শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

'ফিজিওলজিস্ট সংকটে পুনর্বাসন থেকে বঞ্চিত শারীরিক অক্ষম ব্যক্তিরা'

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

'ফিজিওলজিস্ট সংকটে পুনর্বাসন থেকে বঞ্চিত শারীরিক অক্ষম ব্যক্তিরা'

প্রতিবন্ধী বলতে শুধু জন্মগত অক্ষম ব্যক্তি নয়, দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায়  হওয়া ব্যক্তিকেও বোঝায়। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ এর শিকার জানিয়ে এদের মাত্র শতকরা ৫ শতাংশ পুনর্বাসনের সুযোগ পায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় ফিজিওলজস্টের সংকটকে দায়ী করেছেন তারা।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের গ্যালারি-১ এ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এসব কথা জানান।


বিজ্ঞাপন


আলোচকরা বলেন, 'সারাবিশ্বে মোট জনগোষ্ঠীর ১৫ শতাংশ মানুষ শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করে। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ পুনর্বাসনের আওতায় আসেন। এ প্রক্রিয়া ফিজিওলজিস্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অথচ আমাদের দেশে ফিজিওলজিস্টের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কম।'

তবে দেশে এই পুনর্বাসনকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে তারা বলেন, দেশে প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সেবার পরিধি বাড়ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুই শতাধিক এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ১০৩ সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে তাদের সেবা দেওয়া হয়। সারাদেশের ৩০ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে ১৪টিতে রিহেবিলিটেশন বিভাগ রয়েছে। এছাড়া ছয়টি স্পেশালাইজড হাসপাতাল, আটটি বেসরকারি হাসপাতাল, ৪০টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৬৪ উপজেলায় রিহেবিলিটেশন সার্ভিস চালু রয়েছে।'

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেনিন বলেন, 'দেশে ক্রমবর্ধমান হারে প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। আমরা তাদেরকে প্রতিবন্ধী বা অক্ষম না বলে সাহায্য প্রয়োজন এমন মানুষ বলি। অক্ষম শব্দটি তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। সারাদেশ দেশ থেকে এসব রোগী রাজধানী ঢাকায় আসে। ফলে এত বেশি রোগী হয় যে, সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় আমাদের কর্তা ব্যক্তিদের বোঝাতে হবে ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসা জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ছড়িতে দিতে হবে। এতে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চাপ কমবে। রোগীও ভালো সেবা পাবে।'

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদুজ্জামান বলেন, 'যেকোনো সময়, যেকোনো মানুষ ডিজেবল হতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চলাচলের ক্ষমতা ও চোখের দৃষ্টি কমে আসতে পারে। প্রতিবন্ধী মানেই অটিস্টিক না। যেকোনো ডিজেবল ব্যক্তিই প্রতিবন্ধী। যেটা, আমি আপনি সবাই হতে পারি। তাই এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তাদের প্রতি সদয় হতে হবে এবং সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।'


বিজ্ঞাপন


h2

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান খান বলেন, 'বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। এখন এটি আর শুধু প্রতিবন্ধী দিবস না, শারীরিকভাবে অক্ষম সকলকে নিয়ে এই দিবস। ইউরোপ, আমেরিকা ও আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশের চিন্তাধারায় বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এটি দূর করতে হবে। সমতা নিশ্চিতে আমাদের সকলকে আন্তরিক ও সদয় হতে হবে।'

অনুষ্ঠানে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য দেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আহমেদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. হাসান মাসুদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. জাহিদুল ইসলাম, নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মনিরুল ইসলাম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. এহসানুল হক খান এবং অধ্যাপক ডা. খুরশীদ মাহবুব।

এতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) ও বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন মূল প্রবন্ধ উপাস্থাপন করেন।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর