দেশের মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিতে কমিউনিটি ক্লিনিক অনন্য উদ্যোগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ধারণাকে সারাবিশ্ব গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জাতিসংঘের বিশেষ রেজুলেশন তারই স্বীকৃতি বলে মনে করেন তিনি।
এ সময় দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের অবদানের কথা স্মরণ করে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বেতন ভাতা বাড়ানোর আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৫ জুন) রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে কমিউনিটি ক্লিনিককে প্রধানমন্ত্রীর নামে 'The Sheikh Hasina Initiative' হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক আজ বিশ্বে নাম করেছে। এই উদ্যোগের ধারণা প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার থেকে পেয়েছেন। জাতিসংঘ ১৯৫টি দেশ রয়েছে। আর এই রেজুলেশন প্রাস্তাবনায় ৭৫টি দেশ প্রধানমন্ত্রীর কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণাকে সরাসরি গ্রহণ করেছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের। সারাবিশ্ব এটিকে গ্রহণ করেছে কারণ সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত সবচেয়ে জরুরি। যা এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, সারাদেশে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে ৩২ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। প্রতিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন মানুষ সেবা নেয়। সেই হিসেবে সারাদেশে দিনে পাঁচ থেকে সাত লাখ দিনে, মাসে দেড় কোটি এবং বছরে ১৮ কোটি মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা পাচ্ছে।
কমিউনিটি সফলতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিতের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যগত উন্নতি হয়েছে। বড় ধরনের রোগ থেকে মানুষ সতর্ক হতে পারছে। এতে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। আমরা এমডিজি অর্জন করেছি। এটি বাস্তবায়নে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। করোনা ও ইপিআইয়ের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমও ভূমিকা রেখেছে কমিউনিটি ক্লিনিক। এটি শুধু একটি একক উদ্যোগ নয়, এটি একাধিক মহৎ উদ্যোগের সম্মিলিত রূপ। বর্তমান সরকারের প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাত ধরে। কমিউনিটি ক্লিনিকও সেসব খাতের অন্যতম।
বিজ্ঞাপন
ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আন্তরিক। বেতনের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এর অনুমোদন নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করবো। সরকারের কাছে টাকা চেয়ে আমরা অতীতে ব্যর্থ হইনি। এবারও হবো না ইনশাআল্লাহ।
এসময় নতুন প্রস্তাবিত বাজেটে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে উল্লেখ করে সেবার পরিধির সাথে বরাদ্দ আরও বেশি হলে সেবার মান আরও ভালো হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার দার্শনিক চিন্তাধারা থেকে কাজ করেন। তার প্রমাণ কমিউনিটি ক্লিনিক। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর নামে এই রেজুলেশন পাস হওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ৭৫টা দেশের প্রতিনিধি এই স্বীকতিকে সমর্থন জানিয়েছে। একইসঙ্গে তারা তাদের দেশে এই সেবা চালু করতে চায় বলেও জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই আইডিয়া বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা থেকে এসেছে। এটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন।
সেবার মান আরও বাড়ানোর কথা জানিয়ে প্রখ্যাত এই চিকিৎসক বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ ও ব্লাড সুগারের ওষুধ দিতে হবে। ইতিমধ্যে সেই উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বিনা পয়সায় ইনসুলিন নেওয়ার উদ্যোগও হয়তো নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে জনগণের দূড়গোড়ায় পৌঁছে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
এমএইচ/জেবি

