মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পুরুষের ফুসফুস, নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার সর্বাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

পুরুষের ফুসফুস, নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার সর্বাধিক

তিন বছরে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে মোট ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন রোগী সেবার জন্য এসেছেন। যাদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৩৩ (৪২ দশমিক ৬০ শতাংশ) জনের চূড়ান্ত কিংবা প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার হিসেবে রোগনির্ণয় হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পুরুষের ফুসফুস এবং নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার সর্বাধিক। পুরুষদের মধ্যে ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার এবং নারীদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অডিটোরিয়াম ভবনে সপ্তম ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। 

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তিন বছরে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে মোট ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন রোগী সেবার জন্য এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৩৩ (৪২ দশমিক ৬০ শতাংশ) জনের চূড়ান্ত কিংবা প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার হিসেবে রোগনির্ণয় হয়েছে। তাদের নিবন্ধনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিবন্ধিত রোগীদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৪৬ জন (৫৫ শতাংশ) পুরুষ ও ১৬ হাজার ১৮৭ জন (৪৫ শতাংশ) নারী। নারীপুরুষ নির্বিশেষে শীর্ষ দশ ক্যান্সারের মধ্যে আছে যথাক্রমে ফুসফুস (১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ), স্তন (১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ), জরায়ুমুখ (১০ দশমিক ৯০ শতাংশ), খাদ্যনালী (৪ দশমিক ৯০ শতাংশ), পাকস্থলী (৪ দশমিক ৩০ শতাংশ), লিভার (৩ দশমিক ৯০ শতাংশ), লসিকা গ্রন্থি (৩ দশমিক ৮০ শতাংশ), মলাশয় (৩ দশমিক ১০ শতাংশ), গাল (৩ শতাংশ) ও পিত্তথলির (১ দশমিক ৫০ শতাংশ) ক্যান্সার রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে শীর্ষ ক্যান্সার ফুসফুস (২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ) এবং নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার (২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ)।

ইনস্টিটিউটের এপিডেমোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম গবেষণা প্রতিবেদনটির তথ্য তুলে ধরেন।

আলোচকরা জানান, হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে একটি হাসপাতালে আসা ক্যান্সার রোগীদের পরিচিতি, সামাজিক ও জনমিতি সংক্রান্ত তথ্য, রোগনির্ণয়, চিকিৎসা ও তার ফলাফল, এসব সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য, সংগৃহীত তথ্য এমনভাবে সংরক্ষণ করা, যাতে প্রয়োজনে তা নাগালের মধ্যে পাওয়া যায়। একইসঙ্গে চিকিৎসা সেবার মূল্যায়ন ও মান উন্নয়নসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করা যায়। 


বিজ্ঞাপন


তবে এ ধরনের নিবন্ধন থেকে কোনো এলাকা বা দেশের ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা, আক্রান্তের বা মৃত্যুর হার বের করা যায় না। কারণ একটি হাসপাতালে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার সব ক্যান্সার রোগী চিকিৎসার জন্য আসছে, এটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। রোগীর সংখ্যা জানা গেলেও, কত জনসংখ্যা থেকে এই রোগীরা আক্রান্ত হয়েছে সেই তথ্য এখানে থাকে না বলেও জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জাতীয়ভাবে একবার জনসংখ্যাভিত্তিক গবেষণা করেছিল, এরপর আর হয়নি। নতুন করে করার আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। এটি হওয়া জরুরি। কিন্তু তার জন্য বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একটি গবেষণা মানে রোগীর ডায়াগনসিস থেকে শুরু করে তার অবস্থা কোন পর্যায়ে, কোথায় গিয়ে থামতে পারে সব লিপিবদ্ধ করা। যেটি অনেক বেশি কঠিন। কারণ আমাদের ডায়াগনসিস ও সুযোগ-সুবিধার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। 

ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধের বিকল্প নেই জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য অধিফতর পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, পরিবেশ ও খাদ্যাভাসও ক্যান্সারের বড় একটি কারণ। কয়েক বছর আগেও এটি নিয়ে কাজ করা এতটা সহজ ছিল না। চিকিৎসা ব্যবস্থাও ততটা উন্নত ছিল না। এখন পরিবর্তন হয়েছে। তবে এখনও অনেক ঘাটতি। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ইনস্টিটিউট দরকার। নতুন করে আটটি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, সেখানে হয়তো হবে। কিন্তু যারা করবে তাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ধুমপানসহ নানা অভ্যাসের কারণে নিজেরাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে কি না ভেবে দেখা উচিত। পাশাপাশি এটি নিযন্ত্রণে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নীতি-নির্ধারকদের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য ও কোনটি চিকিৎসা ছাড়া হবে না, সেটি নির্ণয় করতে হবে। একই সঙ্গে পৃথক লিঙ্গ ও বয়সকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন বয়সে কোন ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে সেটি দেখতে হবে। 

এমএইচ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর