রোববার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

করোনার নিম্নমুখী প্রবণতায় নতুন করে শঙ্কা কেন?

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:১১ এএম

শেয়ার করুন:

করোনার নিম্নমুখী প্রবণতায় নতুন করে শঙ্কা কেন?
প্রতীকী ছবি

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েক মাসে সংক্রমণের হার শতকরা এক শতাংশেরও নিচে। মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে। তবে এর মধ্যেই নতুন করে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনার নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করেছে করোনা বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বন্দরসহ দেশের প্রবেশপথগুলোতে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। টিকা কর্মসূচি জোরদারসহ হাসপাতালগুলোকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে।

এর কারণ হিসেবে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চীনে নতুন করে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর জন্য ওমিক্রনের নতুন ধরন ‘বিএফ.৭’ কে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। যা করোনার অন্যান্য ধরনের তুলনায় চার গুণ বেশি সংক্রামক বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে করোনাসংক্রান্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।


বিজ্ঞাপন


দেশে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছরে করোনা সংক্রমণের ৫০তম সপ্তাহ অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৭৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব পরীক্ষায় মোট ১২২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ। যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৭ দশমিক ৮০ শতাংশ কম। ৪৯তম সপ্তাহ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৯ জন। আর গত দুই সপ্তাহেই দুইজন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

আর চলতি ৫১তম সপ্তাহের প্রথম ছয় দিনে (১৯ ডিসেম্বর-২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত) মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার পাঁচটি। এতে মোট ৭৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে পরীক্ষা বিবেচনায় এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর এই ছয়দিনে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

covid1


বিজ্ঞাপন


এই অবস্থায় কয়েক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রম নিম্নমুখী অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতিক মাসগুলোতে শনাক্তের হার শতকরা এক শতাংশের নিচে। একইসঙ্গে সপ্তাহিক মৃত্যুর সংখ্যা এককের ঘরে রয়েছে।

শঙ্কার কথা কেন আর কী বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ?

দেশে মহামারি পরিস্থিতি নিম্নমুখী হলেও চীন-ভারতসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় ২৫ ডিসেম্বর সকালে ‘বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর রাতে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সভায় চার দফা সুপারিশ করা হয়। এতে সকল বন্দরে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট, করোনা টিকা কার্যক্রম আরও জোরদার করা, হাসপাতালে প্রস্তুতি গ্রহণসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

এসব তথ্য তুলে ধরে ভার্চুয়াল সভায় অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানান, চীনসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে। অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করছে। এই অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) জাতীয় কারিগরি কমিটির বৈঠক ছিল। কমিটি চারটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে।

কমিটির পরামর্শের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো- টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য এটির ভয়াবহতা অনেক বেশি। তাই যারা টিকা নেয়নি তাদের দ্রুত নিয়ে নেওয়ার জন্য কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছে। এছাড়া সেকেন্ড বুস্টার ডোজের (চতুর্থ ডোজ) প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর বিষয়েও বলেছে কমিটি। যাদের কোমরবিড কন্ডিশন রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কারিগরি কমিটি বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সব প্রবেশ পথে পরীক্ষা জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে।

দেশে বর্তমানে আক্রান্ত সংখ্যা বেশি হচ্ছে না, তারপরও যাদের সংক্রমণ পজিটিভ আসবে, তাদের যেন জেনেটিক সিকোয়েন্স করে সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট আছে কি না সেটি পরীক্ষা করতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

নতুন করে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা ও করনীয় বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র এবং সংক্রমক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সামনে করোনা পরিস্থিতি কী হবে সেটা পারিপার্শ্বিকতা এবং আমাদের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে। আমরা করোনার ভীতি কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। অর্থনীতি সচল রয়েছে। এ অবস্থায় যদি নতুন করে রোগী বাড়ে এবং অনেক সংখ্যায় হয় তাহলে সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা চাই না এমন কিছু হোক। আমরা সতর্ক থাকলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় থাকবে।’

66

এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের করোনা সংক্রমণের হার এক শতাংশের নিচে আছে। আমরা কাউকে প্যানিকড করতে চাই না। আমরা মনে করি সতর্ক থাকলে করোনা পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাবে না। আমরা কেউই চাই না পরিস্থিতি খারপের দিকে যাক। কারণ একটা ওয়েভ যদি এসে যায়, তবে তা সবাইকেই কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করে। আমরা সবাই যদি সতর্ক থাকি তাহলে এই ওয়েভটা আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। সেজন্য জাতীয় করিগরি কমিটি পরামর্শক কমিটি বৈঠক করে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। তা জটিল কিছু না, খুবই সাধারণ কিছু পরামর্শ। যেখানে অনেক বেশি পাবলিক গেদারিং রয়েছে সেখানে মাস্ক পরাসহ সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে চলা, হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতি রাখা। এছাড়া যেসব দেশে সংক্রমণের হার বেশি সেখান থেকে যারা আসবে তাদের স্ক্রিনিং কর্মসূচির আওতায় আনতে বলা হয়েছে। যাদের ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাদের টেস্টের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে।’

সরকারে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে অধ্যাপক নাজমুল বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তাই আমরা যদি আমাদের প্রবেশপথগুলোতেই সন্দেহভাজন রোগীদের স্ক্রিনিং ও শনাক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রবেশ পথেই স্ক্রিনিং করে তাদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তো ছড়ানোর আশঙ্কাটা থাকছে না। আমাদের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম পুরোদমে চলমান আছে। চতুর্থ ডোজও দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা চাইবো সবাই যেন করোনার তৃতীয় ডোজ নিয়ে নেয়। যারা চতুর্থ ডোজ পাওয়ার জন্য যোগ্য তারা তা নিয়ে নেয়। তাহলে আমরা সকলে নিরাপদ থাকবো। এসব বিষয়ে সব ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে সংক্রামক রোগ শাখার এই পরিচালক বলেন, ‘হাসপাতালগুলোকে আমরা বরাবরই করোনাসংক্রান্ত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। সন্দেহভাজন রোগীদের যেন করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয় সেটা নিশ্চিত করতে বলেছি।’

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর