রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

বংশগত হৃদরোগীদের সেবায় বিশেষায়িত ক্লিনিক চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৩, ০৯:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

বংশগত হৃদরোগীদের সেবায় বিশেষায়িত ক্লিনিক চালু

বংশানুক্রমিক কার্ডিওভাসকুলার (হৃদরোগ) রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসায় কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক চালু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বংশগত হৃদরোগে আক্রান্তদের বিশেষায়িত চিকিৎসার পাশাপাশি ক্লিনিকটি গবেষণা ও শিক্ষায় অবদান রাখবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (২০ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিকটির উদ্বোধন করেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসা শিক্ষা, সেবা ও গবেষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেশে পথ প্রর্দশকের ভূমিকা পালন করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এ সময় সদ্য চালু করা কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক হৃদরোগের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসির অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, বিশিষ্ট চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ও বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ইনভেটিভ কাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিকের মাধ্যমে কার্ডিওজেনেটিক টেস্টিং, কাউন্সিলিং ও চিকিৎসায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে হৃদরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা, নতুন চিকিৎসার দ্বার উম্মোচিত হলো। বংশগত হৃদরোগ হ্রাসে কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে দি ফিউচার অব হার্ট ডিজিজ ট্রিটমেন্ট শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু।


বিজ্ঞাপন


এতে জানানো হয়, জেনেটিক্স কার্ডিওভাসকুলার রোগের সূত্রপাতের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বংশগত হাইপার কোলেস্টেরোলেমিয়া, হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি এবং অ্যারিথমোজেনিক রাইট ভেন্ট্রিকুলারডিস প্লাসিয়ার মতো সিভিডি হওয়ার ঝুঁকি বংশানুক্রমিক জেনেটিক মিউটেশনের দ্বারা বৃদ্ধি পেতে পারে। জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই মিউটেশনগুলোর শনাক্তকরণ এই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে। যার ফলে জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং রোগীর রোগের প্রকোপতা কমে যায়।

উন্নত দেশগুলোতে কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিকগুলি হৃদরোগের ব্যবস্থাপনায় একটি নিয়মিত অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই ক্লিনিকগুলো সিভিডি রোগীদের ব্যাপক জেনেটিক পরীক্ষা, কাউন্সেলিং এবং ব্যবস্থাপনা প্রদান করে। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রদানের জন্য কার্ডিওভাসকুলার জেনেটিক্স ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে। ইউরোপীয় সোসাইটি অব কার্ডিওলজি দ্বারা বংশানুক্রমিক কার্ডিওমায়োপ্যাথির ক্ষেত্রে গবেষণা এবং শিক্ষার প্রচারের জন্য মায়োকার্ডিয়াল এবং পেরিকার্ডিয়াল ডিজিজের উপর ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পারিবারিক কার্ডিয়াক ক্লিনিক অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল প্রিন্স আলফ্রেড হাসপাতালে বংশানুক্রমিক কার্ডিয়াক অবস্থার রোগীদের জেনেটিক পরীক্ষা এবং পরামর্শ প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলেও প্রবন্ধে জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা জানান, হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি) হল একটি উল্লেখযোগ্য বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ, যা অসুস্থতা এবং মৃত্যুর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো ঝুঁকির কারণগুলোর প্রসারের সাথে বাংলাদেশে সিভিডি একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশে কার্ডিয়াকজেনেটিক টেস্টিংসহ একটি কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা দেশে কার্ডিওভাসকুলার রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে একটি বড় পদক্ষেপ।

এই ক্লিনিকের সুবিধা জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে কার্ডিয়াক জেনেটিক টেস্টিংসহ একটি কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ফলে জেনেটিক কার্ডিওভাসকুলার রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞদের একটি দল সিভিডি রোগীদের জেনেটিক পরীক্ষা, কাউন্সেলিং এবং চিকিৎসা প্রদান করবেন। উপরন্তু, এই ক্লিনিক সিভিডি ক্ষেত্রে গবেষণা এবং শিক্ষার সুযোগ প্রদান করবে। যা বাংলাদেশে হৃদরোগএর রোগীদের জন্য পারসনালাইজড চিকিৎসা উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

দেশে বংশগত হৃদরোগের সমস্যা তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার অন্যতম বাধা হল জেনেটিক পরীক্ষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণ এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সচেতনতা এবং শিক্ষার অনুপস্থিতি। সিভিডি-এর বিকাশে জেনেটিক্সের ভূমিকার পাশাপাশি জেনেটিক পরীক্ষার সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জনসচেতনতা এবং শিক্ষা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। আরেকটি প্রতিবন্ধক হলো ব্যপক ভাবে বাংলাদেশে জেনেটিক পরীক্ষার জন্য অবকাঠামোও সম্পদের স্বল্পতা রয়েছে।

এক্ষেত্রে বিএসএমএমইউ বাংলাদেশে পথ প্রদর্শক হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের একটি দল রয়েছে এবং সিভিডি রোগীর জেনেটিক পরীক্ষা করার জন্য একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধা রয়েছে বলে জানান আলোচকরা।

প্রসঙ্গত, বিএসএমএমইউর এনাটমি বিভাগের জেনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি, কার্ডিওজেনেটিক্স, ক্যান্সার জেনেটিক্স, এন্ডোক্রাইন জেনেটিক্সের বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমে জড়িত। এই পরীক্ষাগারটি মহামারী চলাকালীন SARS-CoV-2 ভাইরাসের পুরো জিনোম সিকোয়েন্সিংও করেছে যা দেশের সামাজিক সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যনীতিতে সহায়তা করেছিল। কার্ডিয়াক জেনেটিক টেস্টিংসহ বাংলাদেশে একটি কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা দেশের সিভিডি ব্যবস্থাপনায় একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করবে। ক্লিনিকটি বংশানুক্রমিক সিভিডি রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসার পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার জেনেটিক্সের ক্ষেত্রে গবেষণা ও শিক্ষার সুযোগ করে দেবে।

অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জীর সভাপত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একে এম ফজলুর রহমান, প্রধান গ্রন্থাগারিক ও ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক, হল প্রভোস্ট ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান প্রমুখ।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর