শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

অক্সিজেন ঘাটতিতে ভোগে ৪২ শতাংশ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

অক্সিজেন ঘাটতিতে ভোগে ৪২ শতাংশ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু

বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে নিউমোনিয়া একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষত শিশুদের মধ্যে এর ঝুঁকির হার অনেক বেশি। দেশে মারাত্মক নিউমোনিয়ায় ভোগা ৪২ ভাগ শিশুর রক্তে অক্সিজেন ঘাটতি বা হাইপক্সেমিয়া থাকে। ফলে প্রতি বছর দেশে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়।

বুধবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর, বি) বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে ‘মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তা’ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, আমাদের চারপাশের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ শতাংশ। আর শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বাতাসে মাত্র ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু যাদের রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা রয়েছে তাদের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়- এই স্বাস্থ্য সমস্যাটির মেডিকেলিয় নাম হাইপোক্সিমিয়া। সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাত কোটি ৩০ লাখ মানুষ হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে তিন কোটি দুই লাখ শিশু। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে।

আলোচনায় আইসিডিডিআর,বি-র জোষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মাদ যোবায়ের চিস্তি ইথিওপিয়ার হাসপাতালে হাইপোক্সিমিয়া চিকিৎসা তার উদ্ভাবন বাবল সিপ্যাপ ট্রায়াল সম্পর্কে আপডেট প্রদান করেন। তিনি কেন্দ্রগুলোয় অক্সিজেন নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘শিশুরা তাদের শ্বাসকষ্টের কথা প্রকাশ করতে পারে না বড়দের মতো করে, তাদের অমানবিক কষ্টকে মানবিকতার সাথে গুরুত্ব দিতে হবে।

এ অবস্থায় রোগীদের অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন জানিয়ে আইসিডিডিআর’বির সহযোগী বিজ্ঞানী ড. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত যেকোনো রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসেবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। হাইপোক্সিমিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, মূলত নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস, যক্ষ্মা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি, হৃদরোগ এবং হাঁপানি ইত্যাদির কারণে যে শ্বাসকষ্ট হয় তা অন্যতম।

এই চিকিৎসক বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ঢাকা শহরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর বেশি হওয়ার কারণও হাইপক্সেমিয়া। এ জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো ও পুষ্টির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাসহ দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বল্প মূল্যে অক্সিজেন উদ্ভাবনের ওপরও জোর দেওয়া জরুরি।’


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে দেশে স্বাস্থ্যখাতে অবকাঠামো নিয়ে একাধিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসালিটি সার্ভে ২০১৭ এর তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, বাংলাদেশে এক চতুর্থাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কম্প্রেসেড গ্যাস সিস্টেম, বহনযোগ্য অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর ও তরল অক্সিজেন সিস্টেমের মতো তিনটি অক্সিজেন উৎসের যেকোনো একটি ছিল। যার মধ্যে ১৩ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বিদ্যমান ছিল, মাত্র ২১ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে ফ্লো মিটারসহ অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল। আর মাত্র ৬ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে অক্সিজেন সরবরাহ বা বিতরণের ব্যবস্থা এবং পালস অক্সিমিটার ছিল।

২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে আইসিডিডিআর,বি-র পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৬০টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৭২ শতাংশ হাসপাতালে পালস অক্সিমেট্রি যন্ত্রটি রয়েছে এবং মাত্র ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস এনালাইসিস (রক্তে অক্সিজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, অক্সিজেনের ঘনত্ব, এসিড-ক্ষারের ব্যালান্স ইত্যাদি পরিমাপ করবার পরীক্ষা) করার ব্যবস্থা রয়েছে। অক্সিজেন নিরাপত্তা প্রদানের জন্য অক্সিজেনের অন্যান্য উৎসের ক্ষেত্রে, ১৮ শতাংশ হাসপাতালে অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর যন্ত্র, ২ শতাংশ হাসপাতালে বাল্ক স্টোরেজ ট্যাঙ্কে তরল অক্সিজেন ছিল এবং ৩ শতাংশ হাসপাতালে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট ছিল। সেন্ট্রাল ও সাব-সেন্ট্রাল পাইপিং শুধুমাত্র ১৭ শতাংশ জেলা হাসপাতালে বিদ্যমান ছিল এবং ২০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে পরিদর্শনের দিনে ফ্লো-স্প্লিটার উপস্থিত ছিল।

এছাড়া এক-চতুর্থাংশ জেলা হাসপাতালে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনসহ লো-ফ্রো অক্সিজেন থেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ জেলা হাসপাতাল নন-ইনভেসিভ এবং ইনভেসিভ দুই ধরনের ভেন্টিলেশনের সাথেই বেসিক অক্সিজেন থেরাপি প্রদান করতে পারে।

তবে, কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারণে অক্সিজেনে অস্বাভাবিক চাহিদার ভিত্তিতে এবং সরকারের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের ফলে হাসপাতালগুলোরগুলোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কারণ রোগীদের অক্সিজেন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন আলোচকরা।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর