বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘তামাক কোম্পানির অর্থনীতিতে অবদানের দাবি অন্তঃসারশূন্য’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর ২০২২, ০৫:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

‘তামাক কোম্পানির অর্থনীতিতে অবদানের দাবি অন্তঃসারশূন্য’

দেশের তামাক কোম্পানিগুলো অর্থনীতিতে যে অবদানের কথা বলে তা অন্তঃসারশূন্য বলে দাবি করেছেন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা। তামাক অর্থনীতির জন্য সহায়ক নয় বলেও জানান তারা।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে 'জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার, বিরোধিতায় তামাক কোম্পানি' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আলোচকরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিয়েশন অনকোলোজিস্ট, ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।


বিজ্ঞাপন


এতে বলা হয়, তামাক অর্থনীতির জন্য সহায়ক মনে করা হয়। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা ও মিথ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক খাত থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের বিপরীতে এ খাতে চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা মোট রাজস্বের চেয়ে আট হাজার কোটি টাকা বেশি। তামাক কোম্পানি অনেক বেশি রাজস্ব দেয় বলে যে দাবি করে তাও সঠিক নয়। বিগত ২০১৯ সালে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি বিএটিবি মোট ২২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা জনগণের দেয়া ভ্যাট ও শুল্ক থেকে এসেছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া রাজস্বের ৯৬ শতাংশ।

রাজস্ব দেওয়ার তথ্য নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, তামাক কোম্পানিগুলো ভোক্তাদের দেওয়া ভ্যাটকে তাদের দেওয়া রাজস্ব বলে চালিয়ে আসছে। কোম্পানিগুলো তামাক চাষকে লাভজনক বলে। কিন্তু বান্দরবনে ৯০ ভাগ কৃষি জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। অথচ বিবিএস তথ্য অনুসারে এ এলাকার এখনও সবচেয়ে দরিদ্র জেলার তালিকায়। স্বাধীনতার আগে থেকে তামাক চাষ হওয়া রংপুর একটি দরিদ্র পীড়িত অঞ্চল।

সরকার ও তামাক কোম্পানির কাজ পরস্পরবিরোধী উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, সরকার আগামী ২০৪০ সালে মধ্যেই দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। অপর দিকে তামাক কোম্পানি প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে ধূমপায়ী বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকার এবং তামাক কোম্পানির লক্ষ্য বিপরীত। সরকারের উদ্দেশ্য সংবিধানের দায়বদ্ধতা, জনস্বাস্থ্য রক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যয় কমানো। আর তামাক কোম্পানি লক্ষ্য মুনাফা। সরকার প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যুর ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। উন্নত দেশ গড়তে হলে রোগ, স্বাস্থ্য ক্ষতি কমানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান জাতি গঠন করতে হবে। আর এ লক্ষ্যে তামাক ব্যবহার কমানোর কোনো বিকল্প নেই। কারণ তামাক কোম্পানিগুলো শুধু লাভের অংশ নেয়। কিন্তু তামাকজনিত রোগের ব্যয়, প্রাণহানি, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ক্ষতির দায় নেয় না।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক ডা. এম খুরশীদ আলম বলেন, তামাকের কোনো পুষ্টিকর উপাদান নেই। যা আছে সবটাই ক্ষতিকর। এ অবস্থায় সরকার তামাকমুক্ত করা উদ্যোগ নিয়েছে। তা একদিনে হবে না, ধাপে ধাপে এটি করতে হবে। সমাজে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ধাপে ধাপে তা তৈরি হচ্ছে। ত্বক ও গলা থেকে পায়ুপথের ক্যানসার সকল ক্ষেত্রেই তামাকের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া স্ট্রোক, হৃদরোগের অন্যতম কারণ তামাক। এটি সিগারেট, জর্দা, সাদাপাতা যেকোনো ফরম্যাটেই হতে পারে। তাই সামগ্রিকভাবে তামাকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


ডা. মাহবুব সোবহান বলেন, 'তামাক নিয়ন্ত্রণে আমরা দীর্ঘদিন কাজ করছি। আমাদের দাবির মুখে অনেক কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা আরও নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করছি। আমা সতর্কবাণীর পরিধি বাড়ানো, লাইসেন্স ব্যবস্থা, ই-সিগারেট বন্ধের চেষ্টা করছি। কিন্তু কোম্পানিগুলো বিকল্প পদ্ধতিতে প্রাচরণা চালিয়ে যাচ্ছি।'

এ সময় আলোচকরা বাংলাদেশ সরকারের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্দেশ্যে নেওয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান। একইসঙ্গে আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানান।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর