রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিদেশে পড়াশোনা

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুবিধা-অসুবিধা জানুন

অভিবাসন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:০৩ এএম

শেয়ার করুন:

STUDY ABOARD

বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের। কিন্তু পড়াশোনা করতে বিদেশ যাওয়া সহজ নয়। এজন্য নানা ধাপ পার হতে হয়। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে চাইলে সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানুন। 

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুবিধা


বিজ্ঞাপন


সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

বিদেশে পড়তে যাওয়ার একটা বড় সুবিধা হল নানা রকম সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। সাধারণত বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে অনেকেই পড়তে আসে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে যারা বিদেশে পড়তে যায় তারা নানারকম সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে ওইসব সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক এবং নিয়মনীতি সম্পর্কে জানা যায়। তাছাড়া তাদের চোখে নিজের দেশের সংস্কৃতি কেমন তা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।

study2

আত্মনির্ভরশীলতা


বিজ্ঞাপন


বিদেশে পড়ালেখা করতে গেলে যেটা হয় যে পরিবারের শাসনের মাঝে থাকতে হয় না। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে আবিষ্কার করার সুযোগ পায়। বিদেশে নিজের কাজগুলো নিজেকেই করতে হয়। যেমন- নিজের রুম পরিষ্কার রাখা, হিসাব করে চলা, যেকোন বিপদে পড়লে তা থেকে নিজে নিজে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করা ইত্যাদি। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে উঠে যেটা পরিবারের সঙ্গে থাকলে অনেক সময় গড়ে উঠে না। এভাবে প্রবাসজীবন একটা মানুষের মাঝে পরিবর্তন এনে তাকে পরবর্তী জীবনের জন্য তৈরি করে তোলে।

বৈচিত্র্যপূর্ণ নেটওয়ার্ক

যেহেতু বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে, সেহেতু বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে পড়ালেখা করতে হয়, সুতরাং নানা দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়। পড়ালেখা শেষ করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারলে পরিচিত মানুষের একটি সমৃদ্ধ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায় যা চাকরিজীবনের তথা জীবনের বিভিন্নক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।

study-2

ক্যারিয়ারের নতুন দিক

বিদেশে পড়তে গেলে অনেক নতুন নতুন কাজের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় যেগুলো নিজের দেশে পাওয়া যায় না। কাজগুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শুধুমাত্র নতুনই নয়, তাদের নতুন দক্ষতাও তৈরি করে দেয়। এভাবে ক্যারিয়ার হিসেবে অনেকগুলো পথের মধ্য থেকে একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। এটি একটি বড় সুযোগ কেননা, এতে করে নিজের পছন্দের কাজকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া যায়। দেশে থাকলে এই সুযোগ কম কারণ দেশে ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে এরকম উন্মুক্ত সুযোগ পাওয়া যায় না।

ভালো চাকরির সুযোগ

বিদেশে পড়াশোনা শেষে একজন প্রবাসী শিক্ষার্থীর ইচ্ছা থাকে যদি সেখানে চাকরি করার তবে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও  বিদেশের কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করলে তা ওই শিক্ষার্থীর সিভিতে প্লাস পয়েন্ট যোগ করবে। ফলে দেশেও এসেও  ভালো প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরিতে অপেক্ষাকৃত সহজে যোগদান করা যায়। আর বিদেশে থাকাকালীন যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তারও একটা মূল্য দেশের নিয়োগদাতারা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ চাকরি  পাওয়ার ক্ষেত্রে খানিকটা এগিয়ে থাকা যায়। 

ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্জারের সুযোগ

অনেকেই আছেন ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্জার পছন্দ করেন। তাদের অনেকেই বিদেশে পড়তে যান। যে দেশে পড়তে যান সেই দেশে সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান অর্জন হয়। ওই দেশটিও ঘুরে দেখার সুযোগ মেলে। 

study3

দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ

বিদেশের নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নানারকম দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে বিদেশে পড়ালেখা। নানাকরম মানুষের সঙ্গে কাজ করা, তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলা, তাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে শিক্ষার্থীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

এত গেলো সুবিধা কথা। বিদেশে পড়তে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী নানাবিধ অসুবিধায়ও পড়েন। জানুন বিদেশে পড়াশোনার অসুবিধাগুলো।

বিদেশে পড়ার অসুবিধা

নতুন পরিবেশ

বিদেশে পড়তে গেলে সর্বপ্রথম যে অসুবিধা হয় তা হল নতুন পরিবেশে মানিয়ে চলার অসুবিধা। একদমই আলাদা খাদ্যাভ্যাস, আলাদা আচার-আচরণ, আলাদা ভাষা, মোটকথা একেবারে আলাদা একটি পরিবেশে গিয়ে পড়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। দেশে এক রকম আর বিদেশে অন্য রকম পরিবেশ। ফলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে, মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়।

একা একা লাগা

বিদেশের নতুন পরিবেশে যখন মানিয়ে নেয়া কষ্টকর মনে হবে তখনি প্রবাসী শিক্ষার্থী নিজের আগের জীবনটার অভাব অনুভব করা শুরু করবে। ক্ষুধা পেলেই খাবার দেয়ার জন্য বাবা-মা নেই, বিকেলে আড্ডা দেয়ার জন্য পুরাতন বন্ধুরা নেই, যখন ইচ্ছা তখন ঘুম থেকে ওঠার সুযোগ নেই। এইসব কিছু যখন মানিয়ে নিতে না পারার সঙ্গে যুক্ত হবে তখনি তুমি নিজেকে একা একা মনে করবে। এটি বিদেশে পড়তে যাওয়ার একটি বড় অসুবিধা।

study4

অতিরিক্ত প্রত্যাশা

বিদেশে পড়তে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত প্রত্যাশা নিয়ে যাই আমরা। যেই দেশে যাচ্ছি সেই দেশ সম্পর্কে শুধু মুভি আর ইন্টারনেটে যা দেখি সেটুকুই জানি।  বিদেশ নিয়ে আমাদের মাঝে একটা মোহ আছে। এর ফলে যখন আমরা বিদেশে গিয়ে বাস্তবতার সম্মুখীন হই, তখন সেই মোহটা কেটে যায়।

সেখানে গিয়ে দেখা যায় চাইলেই যেখানে সেখানে যাওয়া যায় না, বিদেশিদের জন্য সেখানে আইন কঠোর ইত্যাদি। আশাভঙ্গ হওয়ার ফলে অনেকেই সেখানে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে না।

ভুল পথে চলে যাওয়া

বিদেশে পড়ালেখা করতে যাওয়ার আরেকটা বড় অসুবিধা হল ভুল পথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে না পারায় যখন একজন শিক্ষার্থী হতাশ হন, ঠিক সেই সময়টাই এই ভুল পথে চলে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সহজ সময়। পরিবারের শাসন থেকে হঠাৎ করে মুক্তি পেলে ইচ্ছে করে অনেক কিছুই করতে। বিদেশের মুক্ত পরিবেশে তোমাকে বাধা দেয়ারও কেউ থাকবে না। এর ফলে একটা বেশ বড় সম্ভাবনা থাকে চরিত্রের অবক্ষয় হওয়ার।

পরিবারের খারাপ সময়ে পাশে না থাকতে পারা

দেশের বাইরে পড়তে গেলে ঐ দেশের আইন বা দেশে ফেরার খরচ ইত্যাদি কারণে দেশে ঘনঘন ফেরার কোন সুযোগ থাকে না। এর ফলে দেখা যায় যে পরিবারের কোন খারাপ সময়ে বা কোন দুঃসংবাদ শুনলে দেশে ফিরে পরিবারের পাশে থাকার সুযোগ হয় না। এর ফলে মনের উপর চাপ পড়ে যাতে করে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে।

study-pic

খরচ

অনেক দেশেই জীবনযাপনের খরচ অনেক বেশি। যা অনেকের পরিবারের পক্ষেই চালানো সম্ভব নয়। পড়ালেখার খরচ এর পাশাপাশি জীবনযাপনের খরচ চালানোর জন্য সবাইকে পার্টটাইম চাকরি করতে হয়। এর ফলে নিজের জন্য সময় পাওয়া যায় না। আর পার্টটাইম চাকরি খুঁজে পাওয়াও বেশিরভাগ সময়ই কঠিন। এই আর্থিক চাপের কারণে পড়ালেখা আর আনন্দ দুটোতেই ব্যাঘাত ঘটে।

বিদেশে পড়তে যাওয়া আমাদের অনেকের কাছেই স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে যখন বিদেশে গিয়ে মানুষ প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে না পায়। এজন্য আমাদের সকলেরই উচিত আগের সব সুবিধা-অসুবিধা খুঁটিয়ে দেখা, অসুবিধাগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারব কি না তা ভেবে দেখা। এই সবকিছু ভেবে বিদেশে পড়ালেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। 

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর