এক ছাদের নিচে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রত্যয়ে শুরু করা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে জনবল নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদের দিকে। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, উপাচার্যকে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিয়োগ কমিটিতে রাখা হবে না।
বুধবার (০৭ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্সে একথা জানান মন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের (সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল) নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা শুনেছি। সেখানে নিয়োগে একটি শক্তিশালী কমিটি করা হবে। যেখানে উপাচার্য থাকবেন না। নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে আমরা এটি করতে যাচ্ছি।
বক্তব্যের শুরুতে স্বাস্থ্য খাতে গত সাড়ে চার বছরে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। আগামীর পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি মুরসালিন নোমানী।
রাজধানীর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিয়োগসহ অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে মন্ত্রী অবগত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিয়োগ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। বিষয়টি খুব ভালো করে দেখা হবে। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি জাতির জনকের নামে। এটি মানুষের আস্থার জায়গা। তাই অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
বিজ্ঞাপন
জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালটিতে সরকার অর্থায়ন করে থাকে। সে হিসাবে আমরা অবশ্যই অনিয়মের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব। আমরা চাই না এখানে আসা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হোক।
ঢাকা মেডিকেল ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল হাসপাতালে দালাল নির্মূলে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ দুটি প্রতিষ্ঠানে দালাল নেই, সেটা বলব না। সারাদেশেই একই চিত্র। দালাল নির্মূলে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। তাতে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া কত হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। দালাল দূর করতে হাসপাতালের কর্মীদের ড্রেস কোড দেওয়া হয়েছে। তবে মানুষকেও সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
এসময় মন্ত্রী জানান পুরো স্বাস্থ্য খাতকে ডিজিটালাইজ করতে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সবাইকে হেলথ কার্ড দেওয়া হবে। এই কার্ড দিয়ে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, বেসরকারি মেডিকেলে সিট বাড়ানো হয়, কিন্তু সরকারি মেডিকেলে তেমন হয় না। পর্যায়ক্রমে আমরা সিট বৃদ্ধি করেছি। যার ফলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আরও বেশি করে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বিনামূল্যে শিক্ষা লাভ করতে পারবে। আমি মনে করি দেশের জন্য এটা একটা বড় কাজ।
তিনি বলেন, এখন দেশে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ। গত সাড়ে চার বছরে আটটি মেডিকেল কলেজ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে, এর মধ্যে চারটির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আর বাকি চারটির নির্মাণ এখনও চলমান রয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, প্রতিটি মেডিকেল কলেজের ডায়ালাইসিসের যে ইউনিট ছিল, তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ যেখানে ১০টি ছিল, সেখানে ২০টি করা হয়েছে, সেখানে ২০টি ছিল, সেখানে ৪০টি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতকে আমরা ডি-সেন্ট্রালাইজ করে দিতে চাচ্ছি। আগে ঢাকা কেন্দ্রিক সেবা বেশি ছিল। সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আট বিভাগে আটটি হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে, যেখানে ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের চিকিৎসা হবে। আর এই হাসপাতালেগুলোতে চার হাজার বেড হবে। তাতে ঢাকার উপর চাপ কমবে। জনগণের কষ্ট লাঘব হবে। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার প্রবণতাও কমবে। কারণ এই চিকিৎসাগুলো নিতেই মানুষ বেশি বিদেশ যায়, এটাও কমে আসবে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চলছে। তবে এ জন্য মশা কমাতে হবে। স্প্রে ব্যবহারে স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজ করছে। মশা কমলে ডেঙ্গু রোগীও কমে যাবে।
বিইউ/এএস