শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রেডিওথেরাপির ৫ মেশিন নষ্ট, ক্যানসার হাসপাতালে ভোগান্তি

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২২, ০৭:০৭ এএম

শেয়ার করুন:

রেডিওথেরাপির ৫ মেশিন নষ্ট, ক্যানসার হাসপাতালে ভোগান্তি

মরণব্যাধি ক্যানসার চিকিৎসার অন্যতম প্রধান পদ্ধতি রেডিওথেরাপি। এটি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যা ক্যানসারের সব অবস্থাতে ব্যবহার করা যায়। ক্যানসার রোগীদের সুস্থতার হার বেশির পাশাপাশি রেডিওথেরাপি ব্যথামুক্ত হওয়ার এর জনপ্রিয়তাও রয়েছে। তবে ক্যানসারের অন্য সব চিকিৎসা পদ্ধতির মতো এটিও ব্যয়বহুল। ফলে বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম আশ্রয়স্থল সরকারি হাসপাতাল। এর বড় অংশ পূরণ করে থাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতাল। 

তবে সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতলটির একাধিক রেডিওথেরাপি মেশিন অকেজো থাকায় রোগী ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মোট ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিনের পাঁচটিই বর্তমানে অকেজো বলে জানা গেছে। হাসপাতালের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 


বিজ্ঞাপন


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ক্যানসার হাসপাতালে মোট ৬টি রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নষ্ট। প্রায় বছরের কাছাকাছি সময় এগুলো অকেজো অবস্থায় রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন সময় নষ্ট হয়েছে। আমি যতদূর জানি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে একটা লম্বা সময় অতিক্রান্ত হলেও মেশিনগুলো চালু হয়নি। ফলে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিমে খেতে হচ্ছে।’

এ অবস্থায় রোগীদের রেডিয়েশন কার্ড ও রেডিওথেরাপি পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দেশের প্রধান ক্যানসার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে ভোগান্তির এসব চিত্র উঠে এসেছে। হাসপাতালের রেডিওথেরাপি রুমের সামনে রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষমান থাকতে দেখা গেছে। যাদের বেশিরভাগই দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় থেরাপি গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন।

এমনই একজন মানিকগঞ্জের ষাটোর্ধ্ব সাজু মিয়া (ছদ্মনাম)। স্ত্রীকে রেডিওথেরাপি রুমে ঢুকিয়ে বাইরে অপেক্ষায় থাকা এই বয়োবৃদ্ধের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের (স্ত্রী) ব্রেস্ট ক্যানসার। গত তিন বছর ধরে তার এই রোগ। প্রথমে টিউমার ছিল। কিছুদিন আগে তা অনেক বড় হয়ে গেলে ডাক্তার দেখাই। তারা বলে ক্যানসার হয়েছে, তাও অনেকদিন হয়েছে। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। সবশেষ আজকে প্রথম রেডিওথেরাপি শুরু হচ্ছে। এটি শুরু করতে অনেক সময় লেগেছে। জায়গায়-জায়গায় ঘুরতে হয়েছে। গত শনিবার (২৯ অক্টোবর) এসে ঘুরে গেছি, পরের মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) আবার ঘুরে গেছি, বলছে মেশিন নষ্ট। সিরিয়াল পেতে অপেক্ষা করতে হবে। অবশেষে আজকে (৫ নভেম্বর) ঢুকতে পেরেছি। আগে মেশিন নষ্ট বলে জানিয়েছে।’

অপর রোগীর স্বজন আদনান বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ঘুরছি। কোনোভাবেই সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আমাদের জানানো হয়েছে সব মেশিন অ্যাক্টিভ নয়। কয়েকটা মেশিনে সমস্যা থাকায় সিরিয়াল পেতে দেরি হবে। পরে হাসপাতালে কর্মরত পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সুপারিশে সিরিয়াল পেয়েছি। আজকে রেডিয়েশন কার্ড নিতে এসেছি।’


বিজ্ঞাপন


কবে কর্মক্ষম হবে জানে না কেউ
জানতে চাইলে ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রনদা প্রসাদ রায় জানান, ‘ছয়টি মেশিনের মধ্যে গত এপ্রিলে চারটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে দুটি কোবাল্ট মেশিন ছিল, যেগুলোতে থেরাপি দিতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগতো। ফলে দ্রুত এনার্জি রেট কমে যেত। বাকি তিনটি ছিল লাইনাক মেশিন। যার দুটি মেয়াদোত্তীর্ণ। আরেকটি দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় আছে। এটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কবে হবে, নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’

নতুন মেশিন কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন মেশিন ক্রয়ের কোনো প্রক্রিয়া হয়নি। তাছাড়া নতুন মেশিন কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান, বাঙ্কার প্রস্তুত, ক্যালিব্রেশন, এটমিক এনার্জি কমিশনের অনুমোদন নেওয়ার ব্যাপার রয়েছে। তাই চাইলেও শিগগিরই এই সমস্যার সামাধান হচ্ছে না। হয়তো আগামী এক বছরেও তা সম্ভব নয়।’

সদুত্তর নেই হাসপাতাল পরিচালকের 

হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। পরিচালকের অ্যাসিস্টেন্ট অপেক্ষা করার জন্য বললেও পরে অন্য এক কর্মকর্তা জানান, পরিচালক রোগী-সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলবেন না। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তবে ঠিক কি কারণে নিষেধ রয়েছে তা জানাতে পরেননি তিনি। 

পরে মোবাইলে অধ্যাপক স্বপন এ-সংক্রান্ত তথ্যগুলো হাসপাতালের পিএ অফিস থেকে সশরীরে সংগ্রহ করার জন্য বলা হয়। নষ্ট মেশিনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘হাসপাতালের বয়স ৪০ বছর, আমি যোগদান করেছি মাত্র দশমাস। মৌখিকভাবে তথ্যগুলো বললে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। পিএ অফিসে এ-সংক্রান্ত সঠিক তথ্য পাবেন।’

উল্লেখ্য, রেডিয়েশন থেরাপি হলো এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যা ক্যানসারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর। এতে ক্যানসার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে তীব্র এবং উচ্চশক্তি সম্পন্ন রশ্মি ব্যবহার করা হয়। রেডিয়েশন থেরাপি প্রায়শই এক্স-রে ব্যবহার করে তবে প্রোটন বা অন্যান্য ধরনের শক্তিও এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। রেডিয়েশন থেরাপি শব্দটি বাইরের রশ্মি বিকিরণ থেরাপিকে বুঝায়। এই থেরাপি জিনগত উপাদানগুলোকে ধ্বংস করে কোষের ক্ষতি করে। এই জিনগত উপাদানগুলো কোষগুলোর বিকশিত ও বিভক্ত হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। 

তবে রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে ক্যানসার কোষের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর কোষগুলো নষ্ট হয়। যদিও রেডিয়েশন থেরাপির আসল উদ্দেশ্য হলো যতটা সম্ভব স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যকর কোষগুলোর ক্ষতি না করে ক্যানসার কোষ নষ্ট করা। 

এমএইচ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর