ভারতীয় রেল বিশ্বের বৃহত্তম রেলপথগুলোর মধ্যে একটি দেশটিতে মোট ৭৩২৫টি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগ নাম ওই দেশের নাগরিকদেই হয়তো জানা নেই। পাঞ্জাবের অমৃতসরের একটি রেল স্টেশনের নাম আটারি শ্যাম সিং। শুনলে অবাক হবেন এই স্টেশনে যেতে ভারতীয়দেরই পাসপোর্ট, ভিসা। নিজ দেশের ভিসা নয়, পাকিস্তানের ভিসা নিতে হয়। কিন্তু কেন?
আগে আটারি শ্যাম রেল স্টেশন দিয়েই ভারত-পাকিস্তান সমঝোতা এক্সপ্রেস চলত। এই স্টেশনে প্রবেশ করতে গেলে পাকিস্তানের ভিসা প্রয়োজন। এই স্টেশনটি উত্তর রেলওয়ের ফিরোজপুর রেলওয়ের আওতাধীন। এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক যে, এই রেল স্টেশনে যেতে গেলে কেন পাকিস্তানের ভিসা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন

ভারতে থেকে পাকিস্তানি ভিসা!
আটারি শ্যাম সিং রেলওয়ে স্টেশনটি ভারতের একটি অংশ। অথচ এখানে যেতে পাকিস্তান থেকে অনুমতি নিতে হয়। যারা রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যান বা যাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাদেরও সরকারি অনুমতি নিতে হয়। স্টেশনে বিনা অনুমতিতে ঘোরাঘুরি করলে জেলে যেতে হবে এবং জরিমানাও দিতে হবে। কেউ যদি এই স্টেশনে বলপূর্বক প্রবেশ করার চেষ্টা করেন, তাহলে ভারতের বিদেশ আইনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, পাকিস্তানের আসল ভিসা না থাকলে সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যেতে পারে। এবং ওই একই ধারা অনুযায়ী গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি সহজে জামিন পান না। মানে নিজের দেশের স্টেশনে প্রবেশ করার অপরাধে কয়েক বছর আপনাকে জেলে থাকতে হতে পারে।

বিজ্ঞাপন
টিকিট কিনতে গেলে প্রয়োজন পাসপোর্ট নম্বর
এখান থেকে একমাত্র আন্তর্জাতিক ট্রেন ছিল সমঝোতা এক্সপ্রেস। কোনো যাত্রী যদি এই ট্রেনের টিকিট কিনতে চান তবে প্রথমে তাকে পাসপোর্ট নম্বর দিতে হত। আসলে, এই রেলস্টেশনটি শুধুমাত্র সমঝোতা এক্সপ্রেসের জন্য খোলা হয়েছিল। অনেকে হয়তো জানেন না যে, এই ট্রেনের যদি গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে দেরি হলে, পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশের রেজিস্টারেই ট্রেনে এন্টি লেখা হত। যদিও এই স্টেশন দিয়ে দিল্লি-আটারি এক্সপ্রেস, অমৃতসর-আটারি ডিইএমইউ, জব্বলপুর-আটারি স্পেশাল ট্রেনও চলাচল করে। তবে এগুলোর কোনোটিই আটারি-লাহোর লাইন দিয়ে যায় না।

কবে এই স্টেশন বন্ধ ছিল
৮ অগাস্ট ২০১৯ সালে এই স্টেশনটি বন্ধ ছিল। তারপর থেকে সমঝোতা এক্সপ্রেসটিও বন্ধ হয়ে যায়। এই পদক্ষেপ প্রধানত ছিল পাকিস্তানের। এবং এর প্রধান কারণ ছিল জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করা। সেই সময় যাত্রীদের চেকিয়ে ছিল অত্যন্ত কড়াকড়ি। আটারি স্টেশনে যাত্রীদের চেকিংয়ের পরও ফের পাকিস্তানের প্রথম স্টেশন ওয়াঘায় দ্বিতীয়বার চেকিং হত। স্টেশন চত্বরটি ভারতীয় সেনাদের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আবদ্ধ। স্টেশনের সিসিটিভি এক মিনিটের জন্যও বন্ধ হয় না।
ভারতের শেষ রেলস্টেশন
পাঞ্জাবের দিক থেকে আটারি ভারতের শেষ রেলওয়ে স্টেশন। এর একদিকে অমৃতসর এবং অন্যদিকে রয়েছে লাহোর। স্টেশনটি খুব বড় নয়, কিন্তু এর ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সমঝোতা এক্সপ্রেস বন্ধ হয়ে গেলেও স্টেশনের কাজ থামেনি। কিন্তু স্টেশনে প্রবেশের কড়াকড়ি আজও রয়েছে।
এজেড

