বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

দেশে যক্ষ্মায় প্রতিদিন ১০০ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

দেশে যক্ষ্মায় প্রতিদিন ১০০ জনের মৃত্যু

সচেতনতা ও যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণের অভাবে প্রতিদিন দেশে প্রায় ১০০ জন যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বালে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। আক্রান্তদের মধ্যে শনাক্তের হার প্রায় ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ১৯ থেকে ২০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইলে থেকে যাচ্ছেন।

বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানান।


বিজ্ঞাপন


জাহিদ মালেক বলেন, দেশে যক্ষ্মা শনাক্তের হার প্রায় ৮০ শতাংশ। এখনো প্রায় ১৯ থেকে ২০ শতাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে। এমনকি সচেতনতা ও যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণের অভাবে প্রতিদিন দেশে প্রায় ১০০ জন যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় যক্ষ্মায় মৃত্যু প্রতিরোধে সরকার রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রোগের চিকিৎসা এবং ওষুধসহ সবকিছু বিনামূল্যে দিচ্ছে।

তবে, সরকারের একার পক্ষে এই সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সবাই এগিয়ে এলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই যক্ষ্মা নির্মূল সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষের শরীরে টিবি বা যক্ষ্মা আছে। এই রোগে প্রতিবছর বিশ্বে ১৫ কোটি মানুষ মারা যায়। যেখানে দরিদ্রতা বেশি সেখানে যক্ষ্মা বা টিবির হারও বেশি। বিশ্বের ৭০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগীর বসবাস মাত্র আট থেকে ১০টি দেশে। সেই তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। আশার দিক হলো, অতীতের চেয়ে যক্ষ্মা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ২০০২ সালে যেখানে বছরে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যেত। এখন সেটা কমে ৪০ হাজারে নেমেছে। কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়।

এ সময় অনুষ্ঠানটিতে একাধিক সংসদ সদস্যের উপস্থিতির স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে নিষ্ঠার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করে এর প্রশংসা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যক্ষ্মা বিষয়ক পার্লামেন্টারি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজনীয়। আমি বিশ্বাস করি এমন একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যক্ষ্মা নির্মূলে আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা পাওয়া যাবে। এই বিষয়ে সকল ধরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা যক্ষ্মার বিষয়ে তাদের দায়বদ্ধতার কথা জানান। সুবর্ণা মুস্তাফা তার বক্তব্যে শিশুদের যক্ষারোগ নির্মূলে অভিভাবকদের সচেতন করার অঙ্গীকার জানান। আরমা দত্ত, এমপি যক্ষ্মা নির্মূলে একটি পার্লামেন্টারি প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং শিরিন আক্তার, সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক কাজের পাশাপাশি এই বিষয়ে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি জোর দেন।

health2

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার উপস্থিত সংসদ সদস্যকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পরামর্শে নিজ নিজ এলাকায় যক্ষ্মা নির্মূলের পদক্ষেপকে বেগবান করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালকে যক্ষ্মারোগ শনাক্তকরণে সক্ষম করেছে। তবে এই বিশাল কার্যক্রম সরকারের একার পক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, প্রয়োজন সকলের মিলিত প্রচেষ্টা।

স্বাগত বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমবিডিসি) অধ্যাপক ডা. কাজী শফিকুল হালিম বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণ ৯৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শনাক্তকরণ, নোটিফিকেশনের হার বাড়াতে হবে। সবার জন্য সেবা নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি, বেসরকারি সংশ্লিষ্ট ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ সময় সম্মিলিত প্রয়াসে যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারব আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে যক্ষ্মা নির্মূলে প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার জন্য দেশের মাল্টিসেক্টরাল স্টেকহোল্ডার এবং নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ততা এবং অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ। তিনি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কার্যক্রমে নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণ এবং এ বিষয়ে ইউএসএআইডি-র এসিটিবি-র কাজে সহায়তা করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংসদ সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন এবং এই কার্যক্রমের প্রতি তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন জানানোর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, সরকারের সাথে এবং ইউএসএআইডিস এসিটিবি কার্যক্রমের মাধ্যমে যক্ষ্মা নির্মূলে দেশে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। তবে এখনও ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা ও শিশু যক্ষ্মা হ্রাসে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর