শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘মিডওয়াইফের দক্ষতা সঠিকভাবে কাজে লাগালে বাড়বে স্বাভাবিক প্রসব’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘মিডওয়াইফের দক্ষতা সঠিকভাবে কাজে লাগালে বাড়বে স্বাভাবিক প্রসব’

দেশে প্রয়োজন পরিমাণ মিডওয়াইফ নেই। কোথাও আবার তাদের দিয়ে করানো হয় নার্সের কাজ। তাই নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসব বাড়ানোর পাশাপাশি মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে মিডওয়াইফদের দক্ষতা বৃদ্ধি, উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সঠিক কাজের পরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা মনে করেন, দেশের প্রতিটি প্রান্তে মিডওয়াইফের সেবা সহজলভ্য করা গেলে নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসব যেমন বাড়বে, তেমনি মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ হারে কমে আসবে।


বিজ্ঞাপন


রোববার (২৮ মে) আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সহযোগিতায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডওয়াইফারি এডুকেশন প্রোগ্রাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ‘মিডওয়াইফদের কর্মপরিবেশ এবং তাদের দক্ষতা প্রয়োগের পর্যালোচনা’ শীর্ষক একটি গবেষণা তুলে ধরেন গবেষক ড. জাহিদুল কাইয়ুম।

এসময় ২৫৬ জন পেশজীবীর ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে মিডওয়াইফরা তাদের পেশা সম্পর্কে আশাবাদী এবং তাদের পেশার উন্নয়নে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ পাওয়া গেছে।

অনুষ্ঠানে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী বলেন, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে এবং মাতৃস্বাস্থ্য যেসব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেগুলো অর্জন করতে হলে আমাদের ব্যতিক্রমভাবে চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মিডওয়াইফারির পেশা হিসেবে সম্প্রসারণ এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের নিয়োগ একটি অপরিহার্য বিষয়।


বিজ্ঞাপন


গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে গবেষক ড. জাহিদুল কাইয়ুম বলেন, আমাদের উচিত মিডওয়াইফারি দক্ষতা যেখানে যতটা সম্ভব ব্যবহার করার চেষ্টা করা। পাশাপাশি এমন একটি উপায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কারের চেষ্টা করা উচিত, যাতে মিডওয়াইফরা নিরাপদ মাতৃত্বে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে।

জাহিদুল বলেন, মিডওয়াইফরা প্রাইভেট সেক্টরে একজন সম্ভাব্য উদ্যোক্তাও হতে পারে, যা মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।

শুধু নিয়োগ করলেই হবে না, মিডওয়াইফারদের কাজটা ঠিকভাবে করতে দিতে হবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির মিডওয়াইফারি এডুকেশন প্রোগ্রামের প্রধান ডা. শারমিনা রহমান। তিনি বলেন, মিডওয়াইফাদের শুধু নিয়োগ করলেই হবে না, তাদেরকে তাদের কাজটা ঠিকভাবে করতে দিতে হবে। গর্ভবতী মা এবং তার নবজাতকের জন্য যে সেবাগুলো তার দেবার কথা তাকে সেই সেবাটাই ঠিকভাবে দিতে হবে। মিডওয়াইফকে দিয়ে নার্সের কাজ করানো যাবে না।

কী বলছে গবেষণা প্রতিবেদন?

গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মিডওয়াইফরা তাদের কর্মক্ষেত্রে ‘মিডওয়াইফ’ পদবি নিয়ে নিযুক্ত হওয়ার পরও তাদের পেশাগত ভূমিকার পরিবর্তে নার্সিং সেবা দিতে কিংবা অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করার চিত্র।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এই চিত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশি দেখা গেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তথ্য বলছে, বেসরকারি মেডিকেলে মিডওয়াইফরা নিয়মিতভাবেই নার্সের কাজ করেন।

গবেষণায় পাওয়া গেছে, মিডওয়াইফদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মিডওয়াইফের নির্ধারিত সেবা দেয়ার বদলে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিবেদনটি বলছে, মিডওয়াইফারি দক্ষতা সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করে মিডওয়াইফের সেবার পরিধি নির্দিষ্ট করে তারপর জন্য বেসরকারী সংস্থাগুলোতে তাদের পদায়ন করাটা জরুরি।

২৫৬ জন পেশজীবীর ওপর পরিচালিত এই জরিপে বেশ কিছু পরামর্শ উঠে এসেছে। সেহলো- সরকারি খাতে মিডওয়াইফ নিয়োগ বাড়ানোর পাশপাশি সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মিডওয়াইফারি পদ সৃষ্টি করা। মিডওয়াইফারি পেশা সম্পর্কে সমাজের সব স্তরের মানুষের ভেতর সচেতনতা বাড়ানোর এবং প্রসূতি মা ও তার নবজাতকের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ প্রাপ্তির উপর বিশেষ জোর দেওয়া।

আয়োজকরা মনে করেন, বাংলাদেশ যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় মিডওয়াইফদের ভূমিকার ব্যাপারে সচেতন হয় তাহলে নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসব বাড়িয়ে মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষার প্রয়োজনীয় যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর