লেবানন থেকে বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর আগমনে চাপে পড়েছে সাইপ্রাস। তাই আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে ভূমধ্যসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটি। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের শুরু থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম তিন হাজার ৩০০ জনেরও বেশি অনিয়মিত অভিবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে। খবর ইনফো মাইগ্রেন্টসের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয়প্রার্থী আগমনের সামনের সারির দেশ সাইপ্রাস। দেশটি ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত মেড৫ ভুক্ত পাঁচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দেশ।
বিজ্ঞাপন
সাইপ্রাসের বর্তমান জনসংখ্যা নয় লাখ ১৫ হাজার। আশ্রয়প্রার্থীরা এখনও দেশটির মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ। যা ইইউভুক্ত কোনো দেশের জন্য একটি রেকর্ড।
গত বছর থেকে এই দ্বীপরাষ্ট্রটি অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করেছে। দেশটি অনথিভুক্তদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে এবং বাইরে থাকা একাধিক দেশে স্থানান্তর অথবা ফেরত পাঠিয়েছে।
সাইপ্রাস কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জানিয়েছে, দেশটি চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৩০০ জনেরও বেশি অনিয়মিত অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই সংখ্যার মধ্যে জোরপূর্বক বহিষ্কার, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন এবং স্থানান্তর প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত বলে নিশ্চিত করেছে দেশটি৷
নিকোসিয়া আরও জানায়, ২০২৩ সালের একই সময়ে সংখ্যাটি ছিল দুই হাজার ৩৪৮ জন।
দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জোরপূর্বক বহিষ্কার আফগান এবং সিরীয়দের জন্য প্রযোজ্য নয়৷ মিশর, বাংলাদেশ, উত্তর আফ্রিকা এবং সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের মূলত সাইপ্রাস থেকে ‘ডিপোর্ট’ করা হয়৷
সাইপ্রাস থেকে এমন সময় অভিবাসীদের বহিষ্কার বৃদ্ধি করা হয়েছে যখন দেশটি সিরীয়দের আগমনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মুখে পড়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার পর এপ্রিলের শুরু থেকে লেবানন থেকে এক হাজারেরও বেশি সিরীয় নৌকায় সাইপ্রাসে এসে পৌঁছেছে৷
তীব্র আগমনের মুখোমুখি হয়ে সম্প্রতি নিকোসিয়া ঘোষণা করেছে, দেশটি সিরিয়া থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের প্রক্রিয়া স্থগিত করবে৷
অনিয়মিত আগমনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে সাইপ্রাস বেশ কয়েক মাস ধরে ইউরোপীয় সীমান্ত নজরদারি সংস্থা ফ্রন্টেক্সের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে৷
এছাড়া চলতি সপ্তাহ থেকে অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে সিরীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকা থামাতে লেবানন উপকূলে টহল দিতে দেখা গেছে সাইপ্রাসের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি নজরদারি জাহাজকে৷
একটি দাতব্য সংস্থা জানিয়েছে, ওই জাহাজের উপস্থিতির কারণে পাঁচটি নৌকা বোঝাই সিরীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যাত্রা থামানো সম্ভব হয়েছে৷ তবে, বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি সাইপ্রাস কর্তৃপক্ষ৷
মাইক্রো ব্লগিং সাইট ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে দাতব্য সংস্থা অ্যালার্মফোন লিখেছে, ‘এসব মানুষেরা সাইপ্রাস এবং লেবাননের মধ্যকার নিষ্ঠুর ও বিপজ্জনক খেলায় আটকা পড়েছে৷ খাবার এবং পানীয় ছাড়া তারা সমুদ্রে আটকে আছে এবং তাদের জরুরি সাহায্য প্রয়োজন৷’
সিপ্রিয়ট পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সরকারের মুখপাত্ররা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্টানটিনোস আইওয়ানো বলেন, ‘নতুন করে আশ্রয় আবেদন গ্রহণ স্থগিত করাসহ আমরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন এড়াতে আরো কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি৷’
কিন্তু লেবাননের উপকূলে সাইপ্রাসের টহল জাহাজের উপস্থিতি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি৷
২০২৩ সালে বহিষ্কার প্রায় ১৩ হাজার
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে মোট ১২ হাজার ৭৫০ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে শীর্ষ দেশগুলো হল নাইজেরিয়া, ডিআরসি কঙ্গো এবং ক্যামেরুন।
অপরদিকে, ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল সাত হাজার ৫০০ এবং ২০২১ সালে ছিল মাত্র দুই হাজার।
গত বছরের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, এই পরিসংখ্যানগুলোর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যার অনুপাতে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে সাইপ্রাস প্রথম স্থানে রয়েছে৷
আরও পড়ুন: অবৈধ অভিবাসীদের জন্য দ্বীপে আশ্রয়কেন্দ্র বানাচ্ছে স্পেন
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৯৯৫ জন আশ্রয়প্রার্থী সাইপ্রাসের আশ্রয় পরিষেবা থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন৷
২০২২ সালের শেষে অপেক্ষায় থাকা আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ছিল ২৯ হাজারের কিছু বেশি এবং ২০২১ সালে ছিল প্রায় ১৩ হাজার আশ্রয় আবেদন।
তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্র্যান্টস
এজেড
