগুলো সহজেই অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা যায়। এই পরিবর্তনে অধ্যয়নের গুণমানের কোনো ঘাটতি হয় না। এমনকি অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের কোনো শর্ত পূরণ করতে হয় না।

এই স্থানান্তরকে নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

·  ইউরোপীয় ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাক্যুমুলেশন সিস্টেম

·  ডিপ্লোমা সাপ্লিমেন্ট

·  ইউরোপিয়ান কোয়ালিটি চার্টার ফর মোবিলিটি

·  ইউরোপিয়ান কোয়ালিফিকেশন্স ফ্রেমওয়ার্ক ফর লাইফ লং লার্নিং

·  ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইনফরমেশন সেন্টার্স অন একাডেমিক রিকগনিশন অ্যান্ড মোবিলিটি

·  ন্যাশনাল একাডেমিক রিকগনিশন ইনফরমেশন সেন্টার্স

আরও পড়ুন: চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা

রোমানিয়াতে উচ্চশিক্ষায় আবেদনের পূর্বশর্ত

আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের রোমানিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে হলে ন্যূনতম ১২ বছরের শিক্ষাগত জীবন অতিবাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য হাইস্কুল ডিপ্লোমা বা তার সমতুল্য একাডেমিক ডিগ্রির প্রয়োজন হয়।

মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারীকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। পিএইচডির জন্য প্রধান শর্ত হলো প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হওয়া।

পড়াশোনা ও চাকরিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার অগ্রাধিকার থাকায় রোমানিয়ান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক নয়। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ এর কিংবা টিওইএফএল-এ ৮০ থেকে ৯০ থাকতে হবে।

রোমানিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা

যে স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রোমানিয়াসহ গোটা ইউরোপে বহুল সমাদৃত, সেগুলো হলো-

·  বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি

·  বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি

·  আলেকজান্দ্রু ইওয়ান কুজা ইউনিভার্সিটি অব ইয়াসি

·  টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ক্লুজ-নাপোকা

·  গিওর্গে আসাকি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ইয়াসি

·  ট্রান্সিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসভ

·  ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিকা অব বুখারেস্ট

·  ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব টিমিসোয়ারা

·  বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক স্টাডিজ

·  গ্রিগোরে টি. পোপা ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন অ্যান্ড ফার্মেসি, ইয়াসি

আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন, পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়

রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রথম সারির কোর্সগুলো-

·  জেনারেল মেডিসিন

·  ডেন্টিস্ট্রি

·  ফার্মেসি

·  মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

·  সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

·  ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

·  সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং

·  আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

·  সাইবার সিকিউরিটি

·  ফাইন্যান্স

·  মার্কেটিং

·  হিউম্যান রিসোর্স

রোমানিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়

ফল এবং স্প্রিং; এই দুই সেমিস্টারে সাধারণত রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি নিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলের সময়সীমা থাকে পরের বছরের জুলাই বা আগস্ট পর্যন্ত। আর স্প্রিং শেষ হয় ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে।

ভর্তির জন্য প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় সরবরাহ করা তথ্যের সাপেক্ষে আপলোডের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রের স্ক্যান কপি প্রস্তুত রাখতে হবে।

অনলাইন আবেদনের যাবতীয় কাজ শেষে পূরণ করা ফর্মটি ডাউনলোড করে নির্দিষ্ট স্থানে স্বহস্তে সাইন করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক নথিপত্র সহকারে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর।

ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

·  নির্ভুলভাবে পূরণ করা ভর্তির আবেদনপত্র

·  উচ্চ মাধ্যমিক সনদ, স্নাতক ডিপ্লোমা বা সমমানের সনদের প্রত্যয়িত অনুলিপি (স্নাতকের জন্য)

·  স্নাতক প্রশংসাপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি (স্নাতকোত্তরের জন্য)

·  জন্ম প্রশংসাপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি

·  মেডিকেল সার্টিফিকেট

·  পাসপোর্টের প্রত্যয়িত কপি

·  ভাষা দক্ষতা শংসাপত্র (আইইএলটিএস বা টিওইএফএল স্কোর)

·  দুটি সাম্প্রতিক ছবি (পাসপোর্ট সাইজের)

·  গবেষণার প্রস্তাবনা (পিএইচডির ক্ষেত্রে)

·  প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রকাশনা (পিএইচডির ক্ষেত্রে)

·  সিভি বা পোর্টফোলিও (স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির ক্ষেত্রে)

·  লেটার অব রিকমেন্ডেশন

·  আবেদনের ফি পরিশোধের রশিদ: ৫০ থেকে ১০০ ইউরো বা ৬ হাজার ৩৫৬ থেকে ১২ হাজার ৭১২ টাকা (১ ইউরো = ১২৭ দশমিক ১১ বাংলাদেশি টাকা)

মাস্টার্সের বিষয়ের ওপর নির্ভর করে জিআরই, জিম্যাট বা এলস্যাটের মতো অতিরিক্ত পরীক্ষার স্কোর প্রদর্শন করতে হতে পারে। তাছাড়া এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি চাওয়া হতে পারে। প্রতিটি নথি রোমানিয়ান, ইংরেজি ও ফরাসি যেকোনো একটি ভাষায় অনূদিত হতে হবে।

রোমানিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের রোমানিয়ায় পড়তে যাওয়ার জন্য ডি বা এসডি টাইপ দীর্ঘমেয়াদী ভিসা নিতে হবে। এই স্টুডেন্ট ভিসায় ৯০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন পর্যন্ত শেনজেনভুক্ত দেশগুলোর ভেতরে যে কোনো অঞ্চলে ভ্রমণ করা যাবে।

অনলাইনে আবেদনে তথ্য পূরণের সময় সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিগুলোর স্ক্যান কপি সঙ্গে রাখতে হবে। আবেদন শেষে ফর্ম প্রিন্ট করে অন্যান্য কাগজপত্রসহ দূতাবাসে পাঠানোর জন্য একত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

·  রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার লেটার

·  সম্পূর্ণ রূপে পূরণ করা ভিসা আবেদনপত্র

·  পাসপোর্ট (রোমানিয়ার পৌঁছার দিন থেকে কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ সম্পন্ন)

·  দুটি সাম্প্রতিক ৩/৪ সেন্টিমিটার রঙিন ছবি

·  বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি প্রদানের প্রমাণ

·  রোমানিয়ায় আবাসনের প্রমাণপত্র

·  ভ্রমণ পরিকল্পনার প্রমাণ হিসেবে ফ্লাইট রিজার্ভেশনের নথি

·  রোমানিয়ায় থাকার সময়ের জন্য কমপক্ষে ৩০ হাজার ইউরোর (প্রায় ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৩৫২ টাকা) মেডিকেল ইন্সুরেন্স

·  প্রতি শিক্ষাবর্ষের জন্য সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ ইউরো (প্রায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৮০ টাকা) তহবিলের ব্যাংক স্টেটমেন্ট। স্বাক্ষরিত এবং স্ট্যাম্পযুক্ত ব্যাংক স্টেটমেন্টের একটি স্ক্যান কপি [email protected] ই-মেইলে পাঠাতে হবে। ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনে ‘ব্যাংক স্টেটমেন্ট ফর্ম’-এর পর প্রার্থীর নিজের নাম লিখতে হবে। ই-মেইলটি অবশ্যই ব্যাংকের নিজস্ব অফিসিয়াল ই-মেইল ঠিকানা থেকে পাঠাতে হবে। কোনো গুগল বা ইয়াহু ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করা যাবে না।

·  ভাষা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস বা টিওইএফএল সনদ

·  পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

আবেদন পরবর্তী ভিসা প্রক্রিয়াকরণ

ভিসার কাগজপত্র নিয়ে দূতাবাসে যাওয়ার পূর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিতে হবে। ফিরতি ই-মেইলে পাওয়া নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত হতে হবে ভারতে অবস্থিত রোমানিয়ান দূতাবাসে।

দূতাবাসের ঠিকানা: ৩/৬, সেক্টর-৩, শান্তি নিকেতন, নিউ দিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত

ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। 

প্রক্রিয়াকরণের পর চূড়ান্তভাবে ভিসা হাতে পেতে সাধারণত প্রায় ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় নেয়। রোমানিয়ার স্টাডি ভিসার প্রক্রিয়াকরণ ফি ১২০ ইউরো (প্রায় ১৫ হাজার ২৫৪ টাকা)।

রোমানিয়ায় পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশটিতে অধ্যয়ন বাবদ প্রতি শিক্ষাবর্ষে গড় খরচ পড়ে ২ থেকে ৫ হাজার ইউরো। এটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ২২৪ থেকে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৯ টাকা। এখানে সবচেয়ে ব্যয়বহুল কোর্সগুলো হলো মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং। অন্যদিকে সামাজিক অধ্যয়ন, মনোবিজ্ঞান, ও অর্থনীতি স্বল্প টিউশন ফির কোর্স। এগুলোতে খরচ হতে পারে প্রতি বছর ২ থেকে ২ হাজার ৫০০ ইউরো বা প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ২২৪ থেকে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৮০ টাকা।

রোমানিয়ার জীবনযাত্রা বেশ সাশ্রয়ী। বাসস্থান, খাবার, পরিবহন, চিকিৎসা বীমা এবং ইন্টারনেট খরচ সব মিলে মাসিক খরচ গড়ে ৩ থেকে ৬০০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় এই খরচ প্রায় ৩৮ হাজার ১৩৪ থেকে ৭৬ হাজার ২৬৭ টাকার সমান। অবশ্য বুখারেস্টের মতো বড় শহরগুলোতে এই অংকটি ৫ থেকে ৭০০ ইউরো (প্রায় ৬৩ হাজার ৫৫৬ থেকে ৮৮ হাজার ৯৭৯ টাকা) পর্যন্ত হতে পারে। অন্যান্য শহরগুলোর জন্য সম্ভাব্য মাসিক বাজেট-

·  ক্লুজ-নাপোকাঃ ৪৫০ থেকে ৬০০ ইউরো (প্রায় ৫৭ হাজার ২০১ থেকে ৭৬ হাজার ২৬৭ টাকা)

·  টিমিসোয়ারাঃ ৪ থেকে ৫০০ ইউরো (প্রায় ৫০ হাজার ৮৪৫ থেকে ৬৩ হাজার ৫৫৬ টাকা)

·  ইয়াসাঃ ৩ থেকে ৪০০ ইউরো (প্রায় ৩৮ হাজার ১৩৪ থেকে ৫০ হাজার ৮৪৫ টাকা)

রোমানিয়ায় স্কলারশিপের সুবিধা

এই ব্যয়ভার বহন করার জন্য আন্তর্জাতিক মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে স্কলারশিপের ব্যবস্থা। এগুলোর মধ্যে এমএফএ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম টিউশন ফি, মাসিক উপবৃত্তি, বাসস্থান, ও চিকিৎসা বীমা মিলিয়ে মোট বহন করে ৫ থেকে ১০ হাজার ইউরো। এটি প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৯ থেকে ১২ লাখ ৭১ হাজার ১১৮ টাকার সমতূল্য।

সিপাস প্রোগ্রামের আওতায় রয়েছে মাসিক অনুদান, আবাসন, ল্যাবরেটরি এবং চিকিৎসা পরিষেবা। এ সব মিলিয়ে প্রায় ৪ থেকে ৭ হাজার ইউরো (প্রায় ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৪৭ থেকে ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮২ টাকা) পাওয়া যায়।

ইরাস্মাস+ প্রোগ্রামে আবাসন ও পরিবহনের জন্য মাসিক অনুদানসহ বৃত্তির মোট পরিমাণ দাড়ায় ৪ থেকে ৮ হাজার ইউরো (প্রায় ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৪৭ থেকে ১০ লাখ ১৬ হাজার ৮৯৪ টাকা)। 

লরিয়াল-ইউনেস্কো উইমেন ইন সায়েন্স স্কলারশিপে ১০ হাজার ইউরো (প্রায় ১২ লাখ ৭১ হাজার ১১৮ টাকা) পর্যন্ত অর্থের সঙ্কুলান ঘটে। ইউনিভার্সিটি-স্পেসিফিক স্কলারশিপ ইন রোমানিয়া উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০ শতাংশ টিউশন ফি ছাড় দেয়।

রোমানিয়ায় অধ্যয়নকালীন আর্থিক ব্যবস্থাপনা

রোমানিয়ায় থাকাকালীন জীবনযাত্রার আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে নানা উপায়। যেমন আবাসনের ক্ষেত্রে ভাড়া কমানোর জন্য স্থানীয়দের সঙ্গে শেয়ার করে থাকা যেতে পারে। এ ছাড়া ছাত্রাবাস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মিটরিগুলো অল্প খরচে থাকার জন্য উপযুক্ত উপায়।

ভ্রমণ খরচ বাঁচাতে বাস এবং ট্রেনের মতো পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট এবং অবকাশ যাপনের জায়গাগুলোতে থাকে স্টুডেন্ট ডিস্কাউন্ট।

স্টুডেন্ট ভিসার অন্যতম একটি সুবিধা হলো এটি পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরিরও অনুমতি দেয়। এই পার্মিটে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে সপ্তাহে মোট ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। আর ছুটির দিনগুলোতে কাজের সময়সীমার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিধিনিষেধ নেই, তাই ইচ্ছে মতো কাজ করা যায়। এই পার্ট-টাইম কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফুলটাইম অধ্যয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার স্ট্যাটাসটি বজায় রাখতে হয়।

অধ্যয়ন শেষে রোমানিয়ায় চাকরি লাভ ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ

স্নাতক বা স্নাতকোত্তর যে কোনো ডিগ্রি শেষে রোমানিয়াতে স্থায়ী হতে হলে সর্বপ্রথম একটি ফুল-টাইম কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই কাজের জন্য আলাদাভাবে ওয়ার্ক পার্মিট নিতে হবে। সাধারণত যে কারও ক্ষেত্রে এই পার্মিট সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে। তবে দক্ষ কর্মী হলে ২ বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পাওয়া যায়।

এই অনুমতি লাভের জন্য আবেদনের প্রথম শর্ত হলো একটি চাকরির অফার পাওয়া। এখানে মনে রাখতে হবে যে, ভিসা বা রেসিডেন্স পার্মিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ মাস আগে থেকে এই আবেদন করা যায় না।

আবেদনের সময় নিয়োগকর্তা তার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ফাইল জমা দেন। সেই সাথে জেনারেল ইন্সপেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন-এর অফিসে তিনি প্রযোজ্য কর পরিশোধ করেন। অন্যদিকে, প্রার্থীকে বসবাসের অনুমতি বা দীর্ঘমেয়াদী ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দরকারি নথিপত্র জমা দিতে হয়।

সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত ওয়ার্ক পার্মিট ইস্যূ হতে হতে ৩০ থেকে ৬০ দিন সময় লেগে যায়। পার্মিট ইস্যু হওয়ার পর জমা দিতে হয় দীর্ঘমেয়াদী ভিসা রিনিউয়ের কাগজ। এই রিনিউয়ের জন্য সময় লাগে ৩০ দিন। এই প্রক্রিয়াকরণ ফি বাবদ ১২০ ইউরো বা ১৫ হাজার ২৫৯ টাকা দিতে হয়।

ওয়ার্ক পার্মিট ইস্যূর মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়। রোমানিয়ায় ফুল-টাইম চাকরির মাসিক বেতন গড়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ইউরো (প্রায় ২ লাখ ৩ হাজার ৩৭৯ টাকা)।

ইউরোপের দেশটিতে মাইক্রোসফ্ট, ওরাকল, বোশ, বিটডিফেন্ডার, ওরাকল রোমানিয়া, ও কন্টিনেন্টালের মত শীর্ষ কোম্পানিগুলোর অফিস রয়েছে। তারা নিয়মিত নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু আন্তর্জাতিক স্নাতকদের নিয়ে থাকে।

পরিশেষে

পড়াশোনার স্বল্প খরচ, স্কলারশিপের সুবিধা এবং চাকরি পর্যাপ্ততা; সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য রোমানিয়া একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই অভিবাসনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রতি। স্পন্সরশিপ লাভের জন্য একাডেমিক ফলাফলের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিবে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা। সর্বোপরি, সময়সীমাগুলোকে সামনে রেখে প্রতিটি পদক্ষেপে সুপরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হওয়া অপরিহার্য।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর