মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

৫ দাবিতে কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটাম বিএনএ’র

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৩, ০৩:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

৫ দাবিতে কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটাম বিএনএ’র

নার্সিং পেশায় স্পেশাল ক্যাডার সার্ভিস চালু, ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের ডিপ্লোমা নার্সিংদের সমমানের সিদ্ধান্ত বাতিলসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ)। 

মানববন্ধন থেকে আগামী ১০ জুনের মধ্যে দাবি না মানলে পরবর্তী ১১ জুন থেকে পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটির নেতারা।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (৩১ মে)  জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। 

বক্তারা বলেন, বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পড়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে সরকারি নার্সিং কলেজে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে পড়ার সুযোগ লাভ করতে হয়। এরপর ৩ বছরে ১৭টি মেডিকেল রিলেটেড সাবজেক্ট ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করে চূড়ান্তভাবে পাস করতে হয়। এই সময়টাতে আবার ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসও ঠিক রাখতে হয়, একজন শিক্ষার্থীকে কতটুকু কষ্ট করে পাস করতে হয়েছে সেটা বর্ণনা করার ভাষা নেই। এরপর আবার কোর্স শেষে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ মাস মেয়াদি ইন্টার্নশিপ করতে হয়েছে। সবশেষে কম্প্রিহেনসিভ বা লাইসেন্সিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদেরকে রেজিস্টার্ড নার্সের মর্যাদা অর্জন করতে হয়েছে। 

কিন্তু এসএসসি পাস করা, কোনো ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা, বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করা, আর শুধুমাত্র ৬ মাস ইন্টার্নি করা তথাকথিত পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিকে (পিসিটি) ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের সমমান দেওয়া হয়, তখন আমাদের কষ্টের আর সীমা পরিসীমা থাকে না।

দাবির বিষয়ে তারা বলেন, আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সরকারি চাকুরিতে কর্মরত নার্সদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা অনতিবিলম্বে নিশ্চিত করা। এছাড়াও অন্যান্য টেকনিক্যাল পেশাজীবীদের মতো আগে দেওয়া চাকুরির শুরুতে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদানের সুবিধা বহাল রাখতে হবে। সরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে সকল প্রকার সংযুক্তি, অতিরিক্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব, নিজ বেতনের আদেশ বাতিল পূর্বক অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক, ডেমোনেস্ট্রেটর, নার্সিং ইন্সট্রাক্টর পদগুলোতে অনতিবিলম্বে নিয়োগ দিতে হবে। একইসঙ্গে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ভাতা প্রদানসহ বিএসসি ইন নার্সিং শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


অবৈধ নার্সিং কলেজ বন্ধের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, নীতিমালা অনুসরণ না করে যে সকল বেসরকারি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সে সকল প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। নার্সিং সেক্টরের দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে নার্স নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমাদের উল্লেখিত সুস্পষ্ট দাবিসমূহ যদি আগামী ১০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন না হয় তাহলে আগামী ১১ জুন থেকে সারাদেশের সকল পেশাজীবী নার্স ও নার্সিং শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এমনকি পরবর্তীতে প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

মানবন্ধনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সংবিধানের মৌলিক অধিকার অবমাননা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি গ্রুপকে এইচএসসি পাশের পর ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সে ভর্তি করার পর একাডেমিক সনদ সরবরাহ করছেন। অপরদিকে আবার আরেকটি গ্রুপকে এসএসসি পাশের পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বৈষম্যমূলকভাবে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের সমমর্যাদা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, সামনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন, আমরা মনে করছি নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নার্সবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা করার উদ্দেশে সাধারণ নার্সদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করার প্রয়াস থেকেই এমন একটি দুরভিসন্ধিমূলক কাজ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই ধরণের কর্মকাণ্ডে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেইসঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ধরনের পক্ষপাতমূলক প্রজ্ঞাপন অনতিবিলম্বে বাতিল করে নার্সিং সমাজে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন।

আলাদা ক্যাডার সার্ভিসের দাবি জানিয়ে বিএনএ সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন নার্সিং শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছেন। ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা হলো বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় সর্বমোট ন্যূনতম জিপিএ ৭.০০ থাকতে হবে। কোনো পরীক্ষায় জিপিএ (GPA) ৩.০০ এর কম গ্রহণযোগ্য নয় এবং উভয় পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে। এইচএসসি পাস করার পর দুই বছর আবেদন করার সুযোগ থাকবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হইতে হবে। যা কোনো অংশে রাষ্ট্রের অন্যান্য স্পেশাল ক্যাডার এবং সাধারণ ক্যাডার এর তুলনায় মানের দিক থেকে কম নয়।

সরকার ২০০৮ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং কোর্স শুরু করলেও এখন পর্যন্ত এই ডিগ্রিধারীদের জন্য রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা খাতে কোন ধরনের পদ ও পদবী সৃষ্টি করা হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি শেখ হাসিনার হাত ধরে নার্সিংয়ে স্পেশাল ক্যাডার সার্ভিস চালু হলে এই পেশার মর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে আরও মেধাবীরা এই পেশায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হবে।

এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির সভাপতি নাসিমুল হক ইমরান, স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজ, সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান প্রমুখ।

এমএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর