বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

অভিজাত পরিবার থেকে নার্সিংয়ের পথপ্রদর্শক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৩, ০২:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

অভিজাত পরিবার থেকে নার্সিংয়ের পথপ্রদর্শক

আজ ১২ মে, শুক্রবার আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। এবারও বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিবসটি। প্রতি বছর এই দিনটিকে নিয়ে একটি থিম গৃহীত হয়। এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন- এ প্রচারণার মাধ্যমে মূলত সমাজের নীতিনির্ধারক, জনসাধারণ এবং যারা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও অর্থায়নে ভূমিকা রাখেন তাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গিতে নার্সিং পেশার ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল ও আলোকিত করবে।

বিশ্বের সব নার্সের প্রতি সম্মান জানাতে দিবসটি পালিত হয় প্রতিবছর। নার্সদের সংগ্রামটা প্রতিদিনের। কঠিন পরিশ্রম আর সেবার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন একজন রোগীকে। কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীরাও নার্সদের সেবায় সুস্থ হয়ে ফিরছেন। দিন-রাত নিরলস সেবা দেন তারা। বিশেষ এই দিনটি তাদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। অনেকের মনেই ঘুরপাক খায় এই প্রশ্নটি যে, বিশ্ব নার্স দিবসটির কীভাবে এলো? এর পেছনে রয়েছে আধুনিক নার্সিং সেবা প্রতিষ্ঠাতার এক ইতিহাস। ইতিহাস টানলেই আসবে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নাম। ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে যিনি ইতিহাসে খ্যাতি লাভ করেছেন। ১৮২০ সালে ১২ মে ইতালির আভিজাত পরিবারে জন্ম হয় তার। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিনটি ইন্টারনেশনাল নার্সেস ডে হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তিনি ছিলেন আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা।


বিজ্ঞাপন


ডার্বিশায়ার থেকে ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে আসেন ফ্লোরেন্স। লন্ডনের হাসপাতালে তখন খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। কোনও নার্স সেখানে কাজ করেন না সেই সময়। কারণ ওই সময় নার্সিং সেবাকে সামাজিক ভাবে মর্যাদা দেওয়া হতো না। ফ্লোরেন্স এই সময়ের হাল ধরেছিলেন। মানবসেবার প্রতি তিনি প্রথম টান অনুভব করেন। ১৮৫১ সালে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানি যান।

ফ্লোরেন্সের সবচেয়ে বড় অবদান রাখে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময়। ১৮৫৩ সালে শুরু হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ। সেখানের সেনা-হাসপাতালের দুর্দশার খবর জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছিল। ওই সময় অসুস্থ সৈন্যদের পাশে দাঁড়ান তিনি।

এদিকে সেবাকে জীবনের ব্রত হিসাবে নেওয়ায় প্রবল আপত্তি জানায় তার পরিবার। সমাজে নিম্নবিত্ত, অসহায়, বিধবা মহিলাদের পেশা হিসাবে গণ্য করা হতো নার্সিংকে। তবে পরিবারের আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে নার্সিংয়ের কৌশল ও জ্ঞানে দক্ষ করে তোলেন ফ্লোরেন্স। পথ দেখায় আধুনিক নার্সিংয়ের। সেবার পথে হেঁটে চলেন তিনি। সেই সাথে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে সেসব দেশের সেবা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা ও প্রশিক্ষণ নেন। পরে ১৮৫৩ সালে লন্ডনের মেয়েদের একটি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব নেন তিনি।

ফ্লোরেন্সের সবচেয়ে বড় অবদান রাখে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময়। ১৮৫৩ সালে শুরু হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ। সেখানের সেনা-হাসপাতালের দুর্দশার খবর জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছিল। ওই সময় অসুস্থ সৈন্যদের পাশে দাঁড়ান তিনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের এই যুদ্ধে সৈন্যদের অবস্থা ছিল বিপন্ন। প্রতিরক্ষা দফতরের সেক্রেটারি সিডনি হার্বাট ফ্লোরেন্সেকে লিখেন- ‘যুদ্ধের এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় আহত সৈন্যদের তত্ত্বাবধান করার মতো একজনও উপযুক্ত ব্যক্তি নেই। যদি আপনি এ কাজের ভার গ্রহণ করেন, দেশ আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।’ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ফ্লোরেন্স নিজ উদ্যোগে নার্সিংয়ের জন্য ৩৪ জনের স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে সেখানে ছুটে যান। যোদ্ধাদের সেবা দেন। যা এক অনন্য উদাহরণ। সেখানে অসুস্থ ও আহত সৈনিকদের নিরাময়ের ক্ষেত্রে পেলেন অভূতপূর্ব সাফল্য।


বিজ্ঞাপন


১৮৬০ সালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল স্থাপন করেন। ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ চালু করেন। সেখানে পড়ানো শুরু করেন নার্সিং সেবা সম্পর্কে। ধীরে ধীরে নার্সিং সেবার গুরুত্ব পৌঁছে দেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। ১৮৮৩ সালে এই কাজের জন্য তিনি রয়েল রেডক্রস সম্মানও পান। কয়েকটি সম্মানে তাকে ভূষিত করা হয়।

ফ্লোরেন্স তার সময় থেকেই নার্সিং সেবার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। যুগের পর যুগ নার্সদের অবদান সবার কাছে প্রশংসনীয় হয়ে উঠে। নার্সদের অবদান বিশ্বজুড়ে প্রমাণ মিলেছে করোনার মহামারির সময়েও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছে।

‘অর্ডার অব মেরিট’-সহ প্রচুর পুরস্কার সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন জীবনে। আজও সেবিকারা তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করেন তার নামে ‘নাইটিঙ্গেল’ শপথ নিয়ে। নার্সিং সেবার জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পুরস্কারের নাম তারই নামে, ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল মেডেল’। এই মহীয়সী লন্ডনে প্রয়াত হন ১৯১০ সালের ১৩ অগস্ট। বহুমুখী কর্মপ্রতিভায় ঋদ্ধ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল শুধু নার্সিং সেবাটিরই উত্তরণ ঘটাননি, তিনি আলোকিত করেছিলেন স্বাস্থ্যবিধিবিহীন অবস্থায় অন্ধকারে থাকা সেই সময়টিকেও। উচ্চকিত ভাবে ‘নারীবাদী’ না হয়েও অনন্যা এই নারী দেখিয়েছিলেন নারীমুক্তির পথ।।

ফ্লোরেন্স তার সময় থেকেই নার্সিং সেবার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। যুগের পর যুগ নার্সদের অবদান সবার কাছে প্রশংসনীয় হয়ে উঠে। নার্সদের অবদান বিশ্বজুড়ে প্রমাণ মিলেছে করোনার মহামারির সময়েও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, সরকার দেশে নার্সিং সেক্টরকে আন্তর্জাতিক মানে নেওয়ার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সিং শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে আটটি নার্সিং ইন্সটিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর করেন। এন্ট্রি পয়েন্টে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ১৪ বছরে সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে ৩৩ হাজারের বেশি নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতেই এই উদ্যোগ। দেশে এমএস, এমডি, পিএইচডি, এমপিএইচসহ উচ্চতর ডিগ্রিধারী সহস্রাধিক নার্স আছেন। কিন্তু তারা সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশেও গুরুত্বের সাথে দিবসটি পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উপলক্ষে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের নানা আয়োজন রয়েছে।

ডব্লিউএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর