বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মাতৃমৃত্যু রোধে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি নিশ্চিতের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

মাতৃমৃত্যু রোধে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি নিশ্চিতের তাগিদ

স্বাধীনতার পর দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন মা এবং ৫০০ নবজাতকের মৃত্যু হতো। বর্তমানে তা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন প্রতিলাখে ১৬৪ মায়ের মৃত্যু হয়। তবে এটিকে আরও কমিয়ে ১০০ এর নিচে নামিয়ে আনতে হবে জানিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

রোববার (৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনীকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


আলোচকরা বলেন, মাতৃমৃত্যু প্রধানত দুটি কারণে হয়ে থাকে। এগুলো হলাও রক্তক্ষরণ ও খিচুনির। এটি হয়, বাড়িতে অদক্ষ দাইয়ের মাধ্যমে ডেলিভারির কারণে। এটি মোকাবিলায় ডেলিভারি রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোগীরা এমন অবস্থায় হাসপাতালে আসেন, যখন আর কিছুই করার থাকে না। মাতৃমৃত্যু রোধে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে মায়েদের হাসপাতালে আনা। তাদের হাসপাতালে আনতে পারলে মাতৃমৃত্যু সমস্যা বহুলাংশেই সমাধান হয়ে যাবে। মাতৃমৃত্যু রোধে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির বিকল্প নেই।

এই অবস্থায় গ্রামে ডেলিভারির জন্য সরকার মিউওয়াইফ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক মিউওয়াইফ তৈরি হয়েছে। এখন শুধু তাদের পদায়ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন আলোচকরা।

সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা নারী স্বাস্থ্য উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাগুলো কীভাবে দূর করা যায় এবং নারী স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নয়নে ওজিএসবি কি ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসি বেগম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর প্রতিদিন প্রায় ৪০ মা এবং ৫০০ নবজাতক মারা যেত। এ অবস্থায় আমরা কাজ শুরু করেছি। লাখে প্রায় ৫০০ মায়ের মৃত্যু হতো। বর্তমানে এটি ১৬৪ জনে নেমে এসেছে। তবে এটলে ৭০ জনে নামিয়ে আনতে হবে। এখনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা অপ্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি। এখনও শতকরা ৫০ ভাগ ডেলিভারি বাড়িতে অদক্ষ দাইয়ের মাধ্যমে তা হয়। আমরা সেটাকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে চাই। যেন মাতৃ ও শিশু মৃত্যু না ঘটে।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, গর্ভবতী নারীর সেবায় প্রতিটি স্তরে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবুও অনেকে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে যান না। গর্ভবস্থায় মাত্র ৪৭ শতাংশ মা ৪ বার চিকিৎসকের কাছে আসেন। মায়েদের এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। 

অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে কয়েকটি সূচক রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৬০ শতাংশ কাপল কনডম ব্যবহার করেন। এটাকে আরও বাড়াতে হবে। আমাদের বর্তমান ফার্টিলিটি রেট ২ দশমিক ২ এটাকে ২ এর নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এসব বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। পরিবার পরিকল্পনায় আমরা দীর্ঘমেয়াদি প্রদক্ষেপ নিয়ে সে বিষয়ে জোর দিচ্ছি। এতে সফলতার হার প্রায় শতভাগ। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এখন শুধু এটির ব্যাপারে জনগণকে জানাতে হবে।’

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুল আরা হক বলেন, ‘মাতৃমৃত্যু রোধে সবথেকে জরুরি নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মান করা। নারী মৃত্যুর কারণ, সমাজে নারীর জীবনের মূল্য নেই। বর্তমানে লাখে ১৬৪ জন মা মারা যায়। আমরা এটাকে ৭০ এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছি। যদিও আমাদের চাওয়া একটা মায়েরও যেন মৃত্যু না হয়। আমরা নারীরা কেন একজন মানুষকে জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করবো? আমাদেরও মানুষ হিসেবে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই মায়ের মৃত্যু রোধে সমাজে নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে প্রসব সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় করণীয় এবং উদীয়মান চিকিৎসকদের পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু নিয়ে নতুন সংযোজন বাংলাদেশের প্রথম ইউটিউব চ্যানেল ‘ওজিএসবি স্বাস্থ্যশিক্ষা’ উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি বেগম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা, অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, অধ্যাপক ডা. পারভিন ফাতেমা, অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. কোহিনুর বেগম, অধ্যাপক ডা. সেহেরিন ফরহাদ সিদ্দিকা, অধ্যাপক ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান এবং অধ্যাপক ডা. এস কে জিন্নাত আরা নাসরিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর