শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

‘দেশে সবচেয়ে এলোমেলো সেক্টর হলো স্বাস্থ্য খাত’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৭:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘দেশে সবচেয়ে এলোমেলো সেক্টর হলো স্বাস্থ্য খাত’

বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। অথচ স্বাধীনতার এত বছর পরও এই খাত দেশের সবচেয় এলোমেলো বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত। তবে দেশের স্বাস্থ্য খাত ধীরে ধীরে এগুচ্ছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটি সুন্দর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


কর্মশালায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, দেশে বর্তমানে ১৫ লাখেরও অধিক মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে অন্তত দেড় লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। এই অবস্থায় ধূমপানসহ তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী আইনের দাবি উঠলেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষত্রে সরকারি মহলের লোকজনই তামাক নিয়ন্ত্রণে বড় বাঁধা বলে মনে করেন তারা।

তামাকবিরোধী আইন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তামাকের ভয়াবহতা আমরা সবাই জানি, এরপরও আমরা ধূমপান করছি। বিভিন্ন ধরনের তামাক ব্যবহার করছি। দিনশেষ আবার আমরাই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী আইনের বিকল্প নেই। কিন্তু একদিকে আমরা ধূমপান বন্ধ করতে চাচ্ছি, অন্যদিকে এই ধূমপানের পক্ষে কাজ করছে আমাদেরই বড় একটা অংশ।

শ্যামল দত্ত বলেন, স্মোকিংয়ের পক্ষে অনেক লোক, এমনকি সরকারি মহলের শক্তিশালী লোকজনও আছে। এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বৈত অবস্থান আছে। এটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে নিয়েই তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


এ দিন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, তামাক হলো একটি প্রাণঘাতী পণ্য। তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় অর্ধেক মারা যায় তামাকের কারণে। ২০১৮ সালে তামাকের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মৃত্যু হয়েছে, যা দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

অধ্যাপক সোহেল রেজা বলেন, কখনই তামাক ব্যবহার করেননি এমন লোকদের তুলনায় তামাক ব্যবহারকারীদের হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি। এছাড়াও তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশের বেশি। দেশে পরোক্ষ ধূমপানের হারও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। দেশে ১৫ বছরের নিচে ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে ভুগছে।

তামাকে শুধু প্রাণহানিই ঘটছে তা নয়, বড় অংকের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি তথ্যে দেখা গেছে- ২০১৮ সালে বাংলাদেশে তামাকজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা ওই বছর জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ প্রত্যক্ষ ব্যয় আট হাজার চারশ কোটি টাকা এবং তামাক ব্যবহারের ফলে অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের কারণে উৎপাদনশীলতা হারানোর ক্ষতি ২২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের আর্থিক ক্ষতি তামাকজনিত মোট আর্থিক ক্ষতির ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

পরোক্ষ ধূমপানের জন্য স্মোকিং জোনকে দায়ী করে তিনি বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের অন্যতম কারণ হলো স্মোকিং জোন। এটি সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি সচেতনতা জরুরি। কারণ এতে করে অধূমপায়ীরাও ধূমপায়ীদের মতো ক্ষতির শিকার হয়। শুনেছি কিছু হাসপাতালেও ধূমপানের জন্য ডিএসএ রাখা হয়েছে। একটি সরকারি হাসপাতালেও আছে, যা সরাসরি আইনের পরিপন্থী।

>> আরও পড়ুন: ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি’

কর্মশালায় তামাকের ওপর কর আরোপের দাবি জানিয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ তামাকবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ছয়টি দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এগুলো সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে।

দাবিগুলো হলো- সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যে কোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটের মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টগুলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

এ দিন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ১৭ জন সাংবাদিককে এনসিডি (নন-কমিউনিকেবল ডিজিস) মিডিয়া ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২২ প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ১১ জন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ছাড়াও তিনজন অনলাইন ও টিভিতে কর্মরত।

এমএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর