শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জরায়ু মুখ ক্যানসার: নারীদের ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বিয়ের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

জরায়ু মুখ ক্যানসার: নারীদের ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বিয়ের পরামর্শ

জরায়ু মুখ ক্যানসারে প্রতিবছর দেশে ৫ হাজার ২১৪ জন নারীর মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় দ্রুত চিহ্নিত করাই এ ক্যানসার প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। একইসঙ্গে বাল্যবিবাহ বন্ধ এবং ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ের দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোববার (১৯ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির উদ্যোগে  ‘সার্ভিক্যাল বা জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ বিষয়ক সেন্ট্রাল সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, দ্রুত চিহ্নিত করাই জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। এ লক্ষ্যে বাল্য বিবাহ বন্ধ এবং মহিলাদের যাতে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বিবাহ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জরায়ুমুখের ক্যানসার চিহ্নিতকরণ ও চিকিৎসার সবধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে এর সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হলে এই সেবা কার্যক্রম দেশব্যাপী জোরদার করতে হবে। 

একইসঙ্গে জরায়ু মুখের ক্যানসার চিকিৎসায় গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগ, ভাইরোলজি বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, অনকোলজি বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টদের সম্বনিতভাবে কাজ করতে হবে। জরায়ুমুখের ক্যান্সার যথা সময়ে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম আরও জোরদার করতে হবে বলে জানান অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ।

সেমিনারে ‘ইভালুয়েশন অব পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা শারমিন।

তিনি বলেন, মহিলাদের মাসিক বন্ধ হবার পরও রক্তক্ষরণ হলে তাকে পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং বলে। এটা নারী স্বাস্থ্যের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। সাধারণত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই রক্তক্ষরণের কারণটা স্বাভাবিক, কিন্তু ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা জরায়ুর ক্যানসারের জন্য হয়ে থাকে। তাই প্রত্যেক মহিলাকে মাসিক বন্ধ হবার পরও এরকম রক্তক্ষরণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কারণ মহিলাদের জরায়ুর ক্যানসার জটিলতা বা সমস্যা তৈরি করবার আগেই ধরা পড়লে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই যেসব মহিলাদের জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকিতে পড়বার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরকে মাসিক বন্ধ হবার পরও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ও ফলোআপে থাকা উচিত। 
 
বাংলাদেশে জরায়ুমুখের ক্যানসার ঝুঁকির কথা জানিয়ে ডা. ফারহানা খাতুন বলেন, পৃথিবীব্যাপী জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রবণতা কমলেও বাংলাদেশে মহিলাদের ক্যানসারের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার দ্বিতীয় স্থানে আছে। গ্লোবোকন ২০২০ এর তথ্য মতে, প্রতিবছর ৮ হাজার ৬৮ জন মহিলার জরায়ু ক্যানসার শনাক্ত হয় এবং ৫ হাজার ২১৪ জনের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে ১৫ বছর থেকে শুরু করে প্রায় ৫৪ মিলিয়ন মহিলা জরায়ুর ক্যানসার ঝুঁকির মধ্যে আছে। বাল্যবিবাহ, কম বয়সে বাচ্চা নেওয়া, ২ বা ৩ এর অধিক বাচ্চা নেওয়া, ধুমপান ইত্যাদি জরায়ু মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 


বিজ্ঞাপন


লক্ষণ তুলে ধরে তিনি জানান, জরায়ু ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ হলো অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসে রক্ত যাওয়া, অতিরিক্ত সাদাস্রাব, গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব যাওয়া ইত্যাদি। জরায়ুর ক্যানসারে চিকিৎসা নির্ভর করে কোনো পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় এবং ৪র্থ পর্যায়ের জরায়ুর ক্যানসার রেডিওথেরাপি মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে জরায়ুর ক্যানসারের অপারেশন করার জন্য আরও গাইনী অনকোলজি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন এবং রেডিথেরাপির মেশিনও আরও বেশি দরকার। তাই ক্যানসার হওয়ার আগেই শানাক্ত করতে পারলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।

জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্তকরণ ও প্রতিকার বিষয়ে কনসালটেন্ট ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, জরায়ুমুখ ক্যানসার সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা যায়। ক্যানসার শনাক্তকরণে যেহেতু এটি আমাদের দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তাই জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে সচেতন করতে হবে। ভায়া পরীক্ষা করায় মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্ত করা যায় তা জানাতে হবে। ভায়া ছাড়াও এইচপিভি-ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যানসার চিহ্নিত করা যায়। জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল বালিকাদের মধ্যে এইচপিভি ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। দুই এর অধিক সন্তান নিতে নিষেধ করতে হবে। 

জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্তের জন্য এইচপিভি ভ্যাকসিন কার্যক্রম সরকারের ইপিআই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলেও জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান,  বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্ট। 

এমএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর